বুধবার বেলা ১১টার দিকে বাংলাদেশিদের নিয়ে আসা মিয়ানমারের অগ্রবর্তী প্রতিনিধি দলটি একটি বিশেষ ট্রলারে কক্সবাজার এসে পৌঁছেছেন।
Published : 24 Apr 2024, 01:01 PM
মিয়ানমারের কারাগারে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ভোগ শেষে দেশে ফিরছেন ১৭৩ বাংলাদেশি। তাদের বরণ করে নিতে কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়া ঘাটে ভিড় জমিয়েছেন আত্মীয়-স্বজনরা।
ঘটনাস্থলে থাকা জাতীয় সংসদের হুইপ ও কক্সবাজার ৩ আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল জানিয়েছেন, মিয়ানমারের কারাগারে ভিন্ন মেয়াদে সাজা শেষ করা এই বাংলাদেশিরা সরকারের প্রচেষ্টায় বুধবার বেলা ১টার দিকে ঘাটে এসে পৌঁছাতে পারেন।
তবে বিষয়টি নিয়ে বিজিবি, জেলা প্রশাসন ও পুলিশ এখনও গণমাধ্যমে সরাসরি কথা বলতে রাজী হননি।
এর মধ্যে বুধবার বেলা ১১টার দিকে বাংলাদেশিদের নিয়ে আসা অগ্রবর্তী মিয়ানমারের প্রতিনিধি দলটি একটি বিশেষ ট্রলারে কক্সবাজার এসে পৌঁছেছেন।
দলটি কক্সবাজার পৌঁছার পরপরই ঘাট থেকে গাড়ি নিয়ে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় রওয়ানা হয়েছেন। যেখানে বিজিবির অধীনে রয়েছেন পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের সেনা বাহিনী ও বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ২৮৫ সদস্য। তাদের ফেরত নেয়ার প্রক্রিয়ার জন্যই প্রতিনিধি দলটি নাইক্ষ্যংছড়ি গেছেন।
কর্মকর্তরা জানান, মিয়ানমার ফেরত ১৭৩ জনের মধ্যে ১২৯ জন কক্সবাজার জেলার, ৩০ জন বান্দরবান জেলার, সাতজন রাঙ্গামাটি জেলার, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, রাজবাড়ী, নরসিংদী ও নীলফামারী জেলার একজন করে।
নুনিয়ারছড়া ঘাটে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে কথা হয় রামু উপজেলার কচ্ছপিয়া ইউনিয়েনের আয়ুব আলীর ছেলে নবী হোসেনের সঙ্গে।
তিনি জানান, ফেরত আসাদের মধ্যে তার ভাই জাগির হোসেনসহ এলাকার ৪ জন রয়েছে। দেড় বছর আগে পরিবারকে কিছু না বলেই নিখোঁজ হন তার ভাই। এক মাস পরে জানতে পারেন তার ভাই দালালের প্রলোভনে সাগর পথে মালয়েশিয়া যেতে গিয়েই মিয়ানমারে আটক হন।
নবী হোসেন আরও জানান, দেড় বছর পর ভাই ফিরবেন, পুলিশের পক্ষে জানানোর পর তাই তারা ঘাটে এসেছেন।
ঘাটের পাশে ছেলের জন্য অপেক্ষায় মহেশখালী উপজেলার শাপলাপুরের বদিউল আলম। তার ছেলে জয়নাল আবেদীনও একইভাবে দেড় বছর আগে মালয়েশিয়ায় যেতে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছিলেন।
ছেলের সঙ্গে একই এলাকার ৫ জন রয়েছে বলে জানান তিনি।
মিয়ানমার থেকে ফিরছেন ১৭৩ বাংলাদেশি
মিয়ানমারের সেনা-বিজিপি সদস্যদের ফেরানো হচ্ছে ২৫ এপ্রিল
অপেক্ষায় থাকা স্বজনদের বেশিরভাগই জানিয়েছেন অবৈধভাবে সাগর পথে মালয়েশিয়ায় যাত্রা দিতে গিয়েই এসব মানুষ মিয়ানমারে আটক হয়েছিলেন।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. মাহাফুজুল ইসলাম জানিয়েছেন, ফেরত আসাদের বিজিবি গ্রহণ করে পুলিশকে হস্তান্তর করবে। তারপর যাচাই-বাছাই শেষে স্ব স্ব থানার পুলিশের মাধ্যমে স্বজনদের হস্তান্তরের প্রক্রিয়াটি করা হবে।
ইয়াঙ্গুনে বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্র বলছে, রাখাইন রাজ্যে সংঘাতের কারণে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আসতে বাধ্য হওয়া মিয়ানমারের প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশ আসছে মিয়ানমারের নেভাল শিপ ‘চিন ডুইন’।
সেই জাহাজেই ফেরত আসছেন ১৭৩ বাংলাদেশি। যাদের মধ্যে ১৪৪ জন কারাগারে পূর্ণ মেয়াদে সাজা ভোগ করেছেন। অপর ২৯ জনকে বাংলাদেশে মিশনের প্রচেষ্টায় ক্ষমা করে ফেরত আনা হচ্ছে।
যেভাবে মিয়ানমারে ফিরলেন বিজিপির ৩৩০ জন
১৬৫ বিজিপি গেল মিয়ানমারের জাহাজে, বিকালের মধ্যে বাকিদের হস্তান্তর
মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষীদের নৌপথে পাঠানোর প্রস্তুতি
এই বাংলাদেশিদের নিয়ে মঙ্গলবারই যাত্রা করেছে মিয়ানমারের নেভাল শিপ ‘চিন ডুইন’।
বৃহস্পতিবার সকালে এই জাহাজটিই বাংলাদেশে আশ্রয়রত মিয়ানমারের সেনা বাহিনী ও বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ২৮৫ সদস্যকে নিয়ে ফেরত যাবে।
বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া বিজিপি ও সেনা সদস্যদের মধ্যে গত ১৯ এপ্রিল একদিনে ২৪ জন, ১৬ এপ্রিল ৬৪ জন, ১৪ এপ্রিল ১৪ জন, ৩০ মার্চ ৩ জন ও ১ মার্চ ১৭৭ জন পালিয়ে এসেছিলেন।
এরও আগে ফেব্রুয়ারির শুরুতে কয়েক দফায় বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিলেন আরও ৩৩০ জন। যাদের গত ১৫ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়েছিল।
প্রথম দফায় ফেরতের সময় ঘটনাস্থলে গণমাধ্যম কর্মীদের প্রবেশ এবং সংশ্লিষ্টরা কথা বললেও এবার তা হচ্ছে না।
তবে ফেরত আসা বাংলাদেশিদের গ্রহণ এবং মিয়ানমারের বিজিপি ও সেনা সদস্যদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শেষ করে ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষে প্রেসব্রিফিং করে বিস্তারিত জানানো হবে।