বিক্ষোভ মিছিল শেষে শিক্ষার্থীরা বলেন, হল ছাড়তে হলে পুলিশ-সেনাবাহিনী দিয়ে তাদের রক্তের ওপর দিয়ে হল ছাড়াতে হবে।
Published : 26 Feb 2025, 02:08 AM
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) আবাসিক হল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের নির্দেশনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা। এসময় তারা হল ছাড়বেন না বলেও ঘোষণা দেন।
মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ক্যাম্পাসে এ মিছিল করেন তারা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘দুর্বার বাংলা’ ভাস্কর্যের পাদদেশ থেকে শুরু হয়ে আবাসিক হলসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
বিক্ষোভ মিছিল শেষে শিক্ষার্থীরা বলেন, জুলাই বিপ্লবের পর প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় হিসাবে কুয়েটে হল খালি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বুধবার তারা হল ছাড়বেন না। হল ছাড়তে হলে পুলিশ-সেনাবাহিনী দিয়ে তাদের রক্তের ওপর দিয়ে হল ছাড়াতে হবে।
শিক্ষার্থীরা বলেন, তাদের আন্দোলন দমানো, ভিন্ন খাতে প্রবাহিত এবং দীর্ঘায়িত করার জন্য বিভিন্ন ধরনের চাপ চলছে। ছয় দফা দাবিতে তারা অনড় আছেন। তাদের ছয় দফার প্রতিটি দাবি মানতে হবে।
তারা আরও বলেন, তাদের মধ্যে যে ১৫০ জন আহত হয়েছেন, কুয়েট প্রশাসন একবারও তাদের খোঁজ-খবর নেয়নি। শিক্ষার্থীদের পাশেও দাঁড়ায়নি।
ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে হামলা-সংঘর্ষের পর বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা ছয় দফা দাবি জানিয়ে আন্দোলন করছেন।
এর মধ্যে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে সব ধরনের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।
সেইসঙ্গে বুধবার সকাল ১০টার মধ্যে আবাসিক শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানান কুয়েটের তথ্য ও প্রকাশনা দপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) শাহেদুজ্জামান শেখ।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কুয়েটের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নোটিসে স্বাক্ষর করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. আনিচুর রহমান ভূঁঞা। মঙ্গলবার সিন্ডিকেটের ৯৯তম জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এর আগে দুপুরে পূর্বঘোষণা অনুযায়ী, উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে তার বাসভবনে আবার তালা ঝুলাতে গিয়েছিল একদল শিক্ষার্থীরা। আগের দিন রাতে কুয়েটের উপাচার্য মুহাম্মদ মাছুদ ঢাকা থেকে খুলনায় ফিরে তার বাসভবনে অবস্থান করার খবরে ক্ষুব্ধ হন শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার মধ্যে উপাচার্যকে বাসভবন থেকে বের হয়ে যেতে সময় বেঁধে দেন শিক্ষার্থীরা। সেইসঙ্গে উপাচার্যের বাসভবনে আবার তালা ঝোলানোর ঘোষণা দেন তারা। পরে শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলার পর তালা না লাগিয়ে সেখান থেকে ফিরে যান।
ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে ১৮ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাসে ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমর্থকদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়; এতে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন।
ঘটনার পরদিন বুধবার সন্ধ্যায় খানজাহান আলী থানায় অজ্ঞাত পরিচয় ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে আসামি করে মামলা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। মামলায় বিএনপি ও যুবদলের চার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
সংঘর্ষের দিন পাঁচজনকে আটক করে পুলিশে দেয় সেনাবাহিনী। যাদের প্রিজন সেলে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল।
শুক্রবার তাদের মধ্যে চারজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয় বলে খানজাহান আলী থানার ওসি কবীর হোসেন জানান।
আরও পড়ুন-
কুয়েট অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা, হল ছাড়ার নির্দেশ
কুয়েট সংঘর্ষ: প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দিতে ঢাকার পথে শিক্ষার্থীরা
কুয়েট উপাচার্যের বাসভবনে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের তালা
আন্দোলনের মধ্যে ক্যাম্পাস ছাড়লেন কুয়েট উপাচার্য
কুয়েটে ছাত্ররাজনীতিকে ‘লাল কার্ড’ দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
কুয়েটে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা: প্রশাসনের মামলায় আসামি ৪০০-৫০০ জন
কুয়েট: দাবি ‘পুরোপুরি না মানায়’ উপাচার্যসহ ৩ জনকে বর্জনের ঘোষণা
কুয়েটে হামলায় সাধারণের ব্যানারে 'বৈষম্যবিরোধী, গুপ্ত ও নিষিদ্ধরা'
সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত: কুয়েটে রাজনীতি বন্ধ, হামলার তদন্তে কমিটি
ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধীদের সংঘর্ষের পর কুয়েট বন্ধ ঘোষণা
কুয়েটে রামদা হাতে ভাইরাল যুবদল নেতাকে বহিষ্কার
কুয়েটে উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি, ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা
কুয়েটে ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ, বিজিবি মোতায়ে