শিক্ষার্থীরা বলছেন, ছয় দফা দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত তারা আর ক্যাম্পাসে ফিরবেন না।
Published : 23 Feb 2025, 02:05 PM
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়-কুয়েটের একদল শিক্ষার্থী উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের অপসারণসহ ছয় দফা দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দিতে ঢাকায় যাচ্ছেন।
রোববার সকাল ৮টার দিকে ক্যাম্পাস থেকে ভাড়া করা দুটি বাসে ৮০ থেকে ১০০ জন শিক্ষার্থী ঢাকায় রওনা হয়েছেন।
এ সময় শিক্ষার্থীদের হাতে বিভিন্ন স্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড দেখা যায়। তাদের চোখ লাল কাপড় দিয়ে বাঁধা ছিল।
রওনা হওয়ার আগে শিক্ষার্থীরা সাংবাদিকদের বলেন, এই ক্যাম্পাস তাদের জন্য নিরাপদ নয়। তারা এখানে নিরাপদ বোধ করছেন না। গেটগুলোতে কুয়েটের গার্ড ছাড়া কেউ নেই। বহিরাগত ব্যক্তিরা ‘অবাধে’ ক্যাম্পাসে চলাফেরা করছে। এতে তারা খুবই আতঙ্কিত।
এ অবস্থায় তারা প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দেওয়া জন্য যাচ্ছেন। বাস ভাড়া তারা নিজেরাই বহন করছেন। প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দিয়ে তারা তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে যাবেন। ছয় দফা দাবি বাস্তবায়ন না পর্যন্ত তারা আর ক্যাম্পাসে ফিরবেন না।
সব দাবি পূরণ হওয়ার আগ পর্যন্ত ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক কাজ চলবে না। তাদের সব কার্যক্রম অনলাইনে চলবে বলেও শিক্ষার্থীরা জানান।
এর আগে শনিবার শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ও হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে সন্ত্রাসবিরোধী বিক্ষোভ মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা।
তার আগের রাতে অর্থাৎ শুক্রবার উপাচার্যের বাসভবনের সামনে বিক্ষোভের এক পর্যায়ে ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা। এদিন বিকালে ‘রক্তাক্ত কুয়েট ১৮.০২.২৫’ শিরোনামে ছবি প্রদর্শনী করা হয়।
ছাত্রকল্যাণ কেন্দ্রে এই প্রদর্শনীতে আহত শিক্ষার্থীদের ছবি ও শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবির আন্দোলনের বিভিন্ন ছবি প্রদর্শন করা হয়।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে উপাচার্য মুহাম্মদ মাছুদ তার বাসভবন ছেড়ে ঢাকায় রওনা দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য ও প্রকাশনা দপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) শাহেদুজ্জামান শেখ।
শাহেদুজ্জামান বলেন, চিকিৎসার জন্য উপাচার্য এক দিন ঢাকায় অবস্থান করবেন। উপাচার্যের স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যরা আগে থেকেই ঢাকায় ছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, উপাচার্য ঢাকায় থাকায় উপ-উপাচার্য শেখ শরীফুল আলমকে উপাচার্যের রুটিন দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
পদত্যাগের দাবির বিষয়ে উপাচার্য মুহাম্মদ মাছুদ বৃহস্পতিবার দুপুরে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “আমরা যদি তাদের দাবিগুলো মেনে নেই, তাদের দাবির জন্য যদি সব ব্যবস্থা করি, তাহলে কেন আমাদের পদত্যাগ করতে হবে? আমরা তো তাদের দাবি অনুযায়ী সবকিছু করছি।
“আমরা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়কে ঠিকমতো পরিচালনা করছি। আমরা চাচ্ছি যে, বিশ্ববিদ্যালয় একটা নিয়মের মধ্যে আসুক।”
ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে ১৮ ফেব্রুয়ারি (মঙ্গলবার) দুপুরের পর থেকে ক্যাম্পাসে ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমর্থকদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে; এতে অর্ধশতাধিক আহত হন।
সংঘর্ষ এক পর্যায়ে ক্যাম্পাসের বাইরে ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় রেলগেট, তেলিগাতিসহ আশপাশের বিএনপি নেতাকর্মীরা ছাত্রদলের সঙ্গে এবং সাধারণ শিক্ষার্থী ও ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দিলে পরিস্থিতি ভয়াবহ রুপ নেয়।
রাতে শিক্ষার্থীরা সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। সেখানে তারা পাঁচ দফা- বিশ্ববিদ্যালয়ের কেউ রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারবেন না এবং থাকলে আজীবন বহিষ্কারের বিধান রেখে অধ্যাদেশ জারি; সংঘর্ষের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা, বহিষ্কারসহ ব্যবস্থা নেওয়া; ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ক্যাম্পাসের বাইরে সামরিক বাহিনীর সদস্যদের রাখা; আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার ব্যয় প্রশাসন থেকে বহন করা এবং ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে ক্ষমা চেয়ে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও ছাত্রকল্যাণ পরিচালকের পদত্যাগের দাবি উত্থাপন করেন।
পরদিন বুধবার বেলা ১টার মধ্যে দাবি পূরণের সময় বেঁধে দেন তারা। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কুয়েটে সব ধরনের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়।
বুধবার সকাল থেকে উপাচার্যের পদত্যাগসহ পাঁচ দফা দাবিতে চিকিৎসাকেন্দ্রের বাইরে অবস্থান করে শিক্ষার্থীরা। দুপুরে প্রশাসনিক, অ্যাকাডেমিকসহ সব ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেয় তারা।
তখন চিকিৎসাকেন্দ্রের দোতলায় ছিলেন উপাচার্য মুহাম্মদ মাছুদ।
উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের জরুরি সিন্ডিকেট বৈঠকে চিকিৎসাকেন্দ্র থেকেই অনলাইনে যোগ দেন উপাচার্য। সভায় ক্যাম্পাসে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়।
সেদিন উপ-উপাচার্য শেখ শরীফুল আলমকে বলেছিলেন, মঙ্গলবারের ঘটনায় জড়িত বহিরাগতদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মামলাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন তারা। আর জড়িত শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হবে। আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা ব্যয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বহন করবে। ক্যাম্পাস এলাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের লক্ষ্যে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সব অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিন্ধান্ত নেয়ে কর্তৃপক্ষ। তবে হলগুলো খোলা রাখা হয়েছে। তবে কিছু সাধারণ শিক্ষার্থীকে হল ছেড়ে চলে যেতে দেখা গেছে।
এদিকে ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনায় তদন্তে চার সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। তিন কর্মদিবসের মধ্যে সদস্যদের প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে বলে উপ-উপাচার্য জানিয়েছেন।
এদিকে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার অভিযোগে খান জাহান আলী থানায় অজ্ঞাত পরিচয় ৪০০-৫০০ জনকে আসামি করে একটি মামলা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ওই মামলায় বিএনপি ও যুবদলের চার নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।