“আমরা লড়াই শুরু করেছি ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নয়, আমরা লড়াই শুরু করেছি, বাংলাদেশকে সত্যিকার অর্থেই একটা আধুনিক কল্যাণমূলক রাষ্ট্র পরিণত করার জন্য,” বলেন বিএনপি মহাসচিব।
Published : 17 Mar 2023, 05:04 PM
সুপ্রিম কোর্ট বারের নির্বাচন ঘিরে গত ‘দুদিনের ঘটনার’ পর এবার দেশের মানুষের কোথায় যাবে- সেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শুক্রবার দুপুরে এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, “গতকাল (বৃহস্পতিবার) চিফ জাস্টিসের কাছে গিয়েছিলেন আমাদের আইনজীবীরা। তিনি বলেছেন, ‘আমার যদি কিছু করার থাকে তাহলে আমরা করব’।
প্রধান বিচারপতির এই বক্তব্যের প্রসঙ্গ ধরে ফখরুল বলেন, “একটা দেশের জুডিশিয়ারি সম্পূর্ণ আলাদা, রাষ্ট্রের স্বাধীন একটা প্রতিষ্ঠান। তার প্রধান তিনি, তিনি বলছেন- ‘আমার যদি কিছু করার থাকে তাহলে করব’।
“কোথায় যাব আমরা, কার কাছে যাব, দেশের মানুষ কোথায় যাবে? উনার ক্যাম্পাস, উনার এলাকা, উনার প্রাঙ্গণ, উনি সেখানে সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী।”
এ সময় দর্শক সারিতে বসা এক আইনজীবীকে উদ্দেশ করে ফখরুল বলেন, “এই যে আহমদ আজম সাহেবরা লইয়ার মানুষ… তারা কোর্টের মধ্যে থেকে পুলিশের হাতে পিটুনি খাবেন- এই দেশ তো আমরা চিন্তা করিনি, ভাবিওনি কোনোদিন।”
বুধবার ও বৃহস্পতিবার ব্যাপক হাঙ্গামা, হট্টগোল, পুলিশের পিটুনির মধ্যে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে ভোটগ্রহণ চলে।
বুধবার ভোট গ্রহণের প্রথম দিন ব্যালট পেপারে কারচুপির অভিযোগ করেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা। এ নিয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগের মধ্যে বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দেখা করেন তারা।
হট্টগোল-ধাক্কাধাক্কির মধ্যে সুপ্রিম কোর্ট বারে হল ভোট
সুপ্রিম কোর্ট বারের ভোট: প্রধান বিচারপতির উদ্যোগ চান ফখরুল
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী নির্বাচন: প্রধান বিচারপতির সঙ্গে বিএনপিপন্থীদের সাক্ষাৎ
এদিকে সমিতির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক মো. মনিরুজ্জামান ব্যালট পেপার চুরি ও ছিঁড়ে ফেলা এবং নির্বাচন সংক্রান্ত আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র বাইরে ফেলে দেওয়ার অভিযোগে বিএনপির নীল প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী মাহবুব উদ্দিন খোকন, সম্পাদক প্রার্থী রুহুল কুদ্দস কাজলসহ ৩৫০ জন আইনজীবীর বিরুদ্ধে বুধবার রাতে একটি মামলা করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, “তিনজন খুব জ্যেষ্ঠ আইনজীবী যারা একসময়ে মন্ত্রী ছিলেন, তারা বলেছেন… তার মধ্যে একজন হচ্ছেন শফিক সাহেব (শফিক আহমেদ) প্রাক্তন আইনমন্ত্রী, তিনি আওয়ামী লীগের। তিনি বলেছেন, ‘এই ন্যক্কারজনক ঘটনার নিন্দা জানানোর ভাষা নেই’।
“মান্না (মাহমুদুর রহমান মান্না) সাহেব বলেছেন, ‘এটা আমরা চিন্তাও করতে পারি না যে, জুডিশিয়ারি… সেখানে পুলিশ ঢুকে আইনজীবীদের পিটিয়েছে, সাংবাদিকদের পিটিয়েছে, তাদেরকে বের করে দিয়েছে’। উপরন্তু তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। কোনো রাজত্বে আমরা বাস করছি।”
এদেশের মানুষকে এসব নিপীড়নের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের আহ্বান জানান ফখরুল।
তিনি বলেন, “আমরা লড়াই শুরু করেছি ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নয়, আমরা লড়াই শুরু করেছি, বাংলাদেশকে সত্যিকার অর্থেই একটা আধুনিক কল্যাণমূলক রাষ্ট্র পরিণত করার জন্য।
“এই লড়াইয়ে আমরা অনেক দূর এগিয়েছি। আমরা সাধারণ মানুষের চোখের যে ভাষা দেখতে পাই, তাদের যে আকুতি আমরা দেখতে পাই, তাদের যে দৃঢ়তা দেখতে পাই তাতে আমরা প্রতিদিন অনুপ্রাণিত হচ্ছি, সাহস পাচ্ছি এগিয়ে যাচ্ছি। আমি বিশ্বাস করি, আমরা অতি শিগগিরই ইনশাল্লাহ বাংলাদেশের সমস্ত মানুষকে সঙ্গে নিয়ে এই লড়াইয়ে আমরা বিজয় লাভ করবই।”
‘এমন ঘটনাও পৃথিবীতে নেই’
অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, “দেখেছেন না দুইদিন ধরে সুপ্রিম কোর্টের কী চলছে? কল্পনাই করা যায় না। একটা সরকার এতবড় ইতর-ছোট লোক হতে পারে এরকম পৃথিবীর কেউ ভাববে না।
“ওই জাপানের রাষ্ট্রদূত কিছুদিন আগে বলেছিলেন না- ‘দিনের ভোট আগের রাত্রে হয় দুনিয়ার কোথাও আমি এই কাহিনী শুনি নাই’। এবার জাপান নয়, সারা পৃথিবীর রাষ্ট্রদূতরা বলবে, সুপ্রিম কোর্টের গিয়ে পুলিশ আইনজীবী-সাংবাদিকদের পিটায়- এরকম ঘটনা তো পৃথিবীতে নাই।”
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি এবং সম্প্রতি নানা আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘অর্পণ বাংলাদেশ’- এর উদ্যোগে ঢাকার সেগুন বাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ে এই আলোচনা সভা হয়।
নিহত নেতাকর্মীর পরিবারকে রমজান উপলক্ষে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে উপহারসামগ্রী দেওয়া হয় অনুষ্ঠানে।
অর্পণ বাংলাদেশ- এর সভাপতি বীথিকা বিনতে হোসেনের সভাপতিত্বে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান, মহানগর বিএনপির ইশরাক হোসেন, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জু্য়েল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি খোরশেদ আলম সোহেল সভায় বক্তব্য দেন।