হট্টগোল-ধাক্কাধাক্কির মধ্যে সুপ্রিম কোর্ট বারে হল ভোট

রাতে ভোট গণনা হবে। আওয়ামী লীগপন্থি আইনজীবীরা ভোটে অংশ নিলেও বিএনপিপন্থিরা ভোট দিতে আসেনি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 March 2023, 06:18 PM
Updated : 16 March 2023, 06:18 PM

দুদিনব্যাপী হট্টগোল, ধাক্কাধাক্কি ও পাল্টাপাল্টি স্লোগানের মধ্য দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে।

আগের দিন পুলিশের লাঠিপেটাসহ ব্যাপক বিশৃঙ্খলার মধ্যে নির্ধারিত সময়ের দুই ঘণ্টা পর ভোটগ্রহণ শুরু হয়; শেষ হয় বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টায়। রাতে ভোট গণনা করা হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন পরিচালনা উপ কমিটির আহ্বায়ক মো. মনিরুজ্জামান।

দুদিনের ভোট চলাকালে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা ছিলেন মুখোমুখি অবস্থানে।

ভোটের দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্যানেল বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ সমর্থিত প্যানেল ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেলের নেতাকর্মীদের মধ্যে কয়েক দফা ধাক্কাধাকিও হয়।

পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ, মারামারি, পুলিশের হাতে সাংবাদিক হেনস্তার মত ঘটনায় উত্তেজনার মধ্যে আওয়ামীপন্থি আইনজীবীরা ভোটে অংশ নিলেও বিএনপিপন্থিরা বর্জনের ঘোষণা না দিলেও ভোট দেয়নি।

ভোট শেষে নির্বাচন পরিচালনা উপ কমিটির আহ্বায়ক মো. মনিরুজ্জামান জানান, এবারের নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৮ হাজার ৬০২ জন। দ্বিতীয় দিন শেষে মোট চার হাজারের বেশি ভোট পড়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। রাতে ভোট গণনা শুরু হবে।

নির্বাচন পরিচালনা ঘিরে হামলা ও পুলিশের মারধরের বিবরণ দিয়ে বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দিনের শুরুতে আপিল বিভাগে যান বিনএনপিপন্থি আইনজীবীরা। দুপক্ষের আইনজীবীরা এক অপরের বিপক্ষে মিছিল-শ্লোগান দিয়ে মারমুখী অবস্থান নিতেও দেখা যায়।

পরে বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা প্রথমে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীসহ আপিল বিভাগের বিচারপতিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এরপর তারা যান অ্যাটর্নি জেনারেলের কাছে।

আগের দিনের সংঘর্ষের জের ধরে এদিন সকালে আইনজীবী সমিতির সামনে ভোটের প্যান্ডেলের ফটকে দুপক্ষের ধাক্কাধাক্কি হয়। এর রেশ ধরে বিকালেও দুপক্ষের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি হয়।

শেষ পর্যন্ত বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের অংশগ্রহণ ছাড়াই সমিতির দ্বিতীয় দিনের ভোট গ্রহণ শেষ হয়।

ভোট শেষ হওয়ার আগে ‘সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সদস্য’ ব্যানারে কয়েকজন নারী আইনজীবী মানববন্ধন করেন। এসময় বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্টের সাবেক ডেপুটি অ্যাটর্নি জিনারেল আমাতুল করিম।

তিনি বলেন, আইনজীবীদের উপর পুলিশের হামলা সুপ্রিম কোর্টের ইতিহাসে নজিরবিহীন। নির্বাচনে আইনজীবীরা ভোট দেবেন। কিন্তু সবাইকে ভোট দিতে দেওয়া হচ্ছে না। পুলিশ আইনজীবীদের লাঠিপেটা করছে।

তিনি এ ন্যক্কারজনক হামলার বিচার দাবি করেন এবং নতুন করে ভোট গ্রহণের দাবি জানান।

সমিতির এক বছর মেয়াদী নেতৃত্ব নির্বাচনে ১৪টি পদে ভোট হচ্ছে।

বর্তমান সমিতির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ সাতটি পদে আছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীরা। বাকি সাতটি পদে আছেন বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীরা।

শুরু থেকেই উত্তেজনা

উৎসবমুখর পরিবেশের বদলে ভোটের আগের দিন থেকে আওয়ামী লীগপন্থি ও বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের মধ্যে উত্তেজনা শুরু হয়। মঙ্গলবার নির্বাচন পরিচালনাসংক্রান্ত উপ কমিটি গঠনকে ঘিরে এ দুই দলের সমর্থিত আইনজীবীরা মুখোমুখি অবস্থান নেন।

এর আড়ে গত সোমবার নির্বাচন পরিচালনাসংক্রান্ত উপ কমিটির আহ্বায়ক মনসুরুল হক চৌধুরী পদত্যাগ করলে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। দুপক্ষের সম্মতিতে মনসুরুল হক চৌধুরীকে আহ্বায়ক করা হয়েছিল।

এর আগের বছরগুলোতে দেখা গেছে ভোটের প্যান্ডেলের সামনে দুপক্ষের প্রার্থীরা সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন এবং ব্যালট নম্বরসম্বলিত তাদের পরিচিতি কার্ড ভোটারদের হাতে দেন।

এবার আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের দেখা গেলেও ছিলেন না বিএনপি সমর্থিত প্যানেলের কেউ।

বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীদের ভোট দিতে দেখা না গেলেও তারা বর্জনের কথা বলেননি। তারা নতুন পরিচালনা কমিটি করে পুনরায় ভোট গ্রহণের দাবি জানান।

দ্বিতীয় দিনের ভোটের চিত্র

বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দিনের ভোট শুরু হয় সকাল ১০টার পর। এরপর ক্রমান্বয়ে সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন ভবনে ভোটকেন্দ্রে দুই দলের আইনজীবীরা জড়ো হন।

বেলা ১২টার পর আগের দিনের মতো পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। দুপক্ষের আইনজীবীরা পাল্টাপাল্টি স্লোগান দেন। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়। পুলিশ দুপক্ষের মাঝে থেকে সতর্ক অবস্থান নেয়। এ সময় ভোট গ্রহণ চলছিল।

দ্বিতীয় দিনেও ভোটকেন্দ্র ঘিরে সমিতি ভবনে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। সকাল ১০টায় ভোট গ্রহণ শুরুর পর বার ভোটকেন্দ্রের সামনে আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীদের দেখা গেলেও বিএনপিপন্থীদের তেমন দেখা যায়নি।

বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের বিরুদ্ধে মামলা

এদিকে আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের ব্যালট পেপার চুরি ও ছিঁড়ে ফেলা এবং নির্বাচনসংক্রান্ত আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র বাইরে ফেলে দেওয়ার অভিযোগে মামলা হয়েছে।

বুধবার সন্ধ্যায় শাহবাগ থানায় মামলাটি দায়ের করেন নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক মো. মনিরুজ্জামান।

মামলায় বিএনপিপন্থি আইনজীবী প্যানেলের সভাপতি পদপ্রার্থী মাহবুব উদ্দিন খোকন, সম্পাদক পদপ্রার্থী রুহুল কুদ্দুস কাজলসহ ১২ জন আইনজীবীর নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ১০০ থেকে ১৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।