সুপ্রিম কোর্ট বারের ভোট: প্রধান বিচারপতির উদ্যোগ চান ফখরুল

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করে নতুন নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 March 2023, 07:35 AM
Updated : 17 March 2023, 07:35 AM

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ‘একতরফা’ নির্বাচনে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রধান বিচারপতির উদ্যোগ চান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

শুক্রবার সকালে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “রাজনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগ আজ এমন একটি দেউলিয়া দলে পরিণত হয়েছে, আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে পুলিশ ও বহিরাগতদের ব্যবহার করে নিজেদের প্রার্থীদের বিজয়ী ঘোষণা করতে হয়- এটা বড় লজ্জার বিষয়।”

“এই সূত্রে আমার যেটা প্রত্যাশা, প্রধান বিচারপতি যিনি, রাষ্ট্রের যে সর্বোচ্চ বিচারালয় সুপ্রিম কোর্ট, তার পবিত্রতা রক্ষা করবার জন্য এগিয়ে আসবেন এবং প্রতিষ্ঠানটির পবিত্রতা রক্ষা করবার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।”

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করে নতুন নির্বাচনের দাবিও জানান বিএনপি মহাসচিব।

তিনি বলেন, “আইনগতভাবে কোনো নির্বাচন না হলেও নির্বাচনের নাটক সাজিয়ে একতরফাভাবে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের অবৈধভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়েছে। আমি অবিলম্বে সুপ্রিম কোর্টে যে তথাকথিত নির্বাচন, সমস্ত বাতিল করে দিয়ে, আবার নতুন করে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানাচ্ছি।”

ব্যাপক হাঙ্গামা, হট্টগোল, পুলিশের পিটুনির মধ্যে বুধবার ও বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট বারের ভোটগ্রহণ হয়। বুধবার ভোট গ্রহণের প্রথম দিন ব্যালট পেপার চুরি ও ছিঁড়ে ফেলা এবং নির্বাচন সংক্রান্ত আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র বাইরে ফেলে দেওয়ার অভিযোগে সমিতির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক মো. মনিরুজ্জামান বিএনপির নীল প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী মাহবুব উদ্দিন খোকন, সম্পাদক প্রার্থী রুহুল কুদ্দস কাজলসহ ৩৫০ জন আইনজীবীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।

বৃহস্পতিবার গভীর রাতে নির্বাচন পরিচালনা উপকমিটির আহ্বায়ক মো. মনিরুজ্জামান ভোটের ফলাফল ঘোষণা করেন।তাতে সভাপতি পদে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ সমর্থিত মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির এবং সম্পাদক পদে একই প্যানেলের আব্দুর নূর দুলালসহ পূর্ণ প্যানেল নির্বাচিত হয়।

‘মুখোশ উন্মোচিত’

মির্জা ফখরুল বলেন, “আমরা মনে করি, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভোট ডাকাতিতে সিদ্ধহস্ত আওয়ামী লীগের মুখোশ আরেকবার উন্মোচিত হল। দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থার কফিনের শেষ পেরেকটি ঠোকা হয়েছে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিতে।

“আমি আবার বলতে চাই যে, এখন রাষ্ট্রের বিভিন্ন বিভাগে যারা দায়িত্বরত, কর্মরত রয়েছেন, তাদের পবিত্র দায়িত্ব এই রাষ্ট্রকে রক্ষা করা এবং রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন সেই প্রতিষ্ঠানগুলোর যে পবিত্রতা, সেই পবিত্রতা রক্ষা করা তাদের দায়িত্ব। আমরা কল্পনাও করতে পারি না যে সুপ্রিম কোর্টে পুলিশ ঢুকে আইনজীবীদের আক্রমণ করবে, প্রহার করবে, তাদের আহত করবে। এটা ছোট কথা নয়, এটা হালকা করে দেখার বিষয় নয়।”

ফখরুল বলেন, “এসব ঘটনায় রাষ্ট্রের চরিত্র কী দাঁড়াচ্ছে? আমরা যেটা বলছি যে, এটা একটা ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হচ্ছে তারই প্রমাণ আমরা দেখতে পাচ্ছি।”

বাংলাদেশ আর ‘গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নেই’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, “বাংলাদেশে যত গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান আছে, সেই প্রতিষ্ঠানগুলো এই আওয়ামী লীগ সরকার অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে ধবংস করে দিচ্ছে। তার সর্বোচ্চ ন্যক্কারজনক উদাহরণ আমরা সর্বোচ্চ আদালতে দেখলাম।

“সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীদের বলা হয় অফিসিয়ার্স অব দ্য কোর্ট। সেই আইনজীবীদের সমিতির নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মধ্যযুগীয় কায়দায় পুলিশ বাহিনীকে ব্যবহার করে তা ধ্বংস করে দিল। আওয়ামী লীগ দেশে এক দলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চায়, আওয়ামী লীগ বিচার বিভাগকে সম্পূর্ণ করায়ত্ব করে নিয়েছে প্রায়, এখন চূড়ান্ত করতে চায়। বারগুলোকে জোর করে দখল করে নিতে চায়- এই কথাগুলো ক্ষোভ খেদ, দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে আজকে।”

জাতীয় নির্বাচনেও এরকম কারচুপি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন কিনা– এমন প্রশ্নে ফখরুল বলেন, “হয়ে যেতে পারে না, হবে। হবে বলে তো আমরা বলছি যে, আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন সম্ভব নয়। … যখনই তারা ক্ষমতায় থাকবে, যে নির্বাচন হবে, সেই নির্বাচনে তারা নিয়ন্ত্রণ নেবে, সেই নির্বাচন করে তাদের মত তারা প্রার্থীদের জয়ী ঘোষণা করবে।”

বিএনপির সহ দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু ও বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দিন দিদার সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।