“একটা কথা জোর দিয়ে বলতে চাই, গণতন্ত্রের কোনো বিকল্প নাই এবং গণতন্ত্রকে চাপিয়ে দেওয়া যায় না,” বলেন তিনি।
Published : 19 Apr 2025, 08:26 PM
দেশের ভবিষ্যৎ নির্মাণের ভার দেশের মানুষের হাতেই, এই মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমেরিকার ডনাল্ড ট্রাম্প, চীনের শি জিনপিং কিংবা ভারতের নরেন্দ্র মোদী এসে কিছু করতে পারবেন না।
শনিবার দুপুরে এক আলোচনা অনুষ্ঠানে দেশের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে তিনি এ কথা বলেন।
গণতন্ত্রের কোনো ‘বিকল্প’ নেই বলে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “একটা কথা জোর দিয়ে বলতে চাই, গণতন্ত্রের কোনো বিকল্প নাই এবং গণতন্ত্রকে চাপিয়ে দেওয়া যায় না।
“আপনি আমার ওপরে চাপিয়ে দেবেন, তা দেওয়া যাবে না।”
মির্জা ফখরুল বলেন, “গণতন্ত্র চর্চা করতে হবে, প্র্যাকটিস করতে হবে। সেই জায়গাগুলোকে খোলা রাখতে হবে। এই আশা রেখে আবারও বলতে চাই, সেই বিহঙ্গের মত একদিন না একদিন তীরে এসে পৌঁছাবই।”
‘দেশটা আমাদের, বিদেশের কেউ এসে করে দেবে না’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আমি অত্যন্ত আশাবাদী, আমি বিশ্বাস করি, আমরা সবাই যদি আজকে এইটুকু বুঝতে পারি যে দেশটা আমাদের, এর ভবিষ্যৎ আমাদেরই নির্মাণ করতে হবে।
“ওই আমেরিকা থেকে এসে ট্রাম্প (ডনাল্ড ট্রাম্প) তৈরি করে দেবেন না বা চীন থেকে শি (শি জিনপিং) এসেও এটা করে দেবেন না। অথবা ভারত থেকে মোদী (নরেন্দ্র মোদী) ধাক্কা দিয়ে কিছু করতে পারবেন না। এই বিষয়গুলো আমাদের মনের মধ্যে, অন্তরের মধ্যে গেঁথে নিতে হবে।”
বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস থাকার কথা তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আমি প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনুসকে ধন্যবাদ জানাই। তিনি দায়িত্ব নিয়েছেন, আমার বিশ্বাস আছে যে তিনি সফল হবেন।”
“আসুন আমরা সবাই মিলে তাকে সাহায্য করি। আমরা নিজেরাই নিজেদেরকে সাহায্য করে সামনে দিকে এগিয়ে যাই।”
তিনি বলেন, “এতো যে রক্তপাত হল, এতো যে রক্ত ঝরলো, এতো যে মায়ের বুক খালি হল, তার পরিণতি কী হবে শেষ পর্যন্ত? আমি বিশ্বাস করি, দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে ভালো হবে এবং খুব ভালো হবে।”
তার এমন বিশ্বাসের কারণ তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, “আমরা বাংলাদেশের মানুষেরা চিরকাল ভালোর জন্যে সংগ্রাম করেছি, লড়াই করেছি এবং জয়ী হয়েছি। বিশেষ করে আমাদের তরুণেরা, আমাদের ছেলেরা আজকে বাংলাদেশের যা কিছু ভালো অর্জন সব তাদের জন্যে।
“দেখুন ৫২ থেকে ২৪ পর্যন্ত সব আন্দোলনে তরুণরা ভ্যানগার্ডের ভূমিকা পালন করেছেন। সেখানেই আমাদের শক্তি… সেই প্রান্তিক মানুষগুলো।”
যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপ প্রসঙ্গ
২ এপ্রিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বের শতাধিক দেশের পণ্যের ওপর নতুন করে শুল্ক আরোপের যে ঘোষণা দিয়েছেন, তাতে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের সময় ৩৭ শতাংশ সম্পূরক শুল্কের মুখোমুখি হবে।
তবে এক সপ্তাহের মাথায় চীন ছাড়া অ্যে দেশের ওপর আরোপ করা এই পাল্টা শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করে ট্রাম্প প্রশাসন।
এ প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আমরা এখন খুব ব্যস্ত হয়ে পড়েছি যে, আমেরিকা ট্র্যারিফ আরোপ করে ফেলেছে এবং খুব দ্রুত যদি এই ট্যারিফের বিষয়ে সুরাহা না করা যায় তা হলে আরও বড় বিপদে পড়তে হবে, এটা সত্য কথা।”
“আমার মনে হয়, আমরা এই শ্রেণির মানুষগুলোকে (কৃষক) যদি সামনের দিকে এগিয়ে আনতে পারি, তাদের কাজ দিতে পারি, তাদের বিভিন্ন প্রযুক্তি দিতে পারি তাহলে এই সমস্যাগুলো আমরা অতিদ্রুত কাটিয়ে উঠতে পারব।”
ঢাকায় বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সেমিনার হলে এমপাওয়ারমেন্ট বাংলাদেশ এবং নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ইতিহাস ও দর্শন বিভাগ এর যৌথ উদ্যোগে ‘বাংলাদেশ ক্ষমতায়ন: নেতৃত্ব, ঐক্য এবং প্রবৃদ্ধির পথ’ শীর্ষক এ আলোচনা সভা হয়।
‘বাংলাদেশের অভ্যুদয়: বহুচিন্তার একত্রিত ফল’
মির্জা ফখরুল বলেন, “বাংলাদেশে অনেক রাজনীতি আছে, এটার জন্মটা হয়েছিল বহুত্ববাদের মধ্য দিয়ে, মানে বহু চিন্তার মধ্য দিয়ে।
“স্বাধীনতা যুদ্ধের আগে আমাদের নেতা অনেকেই ছিলেন। অত্যন্ত বড় বড় নেতা, মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেখ মুজিবুর রহমান।
“আমাদের মাহবুবউল্লাহ সাহেব আসেননি বোধহয়, তিনিও তখন বিরাট নেতা ছিলেন, ওখানে বাদল দা বসে আছেন, তারাও বড় নেতা ছিলেন।”
তখন একেক জনের একেক চিন্তা থাকার কথা তুলে ধরে বিএনপির এই নেতা বলেন, “সেই চিন্তাগুলো ছিল, কেউ আমরা সমাজতন্ত্র করব, কেউ সমাজকে পাল্টিয়ে দেব, কেউ কমিউনিজম করব, কেউ ধর্মীয় ব্যবস্থাকে এখানে প্রতিষ্ঠিত করব, ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত কবর, সব মিলিয়ে যখন যুদ্ধ শুরু হয়েছে তখন আমরা এক হয়েছি, এক হয়ে লড়াইটা করেছি।
“আজকে ২৪ এর আন্দোলনে একই ঘটনা ঘটেছে। বিভিন্ন চিন্তা নিয়ে আমরা এসেছি, সে দিন ছাত্রদের ওপরে গুলি শুরু হয়েছে, তখন কিন্তু সবাই নেমে এসেছে রাস্তায়। আজকে আসুন, সবাই মিলে এক হয়ে যাই। আমাদের সমস্যা আছে, সমস্যার সমাধান হবে। ইতিমধ্যে অনেক দূর এগিয়েছে।”
অনুষ্ঠানে সভাতিত্ব করেন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল হান্নান চৌধুরী। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রয়াত রাষ্ট্রদূত সিরাজুল ইসলামের বড় মেয়ে সাবরিনা ইসলাম রহমান।
দুই পর্বের এই আলোচনা সভার প্রথম পর্বে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ ভিডিও বক্তব্য রাখেন। বিএনপি মহাসচিব ছাড়াও সেখানে বক্তব্য রাখেন পররাষ্ট্র সচিব জসীম উদ্দিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যায়ন বিভাগের অধ্যাপক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর।
দ্বিতীয় পর্বে পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, অর্থনীতিবিদ হোসেন জিল্লুর, রাষ্ট্র বিজ্ঞানী অধ্যাপক দিলারা জামান বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থীদের ‘অ্যাম্বাসেডর সিরাজুল ইসলাম ফিউচার লিডারস স্কলারশিপ’ বৃত্তি দেওয়া হয়।