দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক মিত্র হয়ে ওঠা জাতীয় পার্টিকে কতগুলো আসনে আওয়ামী লীগ ছাড় দেবে, তা জানতে রোববারের অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে।
Published : 17 Dec 2023, 01:01 AM
মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময় শেষ হচ্ছে রোববার, তার আগের রাতেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির আসন ভাগাভাগির বৈঠক থেকে সমঝোতার খবর এল না।
ফলে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক মিত্র হয়ে ওঠা জাতীয় পার্টিকে কতগুলো আসনে আওয়ামী লীগ ছাড় দেবে, তা জানতে রোববারের অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে।
শনিবার রাতে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে প্রায় তিন ঘণ্টা বৈঠক করেন দুই দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা। আসন ভাগাভাগি নিয়ে এটি ছিল তাদের চতুর্থ বৈঠক।
বৈঠক শেষে রাত সাড়ে ১০টার দিকে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি নেতারা বেরিয়ে গেলেও সাংবাদিকদের প্রশ্নের কোনো উত্তর দেননি কেউ।
তবে আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক সেলিম মাহমুদ পরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, রোববার আবারো তারা বৈঠকে বসতে পারেন।
সেলিম মাহমুদ ছাড়াও আওয়ামী লীগের পক্ষে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম, কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ আলী আরাফাত ছিলেন বৈঠকে।
জাতীয় পার্টির দপ্তর সম্পাদক সুলতান মাহমুদ ছাড়াও একজন কো চেয়ারম্যান উপস্থিত ছিলেন বলে বৈঠকে উপস্থিত এক আওয়ামী লীগ নেতা জানান।
এর আগে সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগ নেতাদের নিয়ে একই জায়গায় দু’দফা বৈঠক করেন ওবায়দুল কাদের। আগের দিন শুক্রবার রাতেও বৈঠকে বসেছিলেন আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির নেতারা।
সর্বশেষ বৈঠকের পর জানতে চাইলে সেলিম মাহমুদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "দীর্ঘক্ষণ বৈঠক হলেও আসন ছাড় নিয়ে কোনো সমঝোতায় পৌঁছাতে পারিনি। আগামীকাল এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে, সকালেই সব জানতে পারবেন।"
আর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "বৈঠকের সিদ্ধান্ত অতিদ্রুতই জানতে পারবেন।"
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে একই কথা বলেছেন মোহাম্মদ আলী আরাফাতও। তার ভাষ্য, "এখনো কোনো সমঝোতা হয়নি, কাল সকালে সিদ্ধান্ত হবে।"
বৈঠকের পর আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো পক্ষ কথা না বললেও আওয়ামী লীগের একজন জ্যেষ্ঠ নেতা জানান, আসন ছাড় দেওয়া নিয়ে দুই দলের ‘প্রায় সমঝোতা’য় পৌঁছেছে। রোববারের বৈঠকে সব চূড়ান্ত হয়ে যাবে। তারপর দুই দল সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত জানাবে।"
ঢাকা-১, ২, ৩: সালমান, সালমাসহ ১৫ প্রার্থী বৈধ
ঢাকা-১৭: জাতীয় পার্টির জিএম কাদের, সালমা দুজনের মনোনয়নপত্রই বৈধ
শুক্রবার পর্যন্ত আলোচনা যেখানে ছিল, তাতে জাতীয় পার্টির এখন যে ২৩টি আসন আছে, সেখানে ছাড় দিতে রাজি ছিল আওয়ামী লীগ। আর জাতীয় পার্টির বলছিল, ২০১৮ সালের নির্বাচনে তাদের যে ২৬টি আসনে ছাড় দেওয়া হয়েছিল, তার সঙ্গে আরো একটি মিলিয়ে মোট ২৭টি আসন দিতে হবে তাদের।
জটিলতা ছিল অন্য জায়গায়। জাতীয় পার্টির বড় দাবি ছিল, তাদের যেসব আসন আওয়ামী লীগ ছেড়ে দেবে, সেসব আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া আওয়ামী লীগ নেতাদেরও বসিয়ে দিতে হবে। কিন্তু স্বতন্ত্র এই আওয়ামী লীগ নেতাদের বিষয়ে কঠোর হতে রাজি নয় ক্ষমতাসীন দল।
শনিবারের বৈঠকে আরো একটু অগ্রগতি হওয়ার কথা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন আওয়ামী লীগের আরেক জ্যেষ্ঠ নেতা। তবে তিনি নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করেছেন।
তার ভাষ্য, সমঝোতা যদি হয়, তাতে জাতীয় পার্টির চাওয়া আসন সংখ্যা ‘হয়ত মেনে নেবে’ আওয়ামী লীগ। সেক্ষেত্রে ২৭টি বা তার বেশি আসনে নৌকার প্রার্থীদের ‘বসিয়ে দেওয়া’ হতে পারে। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া আওয়ামী লীগ নেতাদের বিষয়ে কিছু করার নেই।
সর্বশেষ বৈঠকে জাতীয় পার্টি জোর দিয়েছে তাদের কো-চেয়ারম্যান সালমা ইসলামের আসনে ছাড় পাওয়া নিয়ে।
সাবেক মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী সালমা এবার মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ঢাকা-১ ও ঢাকা-১৭ আসনে। দুটোই বৈধ হয়েছে।
এর মধ্যে ঢাকা-১ আসনে আওয়ামী লীগ বর্তমান এমপি সালমান এফ রহমানকেই মনোনয়ন দিয়েছে। আর ঢাকা-১ আসনে নৌকার প্রার্থী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, যিনি এ বছরই উপ নির্বাচনে জিতে এ আসনের এমপি হয়েছেন।
২০১৮ সালের নির্বাচনে ঢাকা-১ আসনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় সালমান এফ রহমান ও সালমা ইসলামের মধ্যে। ৩ লাখ ২ হাজার ৯৯৩ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন নৌকার প্রার্থী সালমান। আর স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করে সালমা ইসলাম মোটরগাড়ি প্রতীকে পান ৩৭ হাজার ৭৬৩ ভোট পান।
সেবার মহাজোটের ভাগাভাগিতে এ আসন থেকে দলের মনোনয়ন পাননি সালমা। শেষ পর্যন্ত তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হন।
তার আগে ২০১৪ সালের নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের আবদুল মান্নান খানকে হারিয়ে এ আসনের এমপি হয়েছিলেন।
ঢাকা-১৭ আসনে সালমার পাশাপাশি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরও মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে রেখেছেন, সেটা বৈধও হয়েছে। এর পাশাপাশি রংপুর-৩ আসনেও প্রার্থী হয়েছেন কাদের।
ফলে ঢাকা-১৭ আসনে শেষ পর্যন্ত লাঙ্গলের প্রার্থী কে হবেন, তা চূড়ান্ত হবে রোববার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময় শেষ হলে।
২০০৮ সাল থেকেই ১৪ দল ও আওয়ামী লীগ জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করে আসছে। তিনটি জাতীয় নির্বাচনের দুটিতে জোটের শরিক হিসেবে ছিল জাতীয় পার্টিও।
তবে ২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোটের বর্জনের পর জাতীয় পার্টি জোটে ছিল না। এবারও বিএনপি ভোটে আসেনি, জাতীয় পর্টিকেও জোটে রাখা হয়নি।
২০১৪ সালে জোট না থাকলেও জাতীয় পার্টির প্রার্থী আছে- এমন ৩৪টি আসনে প্রার্থী দেয়নি আওয়ামী লীগ। সেসব আসনেই জয় পায় দলটি। একাদশে জোট করার পর তাদেরকে দেওয়া হয় ২৬টি আসন, এর মধ্যে তারা জয় পায় ২৩টিতে।
আরও পড়ুন: