দল ছাড়লেও বাংলাদেশে যারা ‘গণতন্ত্র, সামাজিক ন্যায়বিচার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায়’ কাজ করছেন, তাদের সঙ্গে কাজ করে যাওয়ার অঙ্গীকার জানিয়েছেন গণফোরামের এই সাবেক নেতা।
Published : 04 Jan 2024, 12:44 AM
গণঅধিকার পরিষদ থেকে পদত্যাগ করেছেন দলটির একাংশের আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়া, দিয়েছেন নতুন কিছু করার ইংগিত।
বুধবার রাতে সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়।
দলের সহ দপ্তর সমন্বয়ক শাহাবুদ্দিন শুভ বলেন, “আমাদের দলের আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়া পদত্যাগ করেছেন। তার স্বাক্ষরে পদত্যাগ সংক্রান্ত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তিনি এ বিষয়ে সব কিছু বলেছেন।”
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে রেজা কিবরিয়া বলেন, “আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসীর সদয় অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে, আমি গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক পদ থেকে পদত্যাগ করছি এবং আমার পদত্যাগ পত্র কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদ বরাবর জমা দিয়েছি।
“এ ছাড়া আমি গণঅধিকার পরিষদের দলীয় সদস্যপদ থেকেও ইস্তফা দিয়েছি। দলের যুগ্ম আহ্বায়ক জনাব কর্নেল (অব) মিয়া মসিউজ্জামানকে ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করছি।”
২০২১ সালের অক্টোবরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ-ডাকসুর সাবেক সভাপতি নুরুল হক নূরের হাত ধরে আত্মপ্রকাশ করে নতুন রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ গণঅধিকার পরিষদ, সেখানে আহ্বায়ক করা হয় গণফোরামের সাবেক নেতা রেজা কিবরিয়াকে।
সদস্য সচিব নূরের সঙ্গে বিরোধে রেজা কিবরিয়ার বিরোধে এ বছর জুনে ভেঙে দুই টুকরো হয় গণঅধিকার পরিষদ। তারপর থেকে এ দলের একাংশের নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন রেজা কিবরিয়া, ছিলেন বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে।
পদত্যাগের সিদ্ধান্ত জানালেও এর কারণ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করেননি রেজা কিবরিয়া। তিনি বলেছেন, “দলের আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালনের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য আমি গণঅধিকার পরিষদের নেতৃবৃন্দের প্রতি গভীরভাবে কৃতজ্ঞ। গত ২ বছর ২ মাস আপনাদের সঙ্গে কাজ করতে পেরে আমি অত্যন্ত সম্মানিত বোধ করছি।”
দল ছাড়লেও বাংলাদেশে যারা ‘গণতন্ত্র, সামাজিক ন্যায়বিচার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায়’ কাজ করছেন, তাদের সঙ্গে কাজ করে যাওয়ার অঙ্গীকার জানিয়েছেন রেজা কিবরিয়া।
তিনি বলেন, “আমি তরুণ প্রজন্মকে নিয়ে অনেক আশাবাদী। আমি মনে করি, তরুণরা বাংলাদেশের অপার সম্ভাবনা সম্পর্কে ধীরে ধীরে সচেষ্ট হয়ে উঠছে।”
অর্থনীতিবিদ রেজা কিবরিয়া আওয়ামী লীগের ১৯৯৬ সালের সরকারে অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়ার ছেলে। সংসদ সদস্য কিবরিয়া বিএনপি আমলে ২০০৫ সালে হবিগঞ্জে বোমা হামলায় নিহত হন।
বাবার রাজনৈতিক ধারার বিপরীতে গিয়ে রেজা কিবরিয়া ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে গণফোরামে যোগ দিয়ে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগের বিপক্ষে ভোট করেছিলেন।
কামাল হোসেন নেতৃত্বাধীন গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন রেজা। কিন্তু দলটি সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসিন মন্টুর সঙ্গে প্রকাশ্যে দ্বন্দ্বে সেই দল ছাড়তে হয়েছিল তাকে।
পরে তিনি নুরের সঙ্গে মিলে গণঅধিকার পরিষদ গঠন করেন। কিন্তু কয়েক মাসের মধ্যে নূরের সঙ্গে দ্বন্দ্বের কারণে পাল্টা-পাল্টি বহিষ্কারের ঘটনা ঘটে। এবার তিনি গণঅধিকার পরিষদও ছাড়লেন।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে রেজা কিবরিয়া বলেন, “আমি ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল ছেড়ে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনীতিতে যোগ দিই এবং ২০২১ সালের অক্টোবর থেকে গণঅধিকার পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার পূর্বে আমি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সরকারি নীতি নিয়ে কাজ করি।
“এক পর্যায়ে আমার মনে হয়েছে যে, নিজ দেশের জনগণের জন্য কাজ করার সময় এসেছে। এ ধরনের সুযোগ হয়তো ভবিষ্যতে নাও আসতে পারে। কিন্তু আমি আমার বাবা শাহ এ এম এস কিবরিয়ার মত জনগণের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখতে চাই।”
আগামীতে নতুন কিছু করার ইংগিত দিয়ে রেজা কিবরিয়া বলেন, “আমি দেশের মানুষ ও গণমাধ্যম, যারা আমাকে বিগত মাসগুলোতে সাহস যুগিয়েছেন ও সহযোগিতা করেছেন, তাদের ধন্যবাদ জানাতে চাই। আশা করি আগামী দিনগুলোতে আমরা দেশেমুক্তি ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একযোগে কাজ করে যাব।”
পুরনো খবর
রেজা কিবরিয়াকে সামনে রেখে নূরের নতুন দল
গণঅধিকার পরিষদের নিবন্ধন পেতে রিট রেজা কিবরিয়ার
গণঅধিকার পরিষদে আমিই আহ্বায়ক, নিবন্ধন আমার নামেই হবে: রেজা কিবরিয়া