“আমি নুরুল হক নুরের নেতৃত্বে চলার জন্য আসিনি ... ওর কথায় আমি চলি না।”
Published : 20 Jun 2023, 06:09 PM
বাংলাদেশ গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নুরদের সিদ্ধান্তের কোনো ভিত্তি নেই বলে দাবি করেছেন দলটির আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়া।
তিনি বলেছেন, নেতৃত্বে এখনও তিনিই আছেন, আর নেতা-কর্মীদের অধিকাংশই রয়েছেন তার সঙ্গে।
আহ্বায়কের পদ থেকে রেজা কিবরিয়াকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নুরদের পক্ষ থেকে জানানোর প্রতিক্রিয়ায় রেজা কিবরিয়ার এই বক্তব্য এসেছে।
কম্বোডিয়ায় থাকা রেজা কিবরিয়া মঙ্গলবার বিকালে ফোনে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমিই বাংলাদেশ গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক আছি, আহ্বায়ক থাকব। আমার সাথে ৭৫ শতাংশ নেতা-কর্মী আছে। সিনিয়ররা আমার সাথে আছেন।”
সরকারবিরোধী অবস্থান নিয়ে দুই বছর আগে রেজা কিবরিয়াকে আহ্বায়ক এবং ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরকে সদস্য সচিব করে গণঅধিকার পরিষদ গঠিত হয়েছিল।
মঙ্গলবার দলটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও দপ্তর সমন্বয়ক শাকিল উজ্জামান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে রেজাকে সরিয়ে যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খানকে ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক করার সিদ্ধান্ত জানান হয়।
রেজা কিবরিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সিনিয়ররা কেউ ওর (নূর) সাথে থাকবে না। সিনিয়র মানে ৩০ বছরের ঊর্ধ্বে কেউ ওর সাথে থাকবে না।”
সোমবার কম্বোডিয়ায় যান রেজা কিবরিয়া, ফিরবেন ২৫ জুন।
সফরের কারণ তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমি এখন কম্বোডিয়াতে আছি। আমাকে ফাইন্যান্স মিনিস্টার (কম্বোডিয়া) ডেকেছেন। আমি ওখানে কাজ করতাম। বাজেটের একটা ইস্যু নিয়ে আলোচনা চলছিল, আমার মতামত চাচ্ছিল, সেজন্য এখানে এসেছি।”
অর্থনীতিবিদ রেজা কিবরিয়া আওয়ামী লীগের ১৯৯৬ সালের সরকারে অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়ার ছেলে। সংসদ সদস্য কিবরিয়া বিএনপি আমলে ২০০৫ সালে হবিগঞ্জে বোমা হামলায় নিহত হন।
বাবার রাজনৈতিক ধারার বিপরীতে গিয়ে রেজা কিবরিয়া ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে গণফোরামে যোগ দিয়ে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগের বিপক্ষে ভোট করেছিলেন।
গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক হলেন রেজা কিবরিয়া
কামাল হোসেন নেতৃত্বাধীন গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন রেজা। তবে দ্বন্দ্বের কারণে সেই দল ছাড়তে হয়েছিল তাকে। পরে তিনি নুরের সঙ্গে মিলে গণঅধিকার পরিষদ গঠন করেন।
গণঅধিকার পরিষদ গঠিত হয় সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনের ফোরাম ছাত্রঅধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ধারাহিকতায়।
ছাত্রঅধিকার পরিষদের প্যানেল থেকেই ডাকসুতে ভিপি নির্বাচিত হন নুর। তারপর থেকে তিনি সরকারের বিরোধিতায় সরব, এখন বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে রয়েছেন তিনি।
যে রাশেদ খানকে গণঅধিকার পরিষদের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক করার ঘোষণা দিয়েছে নুরের পক্ষ, সেই রাশেদ খানও ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক ছিলেন।
নূরের সঙ্গে বিরোধের কারণ ব্যাখ্যা করে রেজা কিবরিয়া বলেন, “আমাদের এখানে (গণঅধিকার পরিষদ) গণ্ডগোল হয়েছে মূলত দুই-তিনটা বিষয় নিয়ে। একটা হচ্ছে, ইনসাফ কায়েম কমিটির মিটিংয়ে আমি বক্তৃতা দিতে কেন গিয়েছি… এখানে এসে কৈফিয়ত চেয়েছে। আমার উত্তর হল- আমি নুরুল হক নুরের নেতৃত্বে চলার জন্য আসিনি। আমার অভিজ্ঞতা ও আমার বয়স ওর চেয়ে বেশি আর ওর কথায় আমি চলি না… এটা সাফ কথা।
“আপনারা খেয়াল করবেন, সরকারবিরোধী হলেই আমি আছি। আমি ইসলামিক আন্দোলনের মিটিংয়ে গিয়েছি, বিএনপির মিটিংয়ে গিয়েছি, এবি পার্টির মিটিংয়ে গিয়েছি। আমার কোনোটাতেই আপত্তি নাই। সরকারবিরোধী দলেই আমি আছি।”
নুরের আর্থিক লেনদেন নিয়ে প্রশ্ন তুলে রেজা বলেন, “উনার টাকা-পয়সা লেনদেন নিয়ে প্রশ্ন উঠাতে তিনি ক্ষেপে গেছেন। তিনি প্রবাসীদের কাছ থেকে কী টাকা পান, কী করে টাকা নেন, সেটা নিয়ে কিছু প্রশ্ন উঠেছে। আর ইসরাইলিদের সাথে উনার কী সম্পর্ক, টাকার লেনদেন হয়েছে কি না, এই প্রশ্ন করাতে উনি ক্ষেপে গেছেন।
“ইসরাইলিদের সাথে কেন দেখা করেছেন, তার সঠিক জবাব দিতে পারেননি। আপনারা উনাকে জিজ্ঞাসা করেন, কেন ইসরাইলিদের সাথে দেখা করেছে? তার দুইটা কারণ থাকতে পারে। একটা হল ইসরাইলিরা বলেছে যে, রাজনৈতিকভাবে তোমাদের সমর্থন করব, দ্বিতীয় হতে পারে যে তোমাদের টাকা দেব। এগুলোর মধ্যে কোনোটা করেছে। আমি তৃতীয় কোনো কারণ দেখতে পাচ্ছি না। কারণ ইসরায়েলিরা একটা জালেম সরকার। তাদের সাথে আমরা অবস্থান নেব কেন? অনুপম বসু বলে একজন ইন্ডিয়ান জার্নালিস্ট, তার সাথে কী সম্পর্ক? এটাও প্রশ্ন উঠেছে। এটাতে সে রেগে গেছে এবং আমাকে তখন থেকে বহিষ্কার করার জন্য অস্থির হয়ে গেছে।”
গণঅধিকার পরিষদের নেতৃত্ব থেকে রেজা কিবরিয়াকে বাদ দেওয়ার ঘোষণা নুরপন্থিদের
আহ্বায়ককে এভাবে সরানো যায় না দাবি করে রেজা বলেন, “এভাবে সরানো তো গঠনতন্ত্রে নেই। কিন্তু সে তো ইচ্ছামতো কাজ করছেন। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দলের নিবন্ধন আমার নামে আসবে, ওর নামে আসবে না।”
গণঅধিকার পরিষদ নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পেতে ইতোমধ্যে আবেদন করেছে। তবে এখনও তাদের নিবন্ধন দেওয়া হয়নি।
রেজা বলেন, “কোনো দল আজ পর্যন্ত দলের প্রধানকে সরিয়ে সেক্রেটারি দখল করতে পারেনি। চেষ্টা করতে পারে, কিন্তু এটা সম্ভব না। দলের নিবন্ধন যার নামে হয়, যে দলের প্রধান তাকে সরিয়ে অন্য কাউকে আনা সম্ভব না। আমাদের ইলেকশন কমিশন এ ব্যাপারে জাজমেন্ট দিয়েছে। চেষ্টা করুক, এটা সম্ভব না।”
তিনি বলেন, “আমি আমার দলের লোকজন নিয়ে কাজ করব। আমার ধারণা, ৭৫ শতাংশ লোক আমার সাথে থাকবে।
“আমি দেশের বাইরে আছি। আমি কয়েকটা জিনিস সই করে রওনা দিচ্ছি। বাকিগুলো ২৫ তারিখ মাঝ রাতে ফিরে করে ফেলব।”