রেজা কিবরিয়াকে সামনে রেখে নূরের নতুন দল

‘মানবিক ও প্রগতিশীল’ বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ-ডাকসুর সাবেক সভাপতি নুরুল হক নূরের হাত ধরে নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ হলো।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Oct 2021, 10:22 AM
Updated : 17 Nov 2021, 08:54 AM

‘বাংলাদেশ গণ অধিকার পরিষদ’ নামে দলটির যে কমিটি হয়েছে, তাতে নূর সদস্য সচিব; গণফোরামের সাবেক নেতা রেজা কিবরিয়া আহ্বায়ক।

প্রাথমিকভাবে গঠিত ৮৩ সদেস্যর আহ্বায়ক এই আহ্বায়ক কমিটির বাকি সবাই নূরের সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্র, যুব, শ্রমিক অধিকার পরিষদের বর্তমান ও সাবেক নেতা।

মঙ্গলবার রাজধানীতে এক সংবাদ সম্মেলনে নতুন দল গঠনের ঘোষণা দিয়ে ডাকসুর সাবেক ভিপি নূর বলেন, “আমরা যখন একটি রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা দিচ্ছি তখন পৃথিবী দুইটি বড় সংকট মোকাবিলা করছে।

“আজকে সবার সম্মুখে দাঁড়িয়ে এই প্রত্যয় ঘোষণা করছি যে, আমরা নানান ক্ষেত্রে সৃষ্টি হওয়া বহুস্তরবিশিষ্ট বৈষম্য লাঘব করে বাংলাদেশকে মানবিক উন্নয়নের প্রগতিশীল ধারায় প্রতিষ্ঠা করব ইনশাল্লাহ।”

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘বাংলাদেশ গণ অধিকার পরিষদ’ থেকে ৩০০ আসনে প্রার্থী দাঁড় করানোর পরিকল্পনার কথা জানান আহ্বায়ক রেজা।

সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “আমরা নির্বাচনকালীন সময়ে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার চাই। এটা ছাড়া নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কোনো মানে হয় না।”

নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রশ্নে সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলেও জানান নবগঠিত দলটির আহ্বায়ক।

পুরানা পল্টনের কালভার্ট রোডে প্রতীম-জামান টাওয়ারে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

‘জনতা অধিকার, আমাদের অধিকার’ এই শ্লোগান সামনে রেখে গণতন্ত্র, ন্যায় বিচার, অধিকার ও জাতীয় স্বার্থ- এই চার মূলনীতির ভিত্তিতে ‘বাংলাদেশ গণ অধিকার পরিষদ’ পরিচালিত হবে বলে জানানো হয়। 

দলটির যুগ্ম আহবায়ক ‍মুহাম্মদ রাশেদ খানের উত্থাপিত ২১ দফা রাজনৈতিক কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে দুর্নীতি প্রতিরোধ, ক্ষমতার ভারসাম্য, ন্যায় বিচার,সুশাসন, ভোটাধিকার, সংখ্যালঘু জাতি সত্ত্বা ও ধর্মাবলম্বী, দখল, দুষণ প্রতিরোধ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ ও সামাজিক নিরাপত্তা অন্যতম।

২০১৮ সালে ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের’ ব্যানারে সরকারি চাকুরিতে কোটা সংস্কারের আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়ে আলোচনায় আসেন সংগঠনটির অন্যতম যুগ্ম আহ্বায়ক নূর। সেসময় বেশ কয়েকবার তার উপর হামলাও হয়। পরের বছর ডাকসু নির্বাচনে সহসভাপতি (ভিপি) নির্বাচিত হন তিনি।

নতুন দল গঠনের পূর্ব পর্যন্ত বাংলাদেশে ছাত্র-যুব ও শ্রমিক অধিকার পরিষদের সমন্বয়ক ছিলেন নূর। বিভিন্ন সময়ে নিপীড়ন-নির্যাতন, হামলার শিকার হন। তার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলাও রয়েছে।

আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক অর্থমন্ত্রী প্রয়াত শাহ এএমএস কিবরিয়ার ছেলে অর্থনীতিবিদ ড. রেজা কিবরিয়া আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) চাকুরি করেছেন দীর্ঘদিন।

২০১৮ সালে ওই চাকুরি ছেড়ে বাংলাদেশে ফিরে ড. কামাল হোসেন গণফোরামে যোগ দিন এবং কিছু দিনের মধ্যে দলের সাধারণ সম্পাদক হন। কিন্তু দলের ভেতরে দ্বন্দ্বের কারণে ফেব্রুয়ারিতে তিনি পদত্যাগ করেন। তারপর একরম রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয়ই ছিলেন তিনি।

লড়াইয়ে ‘শেখ হাসিনার কৌশল’ অনুসরণ

সরকাবিরোধী লড়াইয়ে ৯১ সালের শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ যে কৌশল অবলম্বন করেছিল, এবার ভোটের অধিকার আদায়ে সে পথই অনুসরণ করা হবে বলে জানান ‘বাংলাদেশ গণ অধিকার পরিষদের’ নেতৃত্ব।

নতুন রাজনৈতিক দল হিসেবে আন্দোলনের কৌশল, ‘মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তির’ সঙ্গে জোটবদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনা আছে কিনা- এসব নিয়ে সাংবাদিকরা জানতে চান।

জবাবে রেজা কিবরিয়া বলেন, “আমরা এই ব্যাপারে এখন যে প্রধানমন্ত্রী (শেখ হাসিনা) আছেন, ওনার (কাছ থেকে) শিক্ষা নেব। উনি যেভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ১৯৯১ সালে কাজ করেছেন, আমরা সেভাবে অগ্রসর হওয়ার চিন্তা করছি।

“যারা বাংলাদেশের জনগণের ভোটের অধিকার আদায়ের জন্য লড়াই করতে রাজি আছেন, আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলব, আলোচনা করব, তাদের সঙ্গে কাজ করব। এ ব্যাপারে কারও আপত্তি থাকতে পারে। তাতে আমাদের কিচ্ছু করার নেই।”

স্বৈরশাসক এইচএম এরশাদের পতনের পর ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি সরকার গঠন করে। বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের আন্দোলনের এক পর্যায়ে রাজপথে যুগপৎ কর্মসূচিতে দেখা গিয়েছিল জামায়াতে ইসলামীকে।  

নির্বাচন কমিশন নিয়ে আন্দোলন ‘গুরুত্বপূর্ণ’ নয় মন্তব্য করে রেজা বলেন, “দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হলে অবশ্যই একটা নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার থাকতে হবে। আমরা একটা নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার চাই। জাতিসংঘের পরিচালিত একটা নির্বাচনের ব্যবস্থা চাই। এটা ছাড়া নির্বাচনে নামার বা অংশ নেওয়ার কোনো মানে হয় না।”

২০১৮ সালের নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে প্রয়াত শাহ এএমএস কিবরিয়ার নির্বাচনী আসন হবিগঞ্জ-১ আসনে অংশ নেওয়া তৎকালীন গণফোরামের প্রেসিডিয়ামের রেজা কিবরিয়া বলেন, “যারা আগে প্রতারণা করেছে দুই বার (২০১৪ ও ২০১৮ সাল) তারা তৃতীয় বার যে প্রতারণা করবে না আমি এটা ভরসা করতে পারি না। আমরা প্রতারকদের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাবো না- এটা আমাদের পরিষ্কার কথা।”

দলের সদস্য সচিব নূরুল হক নুর অভিযোগ বলেন, “আজ দেশে সভা-সমাবেশ করার অধিকারও নেই, কথা বলার স্বাধীনতা নেই। আজকের অনুষ্ঠান করার জন্য আমরা আবেদন করেছিলাম বড় মিলনায়তন পাইনি। আমরা এহেন আচরণের নিন্দা জানাই।”

নতুন রাজনৈতিক দলের চমক বা নতুনত্ব কী- জানতে চাইলে সংগঠনটির সদস্য সচিব ডাকসুর সাবেক ভিপি নূর বলেন, “বাংলাদেশে বড় দুইটি দলের রাজনীতি পরিবারকেন্দ্রিক। কারও বাবার পরে মেয়ে, কারও স্বামীর পরে স্ত্রী। আমাদের নতুন দলের নতুনত্ব এখানেই।

“আমাদের দল কখনো রেজা কিবরিয়া ও নুরুলের দল হবে না। এখানে গণতান্ত্রিক উপায়ে পরবর্তী নেতৃত্ব ঠিক হবে। আমরা গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক রূপদানের কথা বলছি।”

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী  বলেন, ‘‘ রেজা কিবরিয়া অক্সফোর্ডের পড়ুয়া উচ্চশিক্ষিত। আর নুরুলরা স্বপ্ন দেখাতে জানে, স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পররে। এই তরুণদের সংগ্রামের ঐতিহ্য আছে।

‘‘ এই তরুণরা তোমরা সততা প্রতীক, তোমরাই নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারো। নতুন এই উদ্যোগকে আমি স্বাগত জানাই।”