“খালেদা জিয়াকে যদি মুক্ত করতে হয় তাহলে আদালতের দরজায় যেতে হবে, অথবা মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা ভিক্ষা চাইতে হবে।”
Published : 29 Jun 2024, 09:30 PM
আন্দোলনের মাধ্যমে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তির কোনো সুযোগ নেই বলে জানিয়ে দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
শনিবার বিকালে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের আয়োজনে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনায় তিনি এ কথা বলেন।
ক্ষমতাসীন দলের নেতা বলেন, “খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আন্দোলন করে লাভ নেই।”
আন্দোলনে সহিংসতার উপাদান যুক্ত হলে ‘খবর আছে’ জানিয়ে তিনি বলেন, “আবারও খেলা হবে। খেলা হবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে, অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে, লুটপাটের বিরুদ্ধে, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে।”
এদিন বিএনপিও আওয়ামী লীগের সমাবেশের অদূরে নয়া পল্টনে বড় জমায়েত করে। রাজধানীতে দুটি রাজনৈতিক দলের একই দিনে সমাবেশের এই ধারা গত জাতীয় নির্বাচনের আগে থেকে দেখে আসছে দেশ।
বিএনপির সমাবেশ থেকে খালেদা জিয়াকে মুক্তি না দিলে পরিণতির জন্য অপেক্ষায় থাকার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সরকার পতনের আন্দোলনে শামিল হতে অন্য দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বলেছেন, ‘সময় বারবার আসে না।’
দুর্নীতির দুই মামলায় ১৭ বছরের সাজা স্থগিতের পর ২০২০ সালের ২৫ মার্চ ছয় মাসের জন্য মুক্তি পান সাবেক প্রধানমন্ত্রী। সাময়িক মুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে আরে প্রতিবার মেয়াদ বাড়িয়ে যাচ্ছে সরকার।
শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে এই চার বছরে বিএনপি নেত্রী বেশ কয়েকবার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এখনও তিনি এভারকেয়ার হাসপাতালে আছেন।
গত ২৩ জুন খালেদা জিয়ার হৃদযন্ত্রে পেসমেকার বসানোর পর তার মুক্তির দাবিতে আন্দোলন নামার সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি। গত ২৬ জুন ঘোষণা হয় তিন দিনের কর্মসূচি।
আওয়ামী লীগের এই কর্মসূচিকে পাল্টাপাল্টি বলতে নারাজ ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, “আমরা বলেছিলাম বছরব্যাপী উদ্যাপন করব। সেখানে খবর হয় আমরা নাকি পাল্টাপাল্টি করছি। গতকাল আমরা সাইকেল র্যালি করেছি, বিএনপির কি কিছু ছিল? তাহলে কেন এই অপবাদ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে দিচ্ছেন?
“আমরা সারা বছর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্যাপন করব। আমাদের কেন্দ্র থেকে ইউনিয়ন পর্যন্ত এই কর্মসূচি পালন করা হবে। অগাস্ট মাসের পরে জেলা পর্যায়ে সমাবেশ হবে। সে সমাবেশে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বক্তব্য রাখবেন।’
বিএনপির আন্দোলনে জনগণের সাড়া নেই দাবি করে আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, “বিএনপি বড় বড় কথা বলে। নেতাদের আন্দোলনে তত জোড় নেই, মুখের বিষে যত জোড়। তাদের মুখে বিষ উগ্র। তাদের আন্দোলন ভুয়া, এই আন্দোলনে জুঁই ফুলে গান।”
তারেক রহমান এখন বিএনপিতে আতঙ্কের নাম বলেও মন্তব্য করেন কাদের। বলেন, “মধ্যরাতে টেমস নদীর পার থেকে ফরমান আসে। একজন গেল, আরেকজন এল, মধ্যরাতের ফরমান। তারেক রহমানের এই ফরমানে ফখরুল ইসলাম, গয়েশ্বর বাবু কোথায় যান? কেউ জানে না।
“লন্ডনে বসে কর্মসূচি দেয়… মেইড ইন লন্ডন। বাংলাদেশের জনগণ এই মেইড ইন লন্ডন কর্মসূচি মানে? না, মানে না। খেলা কিন্তু হবে, ছেড়ে দেয়া হবে না।”
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক বলেন, “খালেদা জিয়ার মুক্তি আমরা (সরকার) দেব না। এটা আইন, কোর্টের বিষয়। কোর্ট যদি মুক্তি দেয়, আমাদের আপত্তি নাই। আন্দোলন করে, সন্ত্রাস করে, অগ্নিসন্ত্রাস করে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে পারবেন না।”
দলের নীতি নির্ধারণী সর্বোচ্চ পর্ষদের আরেক সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, “আমরা সংসদে আছি, সরকারে আছি, রাজপথেও আছি। তবে রাজপথে একটু বেশি থাকতে হবে, কারণ ওই স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি জামায়াত-শিবির এবং বিএনপি মিলে আবার ষড়যন্ত্র করতে চেষ্টা করবে। আপনাদের বলিষ্ঠ অবস্থানের কারণে অতীতে তাদের কোনও ষড়যন্ত্রই সফল হয় নাই।”
কামরুল ইসলাম বলেন, “তারা খালেদা জিয়ার মুক্তি চায় না বলেই আদালতের দরজায় যায় না। আইনি প্রক্রিয়া ছাড়া বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি সম্ভব নয়।শেখ হাসিনা মানবতা দেখিয়ে আজকে তাকে (খালেদা জিয়াকে) বাড়িতে মুক্ত মানুষের মতো থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। চিকিৎসা দেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন।
“খালেদা জিয়াকে যদি মুক্ত করতে হয় তাহলে আদালতের দরজায় যেতে হবে, অথবা মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা ভিক্ষা চাইতে হবে। আন্দোলন করে কোনো লাভ নাই।”
আন্দোলনের হুমকি না দিতে বিএনপিকে পরামর্শ দিয়ে সাবেক খাদ্যমন্ত্রী বলেন, “পরিষ্কার করে বলতে চাই, আবার যদি সন্ত্রাসের পথে হাঁটেন, ‘আগুন সন্ত্রাস’ করেন, দেশ, রাষ্ট্র, জনগণের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেন, দাঁতভাঙা জবাব দেওয়া হবে।”
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, “আইনিভাবে লড়াই করেন। আইনি লড়াইয়ে হেরে গেলে মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে যাওয়ার সুযোগ আছে। আপনারা সেদিকে যাচ্ছেন না। আপনারা সরকারকে অভিযুক্ত করে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে চান।
“বিএনপি আসলে খালেদা জিয়ার সুস্থতা চায় না। তারা চায় এই অসুস্থতা নিয়ে রাজনীতি করে আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করতে।”