আন্দোলনকারীদের ভাষ্য, তাদের জরিপে ৫ হাজার ৮৩৪ জন শিক্ষার্থী অংশ নেন। এর মধ্যে ৫ হাজার ৬৮৩ জন রাজনীতির বিপক্ষে মত দিয়েছেন।
Published : 03 Apr 2024, 09:33 PM
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয় হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে ই মেইলে জরিপ চালিয়ে ৯৭ শতাংশই ক্যাম্পাসে রাজনীতির বিরুদ্ধে বলে দাবি করেছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
তাদের ভাষ্য, গত দুদিন তারা শিক্ষার্থীদের প্রাতিষ্ঠানিক ই-মেইল ব্যবহার করে ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতির পক্ষে-বিপক্ষে অনলাইনে ভোট নেন।
এতে সর্বমোট ৫ হাজার ৮৩৪ জন শিক্ষার্থী অংশ নেন। এর মধ্যে ৫ হাজার ৬৮৩ জন রাজনীতির বিপক্ষে মত দিয়েছে, যা মোট শিক্ষার্থীর ৯৭ শতাংশ।
বাকি ১৫১ জন এই ই মেইলের জবাব দেননি। এ কারণে আন্দোলনকারীরা ধরে নিয়েছেন, তারা হয়ত তাদের দাবির পক্ষে নন।
বুধবার সন্ধ্যায় বুয়েটের ড. এম এ রশীদ প্রশাসনিক ভবনের সামনে সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানান আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর বুয়েটের শেরে বাংলা হলে তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যায় ছাত্রলীগের একদল কর্মীর নাম আসে। তাদের বিচারের আওতায় আনার পাশাপাশি ক্যাম্পাস ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করে প্রশাসন।
তবে সাড়ে চার বছর পর ছাত্রলীগ আবার সেখানে রাজনীতি চালুর পক্ষে জোরাল অবস্থান নিয়েছে। হাই কোর্টে একটি রিট আবেদনের পর রাজনীতি নিষিদ্ধ করে আদেশ স্থগিত হওয়ায় রাজনীতি চালুর পথ খুলেছে।
ছাত্রলীগের দাবি, নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতি বন্ধ থাকার ‘সুযোগ নিয়ে’ জামায়াতপন্থি ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবির এবং নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহরীর বুয়েটে সক্রিয় হয়েছে।
যারা রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি নিয়ে সোচ্চার, তাদের মধ্যে ছদ্মবেশী শিবির ও হিযবুত অনুসারীরাও আছেন বলে দাবি সরকার সমর্থক ছাত্র সংগঠনটির।
উচ্চ আদালতের রায় ছাত্রলীগের জন্য স্বস্তিদায়ক হলেও বিপক্ষের শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি ছাড়ছেন না। বুয়েটকে ছাত্র রাজনীতি মুক্ত রাখতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে ‘খোলা চিঠিও’ দিয়েছেন তারা। সেই সঙ্গে নানা কর্মসূচি পালন করে আসছেন তারা।
এই পরিপ্রেক্ষিতে এই জরিপটি চালানো হয়।
তাদের লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, “আমাদের অবস্থানের যথার্থতা এখানে প্রমাণিত। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা নিজেদের ক্যাম্পাসে সব দলের ও মতের লেজুড়বৃত্তিক সাংগঠনিক রাজনীতি এবং মৌলবাদী দলসমূহের বিপক্ষে আছি এবং থাকব।”
রাজনীতি নিষিদ্ধের এই দাবি কোনো একটি ছাত্র সংগঠনের জন্য নয় জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, “আমাদের এই অবস্থান সব দল ও মতের ছাত্র রাজনীতির ক্ষেত্রেই সমানভাবে প্রযোজ্য। বুয়েটে বর্তমানে কোনো লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনৈতিক দলেরই কার্যক্রম নেই।”
নিষিদ্ধ সংগঠনের বিষয়ে বলা হয়, “আমরা নিষিদ্ধ সংগঠনগুলোর অপতৎপতার বিরুদ্ধে দেশের আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সোচ্চার ভূমিকার প্রতি সর্বদাই আস্থাশীল এবং সহযোগিতাপূর্ণ।”
ছাত্রলীগমনাদের ‘হুমকি’ বানোয়াট দাবি
হিযবুত তাহরীর ও ছাত্রশিবির নিয়ে কথা বলায় ছাত্রলীগ সমমনা ৬ জনকে হত্যার হুমকি পাচ্ছেন জানিয়ে উপাচার্যের কাছে যে লিখিত আবেদন করেছেন- সে প্রসঙ্গে কথা বলেন ছাত্র রাজনীতির বিরুদ্ধে থাকা শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি, এই অভিযোগ ‘বানোয়াট ও ভিত্তিহীন।’
একজন শিক্ষার্থী বলেন, “রাজনৈতিক মহল দ্বারা প্রভাবিত হাতেগোনা গুটিকতক বর্তমান এবং সাবেক শিক্ষার্থী সাধারণ শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগ আনছে।
“প্রমাণ ছাড়া এমন বানোয়াট অভিযোগেরও তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। আশা করছি, তারা ক্ষদ্র স্বার্থচিন্তা থেকে সরে এসে বৃহত্তর স্বার্থকে গ্রহণ করে নেবে।”
ছাত্রদলের সংহতি প্রত্যাখ্যান
শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সংহতি প্রকাশ প্রসঙ্গে একজন বলেন, “ছাত্রদলের এমন বক্তব্যকে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করি এবং তাদের এই রাজনৈতিকভাবে মদদপুষ্ট সংহতিকে আমরা বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা প্রত্যাখান করছি।
“পরবর্তীতে অন্য কোনো সংগঠনও যদি এমন বক্তব্য দিয়ে আমাদের আন্দোলনের দাবি এবং অবস্থানকে ঘোলাটে করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়, তবে আমরা তাদেরকেও প্রত্যাখ্যান করব।”
আরো পড়ুন:
বুয়েটকে ‘রাজনীতিমুক্ত’ রাখতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে শিক্ষার্থীদের আর্জি
ছাত্র রাজনীতির পথ খুলল বুয়েটে, শিক্ষার্থীদের শঙ্কা কাটবে কীভাবে
বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি থাকবে কি না, যা বললেন বুয়েট উপাচার্য
আদালতের আদেশ ‘শিরোধার্য’: বুয়েট উপাচার্য
রাজনীতির বাধা কাটার পর ‘উচ্ছ্বসিত’ বুয়েটের একদল শিক্ষার্থী
বুয়েটে আন্দোলনকারীদের শাস্তি চাইলেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতারা