সরকারের পক্ষে সাংবাদিকের বক্তব্য ‘পীড়া দেয়’ ফখরুলকে

“একটা জিনিস আমাদেরকে কষ্ট দেয়, পীড়া দেয় যখন দেখি আপনাদেরই সতীর্থ অনেকেই আছেন যারা অবলীলায় এই ব্যবস্থাটাকে (সরকার) সমর্থন করে এবং বেশ জোর গলায় বলেন।”

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 May 2023, 02:46 PM
Updated : 31 May 2023, 02:46 PM

বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন ইতিহাসের ‘সবচেয়ে খারাপ অবস্থায়’ রয়েছে দাবি করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এর মধ্যেও সাংবাদিকদের একাংশ সরকারের পক্ষে কথা বলেন, বিষয়টি তাকে পীড়া দেয়, তিনি কষ্ট পান।

বুধবার ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের একটি অংশের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব এ মন্তব্য করেন।

দীর্ঘ বক্তব্যে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে ‘লড়াইয়ে’ সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধ সহযোগিতাও চান বিএনপি নেতা। তিনি বলেন, পাকিস্তান আমল থেকে নানা সময় এই কাজ করেছেন গণমাধ্যমকর্মীরা।

“একটা জিনিস আমাদেরকে কষ্ট দেয়, পীড়া দেয়, যখন দেখি আপনাদেরই সতীর্থ অনেকেই আছেন যারা অবলীলায় এই ব্যবস্থাটাকে (সরকার) সমর্থন করে এবং বেশ জোর গলায় বলেন।

“এই যে মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করা হচ্ছে, স্বাধীন সাংবাদিকতাকে যে হরণ করা হচ্ছে, ভিন্নমত পোষণ করবার অধিকারকে যে কেড়ে নেওয়া হচ্ছে, এমনকি ন্যূনতম যে অধিকার, ভোট দেওয়ার অধিকার সেটাও কেড়ে নেওয়া হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে তারা তো কোনো কথা বলেনই না, বরঞ্চ তারা বিভিন্ন রকম যুক্তিতর্ক খাড়া করেন।

“সেই যুক্তিতর্ক দিয়ে এখন যারা শাসন করছে, শোষণ করছে, যারা আওয়ামী লীগের নাম ধারণ করে আজকে সমগ্র বাংলাদেশকে একটা কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্রে পরিণত করতে যাচ্ছে, তাদেরকে তারা সমর্থন করে চলেছেন এককভাবে।”

জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের দ্বিবার্ষিক সাধারণ সভা হয় এদিন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দুপুরে কর্ম অধিবেশন হয়। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ হবে।

এ নির্বাচনে জাহাঙ্গীর আলম প্রধান ও শহিদুল ইসলাম এবং এরফান হক নাহিদ ও খুরশীদ আলমের নেতৃত্বে দুটি প্যানেল অংশ নিচ্ছে। সভাপতি, সহসভাপতি, সাধারণ সস্পাদক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক, কোষাধ্যক্ষসহ ১১টি পদে ৪৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

‘এনাফ ইজ এনাফ’

মির্জা ফখরুল বলেন, “আওয়ামী লীগ সবসময় জনগণকে মিথ্যা কথা বলে প্রতারণা করে, ভ্রান্ত পথে পরিচালিত করতে চায় তাদেরকে স্পষ্ট করে বলে দিতে হবে এনাফ ইজ এনাফ।

“মানুষকে অনেক কথা বলে বোকা বানিয়েছ, তাদেরকে শোষণ করেছ, রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করেছ….। আজকে অর্থনীতিবিদরা বলছেন এখন যে সময় যাচ্ছে বাংলাদেশের জন্য এরকম খারাপ সময় কখনো আসেনি, এটাই সত্য।”

বাংলাদেশে স্বাধীন সাংবাদিকতার ‘কোনো জায়গা নেই’ মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, “এখন বাংলাদেশ পুরোপুরিভাবে একটা কর্তৃত্ববাদী শাসকদের হাতে পড়ে গণতন্ত্রের যে মূল স্তম্ভ, সেই ফ্রিডম অব প্রেস, ফ্রি মিডিয়া তাকে নিয়ন্ত্রণ করে ফেলেছে তাদের প্রয়োজনে।… তারা সবাই একবাক্যেই এ কথা বলছেন যে, বাংলাদেশে গণতন্ত্র নেই, মুক্ত সাংবাদিকতা নেই, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নেই, ভিন্নমত সহ্য করবার মত এখানকার শাসকগোষ্ঠীর কোনো রকমের মানসিকতা নেই।”

সরকারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “প্রতিবাদ না করলে, প্রতিবাদে সোচ্চার না হলে, রুখে না দাঁড়ালে কখনো দাবি আদায় করা যায় না।

“এখানে কখনই নির্বাচন সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য হতে পারে না এবং কখনও মানুষ নিজের ইচ্ছায় নিজের মত প্রকাশ করতে পারবে না যদি আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকে।”

‘আগেও সংগ্রামে ছিলেন, এবারও নামুন’

বিএনপির যে আন্দোলন, সেই ‘সংগ্রামে’ সাংবাদিকদেরও পাশে চেয়েছেন দলটির মহাসচিব।

তিনি বলেন, “আমরা পাকিস্তান আমল থেকে শুরু করে এই বাংলাদেশ আমলে অনেক সময় পার করেছি। আমরা রাজনীতির সময় দেখেছি, সাংবাদিকতা দেখেছি, আমরা আপনাদের ভূমিকা দেখেছি। কীভাবে আপনারা স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে করেছেন, কীভাবে আপনারা স্বৈরতন্ত্রকে বিতাড়িত করবার জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন, কীভাবে একটা দেশকে স্বাধীন করবার জন্যে উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন, কীভাবে গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করবার জন্য আপনারা এখনো লড়াই করে চলেছেন এবং জীবন দিয়ে চলেছেন।”

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কাদের গণি চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং বাছির জামাল, শাহজাহান সাজু, দিদারুল আলম দিদারের যৌথ সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল হালিম, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি এম আবদুল্লাহ, মহাসচিব নুরুল আমিন রোকন, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বক্তব্য দেন।

সংগঠনের সাবেক সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, এম এ আজিজ, আবদুল হাই শিকদার, এলাহী নেওয়াজ খান সাজুসহ সাবেক নেতাদের অনুষ্ঠানে সন্মাননা দেওয়া হয়।