বিদ্যুৎ সংকট থেকে দৃষ্টি সরাতে সংলাপ নিয়ে নানা কথা: ফখরুল

বিএনপির সঙ্গে সংলাপে বসার সম্ভাবনা নিয়ে ১৪ দলীয় জোটের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদের বক্তব্যের প্রসঙ্গ ধরে মির্জা ফখরুলের এ মন্তব্য।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 June 2023, 11:57 AM
Updated : 8 June 2023, 11:57 AM

সংলাপ প্রশ্নে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য ‘জনদৃষ্টি ভিন্নখাতে নেওয়ার কৌশল’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বৃহস্পতিবার এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, “এরা (আওয়ামী লীগ) একটা জিনিস খুব ভালো জানে, ডাইভারশন করা। যখন মানুষ বিদ্যুৎ নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ছে, তখন আরেকটা ইস্যু তৈরি করে ফেলে যেন এটাকে ডাইভার্ট করা যায়।

বিএনপির সঙ্গে সংলাপে বসার সম্ভাবনা নিয়ে ১৪ দলীয় জোটের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদের বক্তব্যের প্রসঙ্গ ধরে এ কথা বলেন ফখরুল।

সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “এই সময়ে তো আপনারা সবাই মেতে উঠলেন আমির হোসেন আমু, তার বক্তব্য নিয়ে। সবাই ছুটে গেলেন… বাবা কী জানি কী হয়ে হচ্ছে?”

মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে ১৪ দলীয় জোটের এক সমাবেশে এর সমন্বয়ক আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু বলেছেন, “আমরা বিএনপির সঙ্গে মুখোমুখি বসে আলোচনা করে দেখতে চাই। প্রয়োজনে অতীতের মতো জাতিসংঘের প্রতিনিধি দলের মধ্যস্থতায়ও সেই আলোচনা হতে পারে।”

কিন্তু পরদিন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, “আলোচনার বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি। আমাদের নিজেদের সমস্যা আমরা আলোচনা করব, প্রয়োজন হলে নিজেরাই সমাধান করব।”

জাতিসংঘের মধ্যস্থতার কথাও উড়িয়ে দেন কাদের। তিনি বলেন, "এখন বাইরের বিষয়টা কেন বার বার আসে? জাতিসংঘ কেন মধ্যস্থতা করবে? জাতিসংঘ হস্তক্ষেপ করবে এমন কোনো রাজনৈতিক সংকট এই স্বাধীন বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত হয়নি।”

দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেন, “আমির হোসেন আমু আমাদের দলের অন্যতম জ্যেষ্ঠ নেতা। তিনি যে বক্ত্যবটি দিয়েছেন সেটি তার ব্যক্তিগত বক্তব্য।…এটি দল, সরকার এমনকি ১৪ দল কোথাও এ নিয়ে আলোচনা হয়নি।”

কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান আবার বলেন, “জনগণের ক্ষমতা অব্যাহত রাখতে হলে সবার সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। তাই আলোচনার বিকল্প কিছু নাই।"

বুধবার দিনভর দুই রকম আলোচনার পর আমু নিজেই তার কথা উল্টে বলেন, “কাউকে আহ্বান করার সুযোগ নেই, কাউকে আহ্বান করা হয় নাই। এটা আওয়ামী লীগের বাড়ির দাওয়াত না যে দাওয়াত করে খাওয়াব। আলোচনার জন্য কাউকে বলা হয়নি, কাউকে দাওয়াত দেয়া হয় নাই।”

এ প্রসঙ্গ ধরে মির্জা ফখরুল বৃহস্পতিবার বলেন, “আমাকে এক সাংবাদিক ভাই জিজ্ঞাসা করলেন, এ নিয়ে আপনার কি কোনো মতামত আছে… কী বিষয় ভাই? আমির হোসেন আমু। আমির হোসেন আমু কে? উনি আওয়ামী লীগের কী এখন? উনাকে ছোট করছি না, উনি তো আসলে আওয়ামী লীগের স্পোকসম্যান না। উনি উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য। এখন প্রেসিডিয়াম সদস্যও না। তারপরেই আওয়ামী লীগের স্পোকসম্যান বললেন যে, এটা তাদের বক্তব্য না।

“আবার দেখা গেল বিকালের দিকে হোম মিনিস্টার বলছেন, সংলাপের কোনো বিকল্প নাই। একটাই উদ্দেশ্য আপনাকে ডাইভার্ট করা। আপনার যে লক্ষ্য, আমি একটা নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকার ছাড়া নির্বাচনে যাব না, ওইখান থেকে আপনাকে ডাইভার্ট করা… আর বিদ্যুতের যে সমস্যা সেখান থেকেও ডাইভার্ট করা। যত ডাইভারশন করেন… জনগণ বোঝে সব।”

‘কথা আগের মত, পদত্যাগ করুন’

নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকার ছাড়া কোনো বিকল্প নেই মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, এটাকে যে নামেই ডাকেন… ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) বলতেন, তোমরা এটাকে তত্ত্বাবধায়ক বল আর যাই বল, নির্বাচনের সময়ে আমার একটা নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকার দরকার।

“আমাদের কথা সেই আগের মতো… পদত্যাগ করেন, ওই ব্যবস্থাটা দিন। আমরা দেখে নেবো কী হবে না হবে।”

এ সময় তিনি বলেন, “দেশের মানুষ জানে কীভাবে কী করতে হয়। এদেশের মানুষকে যতই বলেন তারা লড়াই করে সব কিছু অর্জন করেছে। সেই বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে, আপনার তত্ত্বাবধায়ক সরকার থেকে শুরু করে সব কিছুই লড়াই করে সংগ্রাম করে অর্জন করেছে।”

Also Read: আমুর বক্তব্যে কেন গুরুত্ব দেব: জিজ্ঞাসা ফখরুলের

Also Read: সংলাপ নিয়ে দলে আলোচনা নেই, আমুর বক্তব্য ব্যক্তিগত: তথ্যমন্ত্রী

Also Read: কাউকে আলোচনায় ডাকা হয়নি, এবার বললেন আমু

বিএনপি মহাসচিব বলেন, “এই লড়াইয়ে আমরা নেমেছি, সমগ্র জাতি নেমেছে। শুধু বিএনপির কথা বলছি না, আমরা বিএনপিকে ক্ষমতায় নিয়ে যাবো তার জন্য এই আন্দোলন করছি না।

“লড়াই করছি মানুষের অধিকারটা ফিরে পাবার জন্য, ভোট দিতে পারব না যেটা আমার একমাত্র অধিকার আছে সংবিধানে যে আমরা একটা দিনই হব রাজা… ভোট দেব, আমি যাকে খুশি তাকে দেবে, আমি ভোট দিয়ে তাদেরকে নির্বাচন করব যারা দেশ পরিচালনা করবে। সেটাই (ভোট) দিতে পারব না তাহলে আমি কেমন করে স্বাধীন দেশের নাগরিক হলাম।”

জিয়াউর রহমানের ৪২তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইউট্যাব) এর উদ্যোগে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশে গণতন্ত্র সংকট উত্তরণ প্রয়াসে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা- একটি পর্যালোচনা’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়।

মির্জা ফখরুল বলেন, “আমাদের সাংবাদিক ভাইয়েরা দিন-রাত প্রচণ্ড পরিশ্রম করেন। কিন্তু সবকিছু বলতেও পারেন না, লিখতেও পারেন না। কেনো ওই যে মাথার উপরে খড়্গ বসে আছে… ফ্যাসিবাদ।

“গোটা সাংবাদিক সমাজ বলেছেন, সবাই বলেছে, এমনকি জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন বলেছে যে, এই সিকিউরিটি অ্যাক্ট তোমরা বাতিল কর, শুনছে না, কেন? যদি শুনে তাহলে তো ক্ষমতা থাকবে না, গদি থাকবে না।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আপনারা শিক্ষিত মানুষ, শিক্ষক মানুষ। আপনাদেরকে গোটা জাতি শ্রদ্ধা করে, সম্মান করে। আপনারা যখন একটা কথা বলেন সেই কথাটা কিন্তু সত্যিকার অর্থে গোটা জাতির কাছে একটা গুরুত্ব বহন করে।

“আমরা খুব কষ্ট হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য। যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এই জাতিকে গঠন করবার জন্য, নির্মাণ করবার জন্য সমস্ত অর্জনগুলোতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে সেই বিশ্ববিদ্যালয় আজকে নিরব-নিথর। আজকে তারা গণতন্ত্রের জন্য মানুষের অধিকারের জন্য কোনো ভুমিকা পালন করে না।”

আলোচনাসভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক শামসুল আলম সেলিম, অধ্যাপক তৌফিকুল ইসলাম মিথিল ও খান মো. মনোয়ারুল ইসলাম শিমুল।

ইউট্যাবের সভাপতি অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলামের সভাপতিত্বে এবং মহাসচিব অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খান ও সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক নুরুল ইসলামের যৌথ সঞ্চালনায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য অধ্যাপক ফরহাদ হালিম ডোনার, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, বিকল্পধারা বাংলাদেশ- এর একাংশের সভাপতি অধ্যাপক নুরুল আমিন ব্যাপারী, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব কাদের গণি চৌধুরী, ইউট্যাবের অধ্যাপক লুতফর রহমান, অধ্যাপক আমজাদ হোসেন, অধ্যাপক গোলাম হাফিজ কেনেডী, অধ্যাপক আনিসুর রহমান, অধ্যাপক মামুনুর রশীদ, অধ্যাপক কামরুল আহসান, অধ্যাপক রইস উদ্দিন, অধ্যাপক মতিনুর রহমান, অধ্যাপক শের মোহাম্মদ, অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম, অধ্যাপক আখতার হোসেন, অধ্যাপক শাহেদুল করিম, অধ্যাপক মাসুমা হাবিব বক্তব্য দেন।