কাউকে আলোচনায় ডাকা হয়নি, এবার বললেন আমু

“এটা আওয়ামী লীগের বাড়ির দাওয়াত না যে দাওয়াত করে খাওয়াব। আলোচনার জন্য কাউকে বলা হয়নি, কাউকে দাওয়াত দেওয়া হয় নাই।”

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 June 2023, 03:13 PM
Updated : 7 June 2023, 03:13 PM

বিএনপির সঙ্গে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় সংলাপ হতে পারে বলে বক্তব্য নিয়ে তুমুল আলোচনার মধ্যে বর্ষীয়ান আওয়ামী লীগ নেতা আমির হোসেন আমু বলেছেন, তিনি কাউকে আলোচনার আহ্বান করেননি।

দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে বুধবার রাজধানীতে এক আলোচনা সভায় ক্ষমতাসীন দলের উপদেষ্টা পরিষদের এই সদস্য বলেন, “কাউকে আহ্বান করার সুযোগ নেই, কাউকে আহ্বান করা হয় নাই।”

ঐতিহাসিক ৬ দফা দিবস উপলক্ষে বুধবার বিকেলে রাজধানীর শেরেবাংলার নগরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের আলোচনায় সংলাপ বিষয়েও কথা হয়।

আমু বলেন, “নির্বাচনকে নিয়ে নতুন ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। আজকে আমার সেই ষড়যন্ত্র নির্বাচনকে নিয়ে। কাউকে আহ্বান করার সুযোগ নেই, কাউকে আহ্বান করা হয় নাই। এটা আওয়ামী লীগের বাড়ির দাওয়াত না যে দাওয়াত করে খাওয়াব। আলোচনার জন্য কাউকে বলা হয়নি, কাউকে দাওয়াত দেয়া হয় নাই।”

২০১৩ সালে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এখনকার মতোই বিরপীতধর্মী অবস্থানে থাকার সময় জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোর ঢাকা সফর নিয়েও কথা বলেন আওয়ামী লীগ নেতা।

তিনি বলেন, “জাতিসংঘ থেকে তারানকোকে আনা হয়েছিল। আমাদের সঙ্গে বৈঠকে আমরা প্রমাণ করেছিলাম যদি নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হয় সাংবিধানিক শূন্যতা তৈরি হবে। এটা কখনও একটি দেশের জন্য কাম্য হতে পারে না।

“সেই দিন আমাদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হল। সেই নির্বাচনে শেখ হাসিনার সরকার গঠনের মধ্যে দিয়ে আজকে বাংলাদেশকে একটি জায়গায় আনতে সক্ষম হয়েছেন। আজকে দেশ উন্নয়নশীল দেশে হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে সক্ষম হয়েছে।”

সংবিধানের ভিত্তিতেই নির্বাচন হবে জানিয়ে আমু বলেন, “সবাইকে সেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হবে। সেই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দেশের মানুষ তাদের ক্ষমতা কার কাছে দেবে সেটা নির্ধারিত হবে। সেই পরীক্ষায় অবতীর্ণ হওয়ার জন্য বলা যায়, কিন্তু আলোচনার জন্য নয়।”

আগের দিন যা বলেছিলেন আমু

মঙ্গলবার আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ১৪ দলের সমাবেশে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় বিএনপির সঙ্গে আলোচনায় বসার আগ্রহের কথা বলেন আওয়ামী লীগের এই জ্যেষ্ঠ নেতা।

তিনি বলেন, “আসুন, গণতন্ত্রকে অব্যাহত রাখার স্বার্থে আমরা আপনাদের সঙ্গে বসতে রাজি আছি। শেখ হাসিনা বলেছেন, আলোচনার দ্বার খোলা। তিনি বলেছেন, যে কোনোভাবে তিনি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে তিনি প্রস্তুত।

“আমরা বলতে চাই, বিগত সময়ে জাতিসংঘ যেভাবে তারানকো সাহেবকে পাঠিয়েছিলেন। আামাদের দুই দলকে নিয়ে এক সঙ্গে বসে মিটিং করেছিলেন। আজকেও প্রয়োজনে এই ধরনের দলাদলি না করে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে প্রতিনিধি আসুক।”

আওয়ামী লীগের এই বর্ষীয়ান নেতা বলেন, “আমরা বিএনপির সঙ্গে মুখোমুখি বসে আলোচনা করে দেখতে চাই। কোথায় ফারাক? সুষ্ঠু, অবাধ নির্বাচনে বাধা কোথায়? কীভাবে সেটা নিরসন করা যায়। এটা আলোচনার মধ্য দিয়েই সুরাহা হতে পারে। অন্য কোনো পথে নয়।”

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাধিকবার বিএনপির সঙ্গে আলোচনায় বসার কথা নাকচ করেছেন। এ অবস্থায় আমু ওই বক্তব্য রাখার পরদিন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, “আলোচনার বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি। আমাদের নিজেদের সমস্যা আমরা আলোচনা করব, প্রয়োজন হলে নিজেরাই সমাধান করব।”

জাতিসংঘের মধ্যস্থতার কথাও উড়িয়ে দেন কাদের। তিনি বলেন, "এখন বাইরের বিষয়টা কেন বার বার আসে? জাতিসংঘ কেন মধ্যস্থতা করবে? জাতিসংঘ হস্তক্ষেপ করবে এমন কোনো রাজনৈতিক সংকট এই স্বাধীন বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত হয়নি।”

দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেন, “আমির হোসেন আমু আমাদের দলের অন্যতম জ্যেষ্ঠ নেতা। তিনি যে বক্ত্যবটি দিয়েছেন সেটি তার ব্যক্তিগত বক্তব্য।…এটি দল, সরকার এমনকি ১৪ দল কোথাও এ নিয়ে আলোচনা হয়নি।”

বিএনপিও আমুর এই বক্তব্যকে গুরুত্ব দিচ্ছে না। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংলাপ প্রশ্নে প্রতিক্রিয়া জানাতেই রাজি হননি। সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, “উনি আওয়ামী লীগের অফিশিয়াল স্পোকসম্যান কি না এটা আমি জানি না। আমরা উনার বক্তব্যকে গুরুত্ব দেব কেন? আই ডোন্ট মেক এনি কমেন্ট।”