নির্বাচনে নৌকার পরাজয় নিয়ে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করা রোশন আলী মাস্টারের বিতর্কিত বক্তব্যের একটি ভিডিও ছড়িয়েছে।
Published : 31 Mar 2024, 09:52 PM
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেবিদ্বারে নৌকার প্রার্থীকে ‘মেকানিজম' করে হারানো হয়েছে বলে দেওয়া কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্যের ভিডিও ছড়িয়েছে।
আওয়ামী লীগ নেতা রোশন আলী মাস্টার ওমরা পালনের উদ্দেশ্যে সৌদি আরব যাওয়ার আগে শনিবার বিকালে দেবিদ্বার পৌর এলাকার নিজ বাসায় এক ইফতার মাহফিলে বিতর্কিত বক্তব্য দেন।
ওই সময়ে সেখানে ছিলেন কুমিল্লা-৪ (দেবিদ্বার) আসন থেকে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পরাজিত প্রার্থী রাজী মোহাম্মদ ফখরুল।
ওই আসনে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করা ফখরুল স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আবুল কালাম আজাদের কাছে হেরেছেন।
দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করা রোশন আলী মাস্টার নির্বাচনে নৌকার পরাজয় নিয়ে বিতর্কিত বক্তব্য দেন।
ছড়িয়ে পড়া সাড়ে চার মিনিটের ওই ভিডিওতে তাকে বলতে শোনা যায়, “ভোটে আমরা হারিনি। আমাদের মেকানিজম করে হারানো হইছে। যেকোনো কারণে আমরা রেজাল্ট নিতে পারেনি। এগুলোর অনেক ইতিহাস আছে, এগুলো আপনারা বুঝবেন না। আপনাদের ভাইঙ্গা বুঝাইতে অইব।”
তিনি আরও বলেন, “যাদের আমি নেতা বানাইছি তারা এখন আমারে…(গালি) দিয়াও গুনে না।”
এ সময় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আমাদের দলে অনেক মীর জাফর আছে। তারা যদি ভালো হয়ে যায়, আমরাও ভালো হয়ে যাবো। আর হজ করে এসে যদি দেখি তারা ভালো হয় নাই, তাহলে মাঠে নাইম্যা পড়বো।”
তার এমন বক্তব্য নিয়ে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে সমালোচনার ঝড় বইছে।
রোশন আলীর বক্তব্যের তাৎক্ষণিক ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন দেবিদ্বার উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।
প্রতিক্রিয়ায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বলছেন, যেখানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট করে সারা বিশ্বে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, সেখানে তার ওই বক্তব্য সুষ্ঠু নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
বর্তমান সংসদ সদস্য মো. আবুল কালাম আজাদ ভোট কারচুপির মাধ্যমে নির্বাচিত হয়েছেন এটা তিনি তার বক্তব্যে প্রমাণ করতে চেয়েছেন।
স্থানীয় নেতারা অবিলম্বে এমন বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানান। পাশাপাশি রোশন আলী মাস্টারকে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতির দাবি জানান নেতারা।
দেবিদ্বার উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবীর বলেন, “এর আগেও তার (রোশন আলী) মোবাইল ফোনের অডিও ভাইরাল হয়েছে। তার লাগামহীন এসব কর্মকাণ্ডে দল বিব্রত হচ্ছে। দেশের সাধারণ মানুষ বিব্রত হচ্ছে। মানুষকে ভুল মেসেজ দিচ্ছেন তিনি। সাধারণ মানুষের কাছে আওয়ামী লীগ হাস্যরসে পরিণত হচ্ছে।”
হুমায়ুন কবীর আরও বলেন, “দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের বিভিন্ন সভায় তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী ও তার নেতাকর্মীদের গালিগালাজ করেও বক্তব্য রেখে বিতর্কিত হোন। যা সবাই দেখেছেন ও শুনেছেন। এর আগে বিএনপির এক নেতা সাথে তার ফোনালাপ ফাঁস হয়। আসলে তিনি মাইক হাতে পেলে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন।”
২০২১ সালের ২৮ ডিসেম্বর জেলা আওয়ামী লীগ নেতা রোশন আলীর সঙ্গে বিএনপি নেতা ও দেবিদ্বার উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. রহুল আমিনের একটি অডিও ফোনালাপ ফাঁস হলে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
এদিকে, এবার ফাঁস হওয়া ভিডিওটি তার বলে স্বীকার করেছেন রোশন আলী মাস্টার।
তিনি বলেন, “এই বক্তব্য আমি পজিটিভলি দিয়েছি। নেতাকর্মীদের বুঝানোর জন্য কথার কথা বলেছি। এছাড়া নির্বাচনে নানা ধরনের মেকানিজম হয়। মেকানিজম ছাড়াতো নির্বাচন হয় না।”
তিনি আরও বলেন, “এখানে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়নি। আমি বলেছি, নির্বাচনে নেতাকর্মীদের নিয়ে অনেক ব্যাপার-স্যাপার যে থাকে সেটা নিয়ে। তাছাড়া আমি রেজাল্ট নিয়েও কোনো কথা বলিনি। একটি মহল বিষয়টি নিয়ে মানুষকে বিব্রত করছে।”