ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি থাকলে তা কেমন হবে, ডাকসু নির্বাচনসহ বেশ কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা হয় সভায়।
Published : 11 Dec 2024, 03:56 PM
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিয়ে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকায় সভা ছেড়ে বেরিয়ে গেছেন তিন বাম ছাত্র সংগঠনের প্রতিনিধিরা।
এ তিনটি সংগঠন হল– বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট (মার্ক্সবাদী) ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট (বাসদ)।
মঙ্গলবার দুই ধাপে এ মত বিনিময় সভার আয়োজন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ‘ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির প্রকৃতি ও ধরন’ বিষয়ক কমিটি। ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি থাকলে তা কেমন হবে, ডাকসু নির্বাচনসহ বেশ কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা হয় সেখানে।
বেলা ১১টার দিকে প্রথম দফা সভায় জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র কাউন্সিল, ছাত্র ফেডারেশন, স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্র সংসদ, ইনকিলাব মঞ্চ, একতার বাংলাদেশ, স্টুডেন্টস রাইট ওয়াচসহ কয়েকটি সংগঠন অংশ নেয়।
দ্বিতীয় দফা আলোচনা শুরু হয় বেলা ৩টায়। বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট (বাসদ), সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট (মার্ক্সবাদী), ইসলামী ছাত্র আন্দোলন, বিপ্লবী ছাত্র পরিষদ, অ্যান্টি ফ্যাসিস্ট কোয়ালিশন তাতে অংশ নেয়।
এক পর্যায়ে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সভায় যোগ দিলে সভা ত্যাগ করে তিন ছাত্র সংগঠন।
বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সাধারণ সম্পাদক জাবির আহমেদ জুবেল নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘ক্যাম্পাসে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে দীর্ঘদিন ধরে আমরা যারা সংগ্রাম করে আসছি, ইসলামী ছাত্রশিবিরের সঙ্গে কখনো এক মঞ্চ শেয়ার করিনি। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ও নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে শিবিরের বিতর্কিত ভূমিকার কারণে পরিবেশ পরিষদের সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ছাত্রসংগঠনগুলো সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়। সেই জায়গা থেকেই আমাদের সিদ্ধান্ত ছিল শিবিরের সাথে এক সভায় বসব না।”
জুবেল জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাজনীতি কীভাবে চলতে পারে, সে বিষয়ে কমিটির সঙ্গে আলোচনা হয়েছে সভায়। সকলেই দ্রুত ডাকসু নির্বাচন আয়োজনের পক্ষে মত দিয়েছেন।
বাম দলগুলোর এই অবস্থানের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামী ছাত্র শিবিরের সাধারণ সম্পাদক এস এম ফরহাদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ওই সভা থেকে যারা চলে গেছেন, তারা এর আগেও আমাদের সঙ্গে বিভিন্ন সভায় ছিলেন, এমনও অনেকে ছিলেন যাদের সাথে আমি পাশাপাশি বসে সভা করেছি।
“এ সভা থেকে তারা কেন বা কোন উদ্দেশ্যে চলে গেছেন সেটা আমি জানি না। অথবা সভা ত্যাগ করেছেন কিনা সে বিষয়টিও আমার কাছে স্পষ্ট নয়। তারা এ সভা ত্যাগ করার পেছনে যে ব্যাখ্যা দেবেন, সেগুলো কি আগের সভাগুলোর ব্যাপারে প্রযোজ্য ছিল না?"
ফরহাদ বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি, ক্যাম্পাসে ভালো কাজের প্রতিযোগিতা হবে। তাই এসব বিষয়ে আমরা প্রতিক্রিয়া দেখাই না।"
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে রাজনীতি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের করা ওই কমিটিতে আহ্বায়ক হিসেবে আছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মো. আবদুল মতিন।
কমিটির সদস্য হিসেবে আছেন বাংলা একাডেমির চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক, পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক জেড এন তাহমিদা বেগম এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক এস এম শামীম রেজা।
মঙ্গলবারের ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তিনটি ছাত্র সংগঠন যখন সভা ত্যাগ করে, আমি সেসময় উপস্থিত ছিলাম না। তবে যতটুকু শুনেছি, তারা বলেছিল, ইসলামী ছাত্রশিবির থাকলে তারা থাকবে না।”
সভায় কী নিয়ে আলোচনা হয়েছে জানতে চাইলে কমিটির এই সদস্য বলেন, “সভায় মূলত দুই বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রথমত বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ও শিক্ষক-ছাত্র সম্পর্কে যাতে ভালো থাকে, সে বিষয়ে আলোচনা হয়। দ্বিতীয়ত ডাকসু এবং হল ইউনিয়নের নির্বাচন যাতে ভালো হয়। কেউ যেন বিশেষ সুবিধা না পায়।
“কেউ কেউ এ নির্বাচন চাচ্ছেন না– এটা যেন না হয় সকলের মতামত অনুযায়ী সুন্দরভাবে এই কাজটা করতে চাচ্ছি।