Published : 29 Apr 2025, 05:29 PM
গোসলে চুল ধোয়া, মাথার তালু ঘষা, বারবার কন্ডিশনার লাগানো এবং শেষে চুল শুকানোর লম্বা প্রক্রিয়াটি সময়ে অভাবে নিয়মিত করা হয় না।
তবে নিয়মিত ভালোভাবে পরিষ্কার না করলে চুল ও মাথার ত্বকের জন্য মারাত্মক সমস্যা ডেকে আনতে পারে।
কীভাবে বুঝবেন প্রয়োজনের তুলনায় কম চুল ধুচ্ছেন?
এই বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. হ্যাডলি কিং এবং অন্যান্য বিশেষজ্ঞরা বিষয়টি পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করেছেন রিয়েলসিম্পল ডটকম-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনে ।
চুল অতিরিক্ত তেলতেলে ও ময়লাযুক্ত দেখানো
প্রাকৃতিকভাবেই মাথার ত্বক থেকে ‘সিবাম’ বা তেল উৎপন্ন হয়। এটি ত্বককে ময়শ্চারাইজ বা আর্দ্র করতে সহায়তা করে। তবে নিয়মিত চুল না ধুলে এই তেল জমে গিয়ে চুল অস্বাস্থ্যকর ও তেলতেলে দেখাতে পারে।
ডা. হ্যাডলি কিং বলেন, “অতিরিক্ত তেল জমে গেলে চুল দেখতে অগোছালো হয়ে যায় এবং কখনও কখনও খারাপ গন্ধও ছড়াতে পারে।”
মাথার ত্বক চুলকায় ও প্রদাহ হয়
চুল কম ধোয়ার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ হল মাথার ত্বক চুলকানো এবং লাল হয়ে যাওয়া।
যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ও জোডি লোজার্ফো একই প্রতিবেদনে ব্যাখ্যা করেন, “সিবাম যেমন প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে, তেমনি এটি ধুলা, ময়লা ও পরিবেশ দূষকগুলোকেও আকর্ষণ করে। এ অবস্থা ব্যাক্টেরিয়া, ছত্রাক এবং ইয়েস্টের জন্য আদর্শ পরিবেশ তৈরি করে, যা মাথার ত্বকে প্রদাহ ঘটায়।”
খুশকি দেখা দেয়
মাথায় চুলকানি, তেলতেলে-ভাবের সঙ্গে খুশকির সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
ডা. কিং বলেন, “যদি নিয়মিত চুল না ধোয়া হয়, তাহলে সিবাম জমে গিয়ে মাথার ত্বকে ছত্রাক বেড়ে যায়। ফলে সেবোরিয়েক ডার্মাটাইটিস (তেলযুক্ত ত্বকে হওয়া দীর্ঘস্থায়ী র্যাশ বা খুশকির সমস্যা) তৈরি হয়, যাকে সাধারণত খুশকি বলি।”
যদি নিয়মিত শ্যাম্পু করেও খুশকি থেকে যায়, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ‘মেডিকেইটেড অ্যান্টি-ড্যান্ড্রাফ শ্যাম্পু’ ব্যবহার করা প্রয়োজন পড়বে।
আগের সমস্যা আরও বেড়ে যাওয়া
যদি ইতোমধ্যে মাথার ত্বকের কোনো সমস্যা (যেমন- সেবোরিয়েক ডার্মাটাইটিস বা অতিরিক্ত চুলকানি) থাকে, নিয়মিত চুল না ধুলে তা আরও খারাপ হতে পারে।
‘ভি অ্যান্ড কো’ বিউটি ব্র্যান্ডের শুভেচ্ছাদূত এবং যুক্তরাষ্ট্রের ট্রিকোলজিস্ট (চুল ও মাথার ত্বকের রোগ বিশেষজ্ঞ) সোফিয়া ইমান্যুয়েল বলেন, “কম চুল ধোয়ার ফলে বিদ্যমান স্ক্যাল্প বা মাথার ত্বকের সমস্যাগুলো আরও তীব্র হয়ে ওঠে, যা চিকিৎসাকে কঠিন করে তোলে।”
সম্পর্কিত আরও প্রতিবেদন
চুল ধোয়ার ক্ষেত্রে যে ভুলগুলো এড়িয়ে চলতে হবে
সঠিক ‘হেয়ার ড্রায়ার’ ব্যবহার করছেন কি?
পণ্যের জমাট বেঁধে থাকা
চুলের যত্নে ব্যবহৃত নানান ধরনের পণ্য যেমন- শ্যাম্পু, কন্ডিশনার, স্টাইলিং ক্রিম, তেল, জেল বা ফোম যদি সঠিকভাবে ধোয়া না হয় তবে এগুলোর অবশিষ্টাংশ মাথার ত্বক ও চুলে জমে যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের তারকা কেশ-সজ্জাকর ও ‘হেয়ারাপি হেয়ারকেয়ার’ ব্র্যান্ডের মুখপাত্র টেরারোজ পানসেরেলি বলেন, “আমি সহজেই বুঝতে পারি কারা ঠিকমতো চুল পরিষ্কার করছেন না, কারণ তাদের চুলে পণ্যের স্তর জমে থাকে।”
তিনি পরামর্শ দেন, চুল ধোয়ার সময় ‘ডাবল ওয়াশ’ পদ্ধতি অনুসরণ করতে — প্রথমবার ময়লা ও জমাট পরিষ্কারের জন্য এবং দ্বিতীয়বার সঠিকভাবে চুল পরিষ্কার করার জন্য।
অতিরিক্ত চুল পড়া বা ভেঙে যাওয়া
যদি দেখা যায়, চুল পড়ছে বা ভেঙে যাচ্ছে তবে এর পেছনের কারণ হতে পারে নিয়মিত চুল না ধোয়া।
ডা. কিং জানান, ২০২১ সালে ‘স্কিন অ্যাপেন্ডেজ ডিজঅর্ডার্স’ সাময়িকীতে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, কম ব্যবধানে চুল ধোয়ার সঙ্গে চুল পড়ার ঝুঁকি বাড়ার সম্পর্ক রয়েছে।
“তেল, ময়লা, পণ্য ও দূষক জমে গিয়ে প্রদাহ তৈরি করে, যা চুল পড়ার কারণ হতে পারে”- বলেন এই চিকিৎসক।
জোডি লেজার্ফো যোগ করেন, “জমে থাকা আবরণ চুলের আর্দ্রতা গ্রহণে বাধা দেয়, ফলে চুল দুর্বল হয়ে ভেঙে যায়।”
চুল সমতল ও ভারী দেখায়
যখন স্টাইলিং পণ্য ও তেল জমে যায়, তখন চুলের স্বাভাবিক প্রাণবন্ততা হারিয়ে ‘ফ্ল্যাট’ বা ঝিমিয়ে পড়ে।
জোডি লেজার্ফো বলেন, “অনেক আধুনিক চুলের পণ্যে সিলিকন ও অন্যান্য আবরণ তৈরিকারী উপাদান থাকে। সেটা যদি ধুয়ে ফেলা না হয় তবে চুল ভারী ও নিস্তেজ হয়ে যায়।”
নিজেই আর স্বস্তিবোধ না করা
চুল পরিষ্কার থাকা কেবল বাহ্যিক সৌন্দর্যের বিষয় নয়, এটি মানসিক স্বাস্থ্যের সঙ্গেও জড়িত।
ডা. কিং বলেন, “পরিষ্কার চুল ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতার প্রতিচ্ছবি। অপরিষ্কার চুল আত্মবিশ্বাস ও সামাজিক মেলামেশায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।”
চুলের পরিচর্যায় যত্নবান হওয়া মানে কেবল বাহ্যিক সৌন্দর্য রক্ষা নয়, এটি নিজের প্রতি সম্মান প্রদর্শনেরও অংশ। তাই সময় বাঁচানোর জন্য চুল ধোয়ার দিন এড়িয়ে গেলে সমস্যা হতেই পারে।
আরও পড়ুন