‘মেটালিক টেস্ট’ বা ধাতব কিংবা তিক্ত স্বাদ অনুভূত হলেও প্রাথমিকভাবে দুঃশ্চিন্তার কিছু নেই।
Published : 01 Nov 2023, 11:20 AM
মাঝেমধ্যে মুখের মধ্যে তেতো ধাতব স্বাদ জেগে ওঠে। যাকে বলে ‘মেটালিক টেস্ট’।
এরকম স্বাদ অনুভূত হওয়ার নানান কারণের মধ্যে ভিটামিনের স্বল্পতা যেমন রয়েছে তেমনি হতে পারে কোনো রোগের পূর্বাভাস।
এই বিষয়ে ব্যাঙ্গলোরে অবস্থিত ‘ডা. বি. আর. আম্বেরকার মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটাল’য়ের ফার্মাকোলজি বিভাগে জ্যেষ্ঠ চিকিৎসক ডা. নয়না শেঠি বলেন, “মুখে ধাতব স্বাদ অনুভূত হওয়াকে বলা হয় ‘ডিসগুজিয়া’, যার মানে হল অন্যরকম স্বাদ অনুভূত হওয়া। এটা নিয়ে চিন্তার কিছু নেই।”
তবে ফার্মইজি ডটইন’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে তিনি সাবধান করে বলেন, “দীর্ঘদিন এরকম তিক্ত স্বাদ অনুভূত হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।”
ধাতব বা তিক্ত স্বাদ অনুভূত হওয়ার কারণ
মুখ-গহ্বরে স্বাস্থ্য ঠিক না থাকলে এরকম হতে পারে। এজন্য সঠিকভাবে মুখের যত্ন না নেওয়াকে দায়ী করা যায়।
মাড়ির রোগ হলে এরকম হতে পারে। বাজে স্বাদের কারণ হতে পারে মাড়ি থেকে রক্ত বের হওয়া।
নিয়মিত দাঁত না মাজা ও ফ্লসিং না করলে মুখে ব্যাক্টেরিয়া জন্মানোর ঝুঁকি বাড়ে। যা থেকে তিক্ত স্বাদ হতে পারে।
‘বার্নিং মাউথ সিন্ড্রম’য়ের কারণে মুখের ভেতর গরম ও ধাতব স্বাদ অনুভূত হয়। এক্ষেত্রে চিকিৎসা নেওয়া জরুরি।
মুখে ব্যথা পেলে বা সম্প্রতি মুখে কোনো অস্ত্রোপচার হলেও ফলাফল হিসেবে ধাতব স্বাদ লাগতে পারে।
শারীরিক সমস্যা ও সংক্রমণ থেকে।
ঠাণ্ডা লাগা ও সাইনাসের সমস্যা থাকলে।
‘শোগ্রেন’স সিন্ড্রম’ দেখা দিলে মুখে শুষ্কভাব অনুভূত হয়, যে কারণে ধাতব স্বাদ লাগতে পারে।
ডায়াবেটিস এবং রক্তের চিনির মাত্রা কমে গেলে মুখের স্বাদের পরিবর্তন হয়।
কিডনি বা বৃক্কে সমস্যা হলে দেহে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বাড়ে। সে কারণেও মুখে তিক্ত স্বাদ অনুভূত হয়।
স্নায়ুগত সমস্যা যেমন- ডিমেনশা বা স্মৃতিভ্রংশ রোগ থেকে।
মুখে তিক্ত স্বাদ হওয়ার লক্ষণ হতে পারে হজমতন্ত্রে সমস্যা কিংবা অ্যাসিড রিফ্লাক্স।
গর্ভাবস্থা ও হরমোনের পরিবর্তন।
কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবেও মুখের স্বাদের পরিবর্তন হয়।
বেশি খনিজ ও ভিটামিন গ্রহণ করলেও এরকম হতে পারে। যেমন- অতিরিক্ত লৌহ, কপার, জিঙ্কের কারণে মুখে ধাতব স্বাদ অনুভূত হয়। তাই ভিটামিন গ্রহণে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
নিঃশ্বাস ও খাবারের মাধ্যমে বেশি পরিমাণে দূষিত পদার্থ যেমন- মার্কারি ও লেড গ্রহণ করলে মুখে ধাতব স্বাদ হয়।
খাবার থেকে অ্যালার্জি হলেও মুখের স্বাদে পরিবর্তন আসতে পারে। অনেকের ‘পাইন নাট’ খেলে তিতা লাগে একে বলে ‘পাইন নাট সিন্ড্রম’।
ক্যান্সারের চিকিৎসায় কেমো থেরাপি দেওয়ার কারণেও মুখে তিক্ত স্বাদ অনুভূত হয়।
কখন ডাক্তারের কাছে যাওয়া দরকার
দীর্ঘদিন ধাতব স্বাদ অনুভূত হওয়ার পাশাপাশি অ্যালার্জি, ব্যথা বা সংক্রমণ দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। তাই মুখে তিক্ত স্বাদ দেখা দিলে লক্ষণগুলো ফুটে ওঠে কিনা সেগুলো খেয়াল করা জরুরি।
মুখের স্বাভাবিক স্বাদ ফেরাতে করণীয়
স্বাদ পরিবর্তনের হাতে থেকে বাঁচতে প্রথমেই দরকার মুখের স্বাস্থ্য ঠিক রাখা। এজন্য অবশ্যই নিয়মিত দাঁত মাজা ও ফ্লসিংয়ের অভ্যাস গড়তে হবে। কোনো শারীরিক সমস্যার কারণে হলে সেটা সারাইয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। ওষুধের জন্য হলে হয়ত ডাক্তারের পরামর্শে ওষুধ পরিবর্তন করতে হতে পারে।
বিষাক্ত পরিবেশ থেকে বাঁচতে মুখে মাস্ক ব্যবহার করা উপকারী।
পরিত্রাণের পন্থা
সার্বিকভাবে মুখের স্বাস্থ্য ভালো রাখার পাশাপাশি আর্দ্র থাকতে পর্যাপ্ত পানি পান জরুরি। মুখে শুষ্কভাব এড়াতেও পানি প্রয়োজন।
হার্বাল চা, নারিকেল তেল মিশ্রিত পানি দিয়ে কুলকুচি ও মাউথ ওয়াশ দিয়ে মুখ পরিষ্কারে মুখের ধাতব স্বাদ থেকে পরিত্রাণ পেতে সাহায্য করে।
এছাড়া টাটকা ফল, সবজি, পূর্ণ বা অপ্রক্রিয়াজাত শষ্যের খাবার, চর্বিহীন মাংস ও দুগ্ধজাত খাবারে অভ্যস্ত হলে মুখের স্বাদ ফিরে আসে।
ভিনিগার, লেবুর রস, বিভিন্ন ধরনের মসলা খাবার ও পানীয়র স্বাদ বাড়ায়। এগুলো মুখে মজার স্বাদ ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে।
মনে রাখতে হবে
স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন ও সার্বিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে পারলে মুখের স্বাভাবিক স্বাদ ঠিক থাকবে। তবে ধাতব বা তিক্ত স্বাদ যদি অনেকদিন ধরে থাকে তবে ডাক্তারের কাছে যাওয়া জরুরি। এছাড়া চিন্তিত হওয়ার কারণ নেই।
আরও পড়ুন