Published : 02 Apr 2024, 12:56 PM
সত্যি বলতে দেহের কার্যক্রম চালাতে কিছু পরিমাণ কোলেস্টেরলের প্রয়োজন।
এমনকি ভালো কোলেস্টেরল (এইচডিএল) দেহ থেকে বাজে কোলেস্টেরল (এলডিএল) বের করে দিতে ভূমিকা রাখে।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশনাল লাইব্রেরি অফ মেডিসিন’য়ের তথ্যানুসারে- অতিরিক্ত কোলেস্টেরল থেকে ধমনী আটকে যাওয়া, হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বৃদ্ধি-সহ নানান অসুখ হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।
আর মনে রাখতে হবে, স্থূলতা ছাড়াও হালকা পাতলা ব্যক্তিও উচ্চ কোলেস্টেরলের সমস্যায় ভুগতে পারেন।
ক্লান্তি লাগা কি কোলেস্টেরল বেশি থাকার লক্ষণ?
“উচ্চ কোলেস্টেরল সরাসরি ক্লান্তির কারণ হিসেবে কাজ করে না। এমনকি কোনো লক্ষণও প্রকাশ করে না সরাসরি”- ওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে মন্তব্য করেন পেনসালভিনিয়া’র ‘কার্ডিওলজি কনসালট্যান্টস অফ ফিলাডেলফিয়া’র হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. ব্রেট ভিক্টর।
তবে উচ্চ কোলেস্টেরল থেকে হওয়া বিভিন্ন সমস্যার কারণে ক্লান্তি বোধ হতে পারে।
এই বিষয়ে শিকাগো’র ‘রাশ ইউনিভার্সিটি সিস্টেম ফর হেল্থ’য়ের হৃদরোগ-বিশেষজ্ঞ ডা. মেলিসা ট্রেসি বলেন, “সাধারণভাবে বলতে গেলে কোলেস্টেরল বেশি মানে, আপনি হয়ত সুষম খাবার খাচ্ছেন না। যে কারণে ওজন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই ধরনের জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত হলে শ্রান্ত বোধ হতেই পারে।”
যদি চিকিৎসার ব্যবস্থা করা না হয় তবে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে। এটাও ক্লান্তি লাগার কারণ।
“যখন ধমনীতে ‘প্লাক’ জমতে শুরু করে তখন হৃদপিণ্ডের কাজ করতে সমস্যা হয়। সেটার লক্ষণ প্রকাশের একটা মাধ্যম হল ক্লান্তি”- বলেন ডা. ট্রেসি।
মানে হল- যেভাবে জীবনযাপন করলে উচ্চ কোলেস্টেরল হয় আর সেখান থেকে দেহে রোগ বাসা বাঁধলে ক্লান্ত অনুভূত হবে।
উচ্চ কোলেস্টেরলের অন্যান্য লক্ষণ
আগেই বলা হয়েছে, উচ্চ কোলেস্টেরল থাকার কোনো লক্ষণ সরাসরি প্রকাশ পায় না। তবে এর কারণে হওয়া নানান সমস্যা থেকে আন্দাজ করা যায় কোলেস্টেরল বেশি থাকতে পারে। মার্কিন দাতব্য প্রতিষ্ঠান মায়ো ক্লিনিক’য়ের তথ্যানুসারে সেসব সমস্যাগুলো হল-
বুকে ব্যথা, চাপ ও আটকানোভাব বোধ করা।
মাথা ঝিমঝিম করা বা হালকা লাগা।
বুক ধরফর করা।
নিঃশ্বাসে সমস্যা বা ‘শর্টনেস অফ ব্রেথ’।
ঘাড় বা চোয়ালে ব্যথা।
হাত বা পায়ে অসাড় বা দুর্বল বোধ।
এগুলো ছাড়াও বিভিন্ন রোগের কারণে উচ্চ কোলেস্টরল হতে পারে। যেমন-
দীর্ঘদিনের বৃক্কের রোগ।
ডায়াবেটিস।
এইচআইভি/ এইডস।
হাইপোথাইরয়ডিজম
লুপাস (রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যখন নিজ দেহকে আক্রান্ত করে)।
যেসব বিষয় উচ্চ কোলেস্টেরলের ঝুঁকি বাড়ায়
জীবনযাপন, বংশগতি ও স্বাস্থ্যগত সমস্যা থেকে উচ্চ কোলেস্টেরলের সমস্যা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশনাল হার্ট, লাঙ অ্যান্ড ব্লাড ইন্সটিটিউট’য়ের তথ্যানুসারে উচ্চ কোলেস্টেরল হওয়ার কারণগুলো হল-
স্যাচুরেইটেড ফ্যাট বেশি এমন খাবার বেশি খাওয়া।
অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা।
অলস জীবনযাপন করা।
ধূমপান।
সারাক্ষণ মানসিক চাপে থাকা।
অতিরিক্ত মদ্যপান করা।
উচ্চ কোলেস্টেরলের পারিবারিক ইতিহাস থাকলে।
বিভিন্ন ধরনের রোগ যেমন- দীর্ঘদিনের বৃক্কের রোগ, ডায়াবেটিস, এইচআইভি/ এইডস, হাইপোথাইরয়ডিজম, লুপাস বা স্লিপ অ্যাপনিয়া।
বয়স চল্লিশের ওপর হলে।
উচ্চ কোলেস্টেরলের চিকিৎসা
জীবনযাত্রার পদ্ধতি পরিবর্তন হল উচ্চ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমানোর প্রথম পদক্ষেপ।
ডা. ট্রেসি বলেন, “জীবনযাপনের পদ্ধতি পরিবর্তনের মাধ্যমে কোলেস্টেরলের পরিমাণ ২০ থেকে ২৫ শতাংশ কমানো যায়।”
আর সেগুলো হল-
সুষম খাদ্যাভ্যাস: পূর্ণ শষ্য, ফল ও সবজি, স্বাস্থ্যকর চর্বি (অলিভ অয়েল), চর্বিহীন এবং হৃদ স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী প্রোটিন যেমন- মাছ খেতে হবে। যত উদ্ভিজ্জ খাবার খাওয়া যায় ততই মঙ্গল।
স্যাচুরেইটেড ফ্যাট কম খাওয়া: লাল মাংস, পূর্ণ-ননিযুক্ত দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার, অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাদ্য ও বেইক করা খাবার খাওয়া কমাতে হবে। উদ্ভিজ্জ উৎসের মধ্যে নারিকেল ও পাম তেলে রয়েছে স্যাচুরেইটেড ফ্যাটস; এসব খাওয়ার অভ্যাস থাকলে ছাড়তে হবে।
প্রতিদিন শারীরিক কার্যক্রম: প্রতি সপ্তাহে ১৫০ মিনিট মাঝারি থেকে উচ্চ মাত্রার ব্যায়াম করার চেষ্টা করতে হবে। মানে প্রতিদিন ৩০ মিনিট করে সপ্তাহে পাঁচদিন শরীরচর্চা করা। সেটা হতে পারে- হাঁটা, সাইকেল চালানো বা ব্যায়ামাগারে গিয়ে ব্যায়াম করা।
ধূমপান ও অ্যালকোহল গ্রহণ ত্যাগ করা: শুধু কোলেস্টেরল নয়, হৃদযন্ত্র-সহ সার্বিক স্বাস্থ্যের উপকারের জন্য ধূমপান ত্যাগ করতে হবে। মায়ো ক্লিনিকের তথ্যানুসারে- ধূমপান ত্যাগের এক বছরের মধ্যে হৃদরোগ হওয়ার ঝুঁকি অর্ধেক কমে যায়। আর মদ্যপান শুধু কোলেস্টেরল নয় সাথে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদগতি বৃদ্ধি, হৃদযন্ত্রের কর্যকারিতা কমানোতে প্রভাব ফেলে। তাই মদ্যপান ছাড়তে হবে।
দেহের আকার অনুসারে ওজন: সবাইকে ওজন কমাতে হবে এমন কোনো বিষয় নেই। তবে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে দেহের আকার উচ্চতা অনুসারে ওজন ধরে রাখার চেষ্টা করতে হবে। অতিরিক্ত ওজন থেকে পাঁচ থেকে ১০ শতাংশ কমাতে পারলেও কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে আনা যায়।
ওষুধ খাওয়া: যদি জীবনযাপনের পদ্ধতি পরিবর্তন করেও উচ্চ কোলেস্টেরলের মাত্রা না কমে তবে ডাক্তারের পরামর্শে ওষুধ সেবন করতে হবে।
উচ্চ কোলেস্টেরল হওয়ার প্রতিরোধের উপায়
যেসব জীবনযাপনের পদ্ধতি অনুসরণ করে উচ্চ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমানো যায়, সেগুলো সবসময় অনুসরণে করলে সমস্যা শুরুর আগেই প্রতিরোধ করাও সম্ভব হয়।
প্রক্রিয়াজাত ও অতিরিক্ত তেল-চর্বির খাবার বাদ দেওয়া, পূর্ণ শষ্য ও সবজি বেশি খাওয়া, নিয়মিত ব্যায়াম করলে স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় থাকে। এসব শুধু কোলেস্টরল নয়, সার্বিকভাবে দেহকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে।
যখন চিকিৎসকের কাছে যাওয়া জরুরি
যদি অতিরিক্ত ক্লান্তিবোধ কাজ করে আর কোনো কারণ খুঁজে না পাওয়া যায় তবে ডাক্তারের কাছে গিয়ে রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হতে হবে কোলেস্টেরলের মাত্রা কোন অবস্থায় আছে।
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রিয় রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংস্থার তথ্যানুসারে- সাধারণত একজন সুস্থ ব্যক্তির চার থেকে ছয় বছর পরপর কোলেস্টেরলের মাত্রা পরীক্ষা করানো উচিত।
আর যদি পারিবারিক ইতিহাস, ডায়াবেটিস বা হৃদরোগে থাকে তবে কম সময়ের মধ্যে পরীক্ষার প্রয়োজন হবে।
আরও পড়ুন
শীর্ণ দেহেও হতে পারে উচ্চ কোলেস্টেরলের সমস্যা