যেভাবে বোঝা যায় কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি

পুরুষের জন্য কোলেস্টেরলের সমস্যাকে ধরা হয় মধ্য বয়সের সমস্যা হিসেবে। কিন্তু নারীদের এই সমস্যা হতে পারে সব বয়সেই।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Dec 2022, 12:56 PM
Updated : 4 Dec 2022, 12:56 PM

এই ফাস্টফুড খাওয়ার যুগে যে কারও উচ্চ মাত্রায় কোলেস্টেরল থাকতে পারে।

আর অবহেলা করলে নানান জটিল রোগ শরীরে বাসা বাঁধবেই।

ক্যালিফোর্নিয়ার ‘ডিগনিটি হেল্থ সেইন্ট. মেরি মেডিকাল সেন্টার’য়ের ‘এসটিইএমআই প্রোগ্রাম’ ও ‘এন্ডোভাস্কুলার পেরিফেরাল ইন্টারভেনশনস’য়ের পরিচালক এবং ‘ইউসিএলএ স্কুল অফ মেডিসিন’য়ের ‘অ্যাসোসিয়েট ক্লিনিকাল প্রফেসর’ ডা. নিখিল কাপুর বলেন, “হৃদরোগ, ‘ভাস্কুলার ডিজিজ’ এবং স্ট্রোক- এই সবগুলো রোগ শরীরে বাসা বাঁধার গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো এই কোলেস্টেরল। প্রতিশেষণের তুলনায় প্রতিরোধ সবসময়ই সেরা।”

তাই এই সমস্যাকে প্রাথমিক অবস্থায় শনাক্ত করে তার চিকিৎসা করাই হবে সবচাইতে ভালো উপায়। আর আশার কথা হলো সাধারণ রক্ত পরীক্ষা থেকেই কোলেস্টেরল’য়ের মাত্রা জানা যায়।

ইটদিস ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে তিনি আরও বলেন, “কোলেস্টেরল শরীরে বেশি থাকলে রক্তনালী দিয়ে রক্তপ্রবাহ সচল রাখা কঠিন হয়ে যায়। উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরল বিভিন্ন বিষয়ের ওপর নির্ভরশীল। যার মধ্যে কিছু মানুষ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, কিছু পারে না।”

যেমন- দৈনন্দিন জীবনযাত্রা, খাদ্যাভ্যাস, ডায়াবেটিস, ধূমপান, শরীরচর্চার অভাব, স্থূলতা ইত্যাদি আমাদের নিয়ন্ত্রণে।

তবে জিনগত বৈশিষ্ট্য, বংশগত ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণের বাইরে। নিয়ন্ত্রণ করা যায় এমন ব্যাপারগুলো কিন্তু একটা সঙ্গে আরেকটা জড়িয়ে আছে। শরীরচর্চা কম করলে, খাদ্যাভ্যাস অস্বাস্থ্যকর হলে স্থূলতা দেখা দেবে।

কোলেস্টেরল নিয়ে ভুল ধারণা

যুক্তরাষ্ট্রের ‘হ্যালো হার্ট’য়ের ‘কার্ডিওভাস্কুলার সার্জন’ ও ‘মেডিকাল অ্যাডভাইসর’ ডা. সঞ্জিব আগারওয়াল বলেন, “সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন’য়ের তথ্যানুসারে, যুক্তরাষ্ট্রে ৭ কোটি ১০ লাখ মানুষের ‘এলডিএল কোলেস্টেরল’য়ের মাত্রা বেশি। কিন্তু চিকিৎসা নেয় অর্ধেকেরও কম, কারণ তাদের কোনো উপসর্গ নেই। আমি মনে করি কোলেস্টেরল আর হৃদরোগ নিয়ে মানুষের সবচাইতে বড় ভুল ধারণা হলো- সবক্ষেত্রেই কোনো না কোনো উপসর্গ থাকবে। সবসময় উপসর্গ দেখা যায় না, কিন্তু কোলেস্টেরল, উচ্চ রক্তচাপ নীরবে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতে থাকে।”

যুক্তরাষ্ট্রের ‘হলিস্টিক ওয়েলনেস স্ট্যাটেজিস’য়ের ‘ফ্যামিলি ফিজিশিয়ান’ টমি মিচেল বলেন, ‘কোলেস্টেরল নিয়ে আরেকটি ভুল ধারণা হলো একে সবসময় ক্ষতিকর মনে করা। উচ্চমাত্রায় কোলেস্টেরল হৃদরোগের ঝুঁকি আনে ঠিক, আবার শরীরের স্বাভাবিক কার্যক্রমের জন্য এটা জরুরি।”

কোলেস্টেরল এক ধরনের চর্বি যা সব কোষেই থাকে। তৈরি করে হরমোন, ভিটামিন ডি ও ‘বাইল অ্যাসিড’।

ভোজ্য উৎস থেকে আসা কোলেস্টেরল রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রাকে প্রভাবিত করে না এমনটা ভেবে নেওয়া আরেকটি মস্ত বড় ভুল ধারণা।

ভোজ্য উৎসের কোলেস্টেরল রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রাকে সামান্যই প্রভাবিত করে। তবে আরও বড় প্রভাব ফেলে ‘ট্রান্স ফ্যাট’ ও ‘স্যাচুরেইটেড ফ্যাট’।”

কোলেস্টেরল বেশি বোঝার উপায়

ডা. আগারওয়াল বলেন, “লিপিড প্রোফাইল টেস্ট’ আর রক্তচাপ পরিমাপে নিয়মিত রাখার মাধ্যমে কোলেস্টেরলের মাত্রা সহজেই জানা সম্ভব।”

কোলেস্টেরল দুই ধরনের ‘এলডিএল’ যা ক্ষতিকর, আর ‘এইচডিএল’ যা উপকারী।

‘এলডিএল’ রক্তনালীতে ‘প্লাক’ তৈরি করে তা আটকে দেয়। আর ‘এইচডিএল’ রক্ত থেকে ‘এলডিএল’ কমায়।

কোলেস্টেরলের মাত্রা ২৪০ এমজি/ডিএল’ বা এর চাইতে বেশি হলে তা উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরল।

উপসর্গ থাকে না অনেকক্ষেত্রেই

ডা. মিচেল বলেন, “উচ্চ কোলেস্টেরলের কোনো লক্ষণ থাকে বলেই একে ‘সাইলেন্ট কিলার’ বলা হয়। অতিরিক্ত ওজন, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, ধূপমান ইত্যাদি কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ায়।”

যাদের এই বিষয়গুলো আছে তাদের উচিত নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কোলেস্টেরল পরীক্ষা করানো। আর নিয়ন্ত্রণে রাখতে সচেষ্ট হওয়া।

ডা. কাপুর বলেন, “কোলেস্টেরল একটা নির্দিষ্ট মাত্রায় শরীরের জন্য দরকারী। আবার বেশি হয়ে গেলে তা ক্ষতিকর। যদিও তা কোনো উপসর্গ দেখাবে না। বছরের পর বছর ধরে নীরবে এই উচ্চ কোলেস্টেরল রক্তনালীর ভেতরে ‘প্লাক’ তৈরি করে তাকে সরু করতে করতে একসময় পুরো আটকে দেয়। সেখান থেকেই হয় হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোক। এর আগ পর্যন্ত কোনো উপসর্গই থাকে না বেশিরভাগ রোগীর ক্ষেত্রে।”

কিছু মানুষের ক্ষেত্রে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ‘লিপিড ডিপোসিট’ হতে দেখা যায়, যাকে বলে ‘জ্যানথোমা’। এটাই যদি চোখের পাতায় হয় তবে বলা হয় ‘জ্যানথেলাজমা’।

প্রাকৃতিকভাবে কোলেস্টেরল কমানো উপায়

ডা. আগারওয়াল বলেন, “স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা গড়ে তোলার মাধ্যমে কোলেস্টেরল কমানো যায়। নিয়মিত শরীরচর্চা, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা, মদ্যপান বর্জন, ধূমপান বর্জন করা হলো সেই স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার অংশ। ‘জাঙ্ক ফুড’ খাওয়া কমানো হলো স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলার প্রধান ধাপ।”

ডা. মিচেল বলেন, “কোলেস্টেরল কমানো অসংখ্য উপায়ের মধ্যে সবচাইতে কার্যকর হলো খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রর আর শরীরচর্চা। যেসব খাবারে ‘স্যাচুরেইটেড ফ্যাট’ কমে আর ভোজ্য আঁশ বেশি সেগুলো খেতে হবে।”

নারী ও পুরুষের ওপর কোলেস্টেরলের প্রভাব ভিন্ন

ডা. আগারওয়াল বলেন, “উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টেরল সবার ক্ষতি করে। তবে লিঙ্গভেদে কিছুটা তফাৎ থাকে।”

নারী আর পুরুষের স্বাভাবিক কোরেস্টেরলের মাত্রায় তারতম্য থাকে। নারীদের শরীরে ‘এইচডিএল’ বেশি থাকে পুরুষের তুলনায়। এর কারণ হলো নারীর শরীরে ‘ইস্ট্রোজেন’ হরমোনের প্রাতুল্য। 

ডা. মিচেল বলেন, “পুরুষের জন্য কোলেস্টেরলের সমস্যাকে ধরা হয় মধ্য বয়সের সমস্যা হিসেবে। কিন্তু নারীদের এই সমস্যা হতে পারে সব বয়সেই।”

নারীর শরীরে জৈবিকভাবে এইচডিএল বেশি, এলডিএল কম হলেও রজঃবন্ধের পর পরিস্থিতি উল্টে যায়। এই সময় হরমোনের পরিবর্তনই হলো এর প্রধান কারণ।

আরও পড়ুন

Also Read: উচ্চ কোলেস্টেরল দ্রুত কমাতে

Also Read: কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে ওটস যেভাবে প্রভাব রাখে

Also Read: কোলেস্টেরল কম হওয়ার লক্ষণ

Also Read: যেসব লক্ষণ থাকলে কোলেস্টেরল পরীক্ষা করানো জরুরি