যেসব লক্ষণ থাকলে কোলেস্টেরল পরীক্ষা করানো জরুরি

দেহের সার্বিক সুস্থতার জন্য কোলেস্টেরলের মাত্রা সম্পর্কে ধারণা থাকা প্রয়োজন।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 July 2022, 08:08 AM
Updated : 25 July 2022, 05:02 AM

কোলেস্টেরল সুস্থতার ওপর সরাসরি প্রভাব রাখে। তবে তা নিয়ন্ত্রণে না থাকলে গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের হলিস্টিক ওয়েলনেস স্ট্র্যাটেজি’র বোর্ড-প্রত্যয়িত চিকিৎসক টমি মিচেল বলেন, “সামগ্রিক সুস্থতার জন্য কোলেস্টেরলের মাত্রা জানা প্রয়োজন। তাই এর প্রতি সচেতন হওয়া জরুরি।”

অত্যধিক কোলেস্টেরল হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।

ইটদিস নটদ্যাট ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে তিনি আরও বলেন ডা. মিচেল বলেন, “উচ্চ কোলেস্টেরলের কোনো লক্ষণ না থাকায় এটা ‘নীরব ঘাতক’ হিসেবে পরিচিত।

কোলেস্টেরলের মাত্রা জানা যে কারণে জরুরি

ডা. মিচেল ব্যাখ্যা করেন, “কোলেস্টেরল রক্তে পাওয়া একটি মোমজাতীয় পদার্থ। রক্তে অত্যাধিক কোলেস্টেরল হৃদরোগ, স্ট্রোক বা গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে। সাধারণ রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে কোলেস্টেরলের মাত্রা পরীক্ষা যায়। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী জীবনযাত্রায় পরিবর্তন বা ওষুধ গ্রহণের মাধ্যমে কোলেস্টেরলের মাত্রা উন্নত করা যায়।”

যে কারণে উচ্চ মাত্রার কোলেস্টেরল বিপজ্জনক

ডা. মিচেলের মতে, “উচ্চ কোলেস্টেরল বিপজ্জনক কারণ এটা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। কোলেস্টেরল রক্তে পাওয়া এক ধরনের চর্বি যা ধমনীতে দেয়ালের সৃষ্টি করে, এটা ‘প্লাক’ নামে পরিচিত। ধমনী সরু হয়ে যাওয়ায় এতে রক্ত সঞ্চালন ধীর হয় ফলে হৃদপিণ্ডের কাজ কঠিন হয়ে যায়।”

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এর মাত্রা বাড়তে থাকে ফলে দেখা দেয়- রক্ত সরবারহের সমস্যা, হৃদরোগ ও হার্ট অ্যাটাক।

তাই, হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি।

উচ্চ কোলেস্টেরলের সম্ভাব্য কারণ

কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধির নানান কারণ রয়েছে। যেমন- বংশগতি, বয়স, জীবনধারা ইত্যাদি।

পারিবারিক ইতিহাসে উচ্চ কোলেস্টেরল থাকলে তা হওয়ায় সম্ভাবনা বেশি থাকে। একইভাবে বয়স বাড়ার সাথে সাথে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ে।

খাদ্যাভ্যাস, শরীরচর্চা ও জীবন যাত্রায় পরিবর্তন এনে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

স্যাচুরেইটেড চর্বি ও ট্রান্সফ্যাট খাওয়া কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ায়। তাই এগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখতে ঝুঁকি কারণগুলো বিবেচনা করে যথাযথ পদক্ষেপের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহন করা উচিত, বলে জানান ডা. মিচেল।

উচ্চ রক্তচাপ থাকলে কোলেস্টেরল পরীক্ষা করা প্রয়োজন

“উচ্চ রক্তচাপ, দুশ্চিন্তা ইত্যাদি ধমনীর দেয়ালে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি চাপ সৃষ্টি করে। এতে ধমনীর দেয়াল ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং হৃদরোগের মতো স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করে।

উচ্চ রক্তচাপ থাকলে উচ্চ কোলেস্টেরলের সম্ভাবনা থাকে। উচ্চ রক্তচাপের মতো উচ্চ কোলেস্টেরলও ধমনীর দেয়ালকে ক্ষতিগ্রস্ত করে ও স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

“তাই কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি। কোলেস্টেরল কমাতে সঠিক জীবনযাত্রা নির্ধারণ, ব্যায়াম ও ওষুধ গ্রহণে চিকিৎসকের সহায়তা গ্রহণ করা যেতে পারে”, বলেন ডা. মিচেল।

ডায়াবেটিস থাকলে

ডা. মিচেল জানান, ডায়াবেটিস এমন এটা রোগ যা রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। ডায়াবেটিকদের হৃদরোগ, স্ট্রোক ও কিডনির রোগসহ নানান স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেয়।

কোলেস্টেরল এমন এক ধরনের চর্বি যা কোষে ঝিল্লি তৈরি করে ও বজায় রাখে। এটা হরমোন ও অন্যান্য পদার্থ তৈরিতে সহায়তা করে। এর মাত্রা অতিরিক্ত হলে তা ধমনিতে জমা বাঁধে এবং এর দেয়াল শক্ত করে ফেলে। ফলে হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে।

এই চিকিৎসক পরামর্শ দেন, “যাদের ডায়াবেটিস আছে তাদের কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি হতেই পারে। তাই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিয়মিত কোলেস্টেরল পরীক্ষা করানো উচিত। যেন কোনো সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা সহজ হয়।”

বংশগতি

ডা. মিচেল বলেন, “পারিবারিক ইতিহাসে হৃদরোগ বা উচ্চ কোলেস্টেরল থাকলে তা হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। জীবনযাত্রা ও খাদ্যাভ্যাস যেমন প্রভাব রাখে তেমনি বংশগতিও প্রভাব রাখে। তাই নিয়মিত পরীক্ষা করা প্রয়োজন।”

পরীক্ষা করানোর পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, নিয়মিত শরীরচর্চা করা, তামাক-জাতীয় পণ্য বয়কট করা ইত্যাদি উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমায়।

পরিবারে কারও উচ্চ রক্তচাপ হয়ে থাকলে নিজেরটা নিয়মিত পরীক্ষা করা সুস্থ থাকার অন্যতম উপায় বলে মনে করে ডা. মিচেল।

ধূমপান

ডা. মিচেল বলেন, “ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এটা কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ায়। তামাকের রাস্যনিক উপাদান ধমনীতে আস্তরণে ক্ষতি সৃষ্টি করে। ফলে সহজে এতে চর্বি জমা বাঁধে ও ধমনীকে সরু বা বন্ধ করে দিতে পারে।”

হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ানোর পাশাপাশি ধূমপান ধমনী থেকে ‘প্লাক’ অপসারণকারী ভালো কোলেস্টেরলকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। তাই ধূমপান করে থাকলে নিয়মিত কোলেস্টেরল পরীক্ষা করানো প্রয়োজন যেন হৃদঝুঁকি দেখা দিলে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়।

আরও পড়ুন