কোলেস্টেরল কম হওয়ার লক্ষণ

কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি হওয়া যেমন খারাপ তেমনি অতি কম হলেও থাকতে পারে শারীরিক কোনো সমস্যা।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Sept 2022, 12:00 PM
Updated : 15 Sept 2022, 12:00 PM

দেহের সার্বিক কোলেস্টেরলের মাত্রা কম হওয়া দেহের জন্য ক্ষতিকর।

কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি থাকা খারাপ- এ কথা প্রায় সবাই জানেন।

যুক্তরাষ্ট্রের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. ফ্রান্সিককো লোপেজ-জিমেনেজ বলছেন, “কম কোলেস্টেরল সাধারণত ভালো। তবে দেহের সার্বিক কোলেস্টেরলের এই কমের মাত্রাতিরিক্ততা (লো-ডেনসিটি লিপোপ্রোটিন, ‘এলডিএল’ বা খারাপ কোলেস্টেরল-সহ) অনেক ধরনের স্বাস্থ্যগত সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।”

হতাশা: কোলেস্টেরলের কম মাত্রার কারণে হতাশা দেখা দিতে পারে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।

ইটদিস নটদ্যাট ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ম্যাসাচুসেটস’য়ের চিকিৎসক জেমস এম. গ্রিনব্লাট বলেন, "বিগত বছরগুলো ধরে আমরা বলে আসছি যে কোলেস্টেরল স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। সুস্থ থাকতে হলে তা বাদ দেওয়া উচিত। কিন্তু এটাও সত্যি যে কোলেস্টেরল মানসিক স্বাস্থ্যের সুস্থতার জন্য প্রয়োজন।”

মস্তিষ্ক প্রধানত কোলেস্টেরলের মাধ্যমে কাজ করে থাকে। মস্তিষ্কে ফ্যাটি অ্যাসিড এবং কোলেস্টেরলের অভাবে কার্যকারিতায় ঘাটতি দেখা দেয় এবং বাড়তে পারে মানসিক নানারকম জটিলতা।

রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে যাওয়া বিষণ্নতা-জনিত রোগব্যাধি সৃষ্টি করে। ফলে অনেক ক্ষেত্রে আত্মহত্যা বা নিজেকে আঘাত করার প্রবণতা বাড়তে পারে।

উদ্বেগ: কোলেস্টেরলের মাত্রা কম হওয়ার আরেকটি লক্ষণ হতে পারে উদ্বেগ বৃদ্ধি।

মিয়ামি’র মনোবিজ্ঞানী ড. এডয়ার্ড সুয়ারেজ বলেন, “পুরুষ এবং মহিলা- দুয়ের মধ্যেই কম কোলেস্টেরলের কারণে বিষণ্নতা বা উদ্বেগ সৃষ্টি হয় বলে ধারণা করা হয়েছে এবং এর প্রমাণও মিলেছে।”

তার মানে এই নয় যে নারীরা উচ্চ চর্বিযুক্ত খাবার খান না। যদিও আমরা মনে করি না যে নারীরা একেবারেই উচ্চ চর্বিযুক্ত খাবার খান না। যে নারীদের প্রাকৃতিকভাবেই কোলেস্টেরলের মাত্রা কম তাদের জন্য পুষ্টিকর খাবার হিসেবে মাছের তেল মাছ ও স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া কোলেস্টেরল বাড়াতে সহায়তা করতে পারে বলে মনে করেন তিনি।

অকাল জন্মদান: ২০১৫ সালের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, কোলেস্টেরলের কম মাত্রা অকাল জন্মদানের সঙ্গে জড়িত।

এই জরিপের সঙ্গে জরিত ‘আমেরিকান কলেজ অফ মেডিকেল জেনেটিক্স অ্যান্ড জেনোমিক্স’য়ের ডা. ম্যাক্স মুয়েনকে বলেন, “প্রাথমিক গবেষণায় দেখা গেছে যে, খুব বেশি কম কলেস্টেরল খুব বেশি কোলেস্টেরলের মতোই গর্ভাবস্থার জন্য ঝুঁকিকর। তবে এই তথ্য সুপ্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য আরও অনেক গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।”

তার মতে, গর্ভবতী মহিলাদের জন্য সবচেয়ে ভালো পরামর্শ হল- খাদ্য ও ব্যায়ামের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী ব্যক্তি বা বিশেষজ্ঞদের নির্দেশনা অনুসারে চলা। 

হেমোরাজিক স্ট্রোক: খুব কম কোলেস্টেরল স্ট্রোকের ঝুঁকিও বাড়াতে পারে।

বোস্টনের ‘ব্রিংহাম অ্যান্ড উইমেন’স হসপিটাল’ এবং ‘আমেরিকান অ্যাকাডেমি অব নিউরোলজি’র সদস্য পামেলা রিস্ট বলেন, “কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা কমানোর কৌশলগুলো, যেমন- খাদ্য পরিবর্তন করা বা স্ট্যাটিন্স গ্রহণ করা, কার্ডিওভাসকুলার রোগ প্রতিরোধে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।”

তিনি আরও বলেন, “নারীদের ওপর করা বড় গবেষণায় দেখা গেছে, কোলেস্টেরলের কম মাত্রাও নানান রকমের ঝুঁকি বাড়ায়। পুরুষদের তুলনায় নারীদের মাঝে স্ট্রোকের সম্ভাবনা বেশি। কারণ তারা বেশিদিন বাঁচে। তাই এই ঝুঁকি কমানোর উপায়গুলো সুনির্দিষ্ট করা জরুরি।”

ক্যান্সার: যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব হেল্থ’য়ের অংশ ‘ন্যাশনাল ক্যান্সার ইন্সটিটিউট’য়ের জ্যেষ্ঠ চিকিৎসক দিমেত্রিয়াস আলবানেজ বলেন, “আমাদের গবেষণায় নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, মোট কলেস্টেরলের কম মাত্রার কারণে নানান ধরনের ক্যান্সারের জন্য দায়ী।”

তিনি আরও জানান, ভালো কোলেস্টেরলের উচ্চ মাত্রা ক্যান্সারের জন্য প্রতিরক্ষামূলক হিসেবে কাজ করে।