কোলেস্টেরলের সমস্যা থাকলেও ডিম খাওয়া যেতে পারে।
ডিমে প্রচুর কোলেস্টেরল থাকে একথা যেমন সত্য, তেমনি রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি হলে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে সেটাও ঠিক। তারমানে এই নয় যে, আস্ত ডিম খেলে হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যাবে।
শুনতে অদ্ভুত লাগলেও ব্যাপারটা আসলেই তাই। আর এর ব্যাখ্যা জানতে হলে ডিম ও রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রার মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে জানা থাকতে হবে।
ডিমের সঙ্গে কোলেস্টেরলের ইতিহাস
এজন্য ১৯৬০ সালে প্রকাশিত কিছু গবেষণার ফলাফল দেখতে হবে।
ইটদিস নটদ্যাট ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ১৯৫০ থেকে ১৯৬০ সালের মধ্যে সিংহভাগ মানুষের খাদ্যাভ্যাস নিয়ে যেসব গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে সেগুলো কোলেস্টেরল ও হৃদরোগের মধ্যকার সম্পর্ক তুলে ধরে। রক্তে অতিরিক্ত কোলেস্টেরল রক্তনালীর দেয়ালে চর্বি জমাটা বাঁধায়, সৃষ্টি হয় ‘ব্লাড ক্লট’, যা পরে ডেকে আনে স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক।
এই গবেষণাগুলোর পরবর্তী পর্যায়ে কোলেস্টেরল কতটুকু খাওয়া হল আর এর সঙ্গে রক্তে কতটা কোলেস্টেরল আছে- সেই সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তারপরও ‘আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন’ মানুষের কোলেস্টেরল খাওয়া মাত্রা দৈনিক ৩০০ মি.লি. গ্রামে বেঁধে দেয়। আরও বলা হয় সপ্তাহের ৩টির বেশি ডিম খাওয়া চলবে না।
এই নির্দেশনার পরেই ডিম, চিংড়ি মাছ ও অন্যান্য যে খাবারগুলোতে কোলেস্টেরল আছে সেগুলো হয়ে গেল সুস্বাস্থ্যের সবচাইতে বড় শত্রু। আর এভাবেই প্রোটিন, ভিটামিন এ, ডি ও বি টুয়েলভ’য়ের সাশ্রয়ী এই উৎসটিকে মানুষ বর্জন করতে শুরু করল।
সঠিক তথ্য
২০১৫ সালে ‘ইউ.এস. ডায়েটারি গাইডলাইনস অ্যাডভাইজরি কমিটি’ নতুন তথ্য দেয়। সংস্থাটির গবেষণায় দেখা যায়, ভোজ্য উৎস থেকে আসা কোলেস্টেরল হৃদরোগের ঝুঁকির ওপর তেমন কোনো প্রভাব ফেলে না।
১৯৯৯ সালে একদল মানুষকে এক সপ্তাহে প্রতিদিন একটি ডিম খাওয়ানো হয় এবং সপ্তাহ শেষে দেখা যায় তাদের হৃদরোগের ঝুঁকি মোটেই বাড়েনি।
এর প্রেক্ষিত্রে ২০১৫-২০২২ ডায়েটারি গাইডলাইনস ফর আমেরিকান্স’ থেকে প্রতিদিন ৩০০ মি.লি. গ্রামের বেশি কোলেস্টেরল খাওয়া যাবে না এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়।
পরের গবেষণাগুলোতেও একই কথা উঠে আসে।
২০১৮ সালে ‘দ্য আমেরিকান জার্নাল অফ ক্লিনিকাল নিউট্রিশন’য়ে প্রকাশিত গবেষণায় ‘প্রিডায়াবেটিক’ ও ‘টাইপ টু ডায়াবেটিস’য়ে আক্রান্তদের নিয়ে গবেষণা করা হয়। এমন মানুষের হৃদরোগ হওয়া ঝুঁকি বেশি বলেই ধরা হয়।
তারা প্রায় তিন মাস ধরে প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে ১২টি করে ডিম খান এবং দেখা যায় তাদের হৃদরোগের ঝুঁকি একটুও বাড়েনি।
যাদের কোলেস্টেরল ইতোমধ্যেই বেশি তা কি ডিম খেতে পারবেন?
প্রথম কথা হল খাদ্যাভ্যাস থেকে কোনো খাবার একেবারে বাদ দেওয়া বা নতুন করে যোগ করার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কারণ দূরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত প্রতিটি মানুষের স্বাস্থ্যের অবস্থা ভিন্ন।
একজনের পরামর্শ আরেকজনের জন্য প্রযোজ্য নয়। আর যাদের কোলেস্টেরলের মাত্রা, রক্তচাপ ইত্যাদি স্বাভাবিক, ডায়াবেটিস নেই, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস মেনে চলেন তাদের ডিম খেতে কোনো বাধা নেই।
তাই বলে প্রতি সপ্তাহে এক ডজন করে ডিম খেয়ে ফেলাও বোকামি।
বিশেষজ্ঞরা কোলেস্টেরলের ভোজ্য উৎসগুলো থেকে সাবধান থাকতে বলেন। এর প্রধান কারণ হল, খাদ্যাভ্যাস প্রচুর পরিমাণে ‘স্যাচুরেটেড ফ্যাট’ আছে। আর এই চর্বি কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ায়। তার ওপর ভোজ্য উৎস থেকে আরও বাড়াবাড়ি মাত্রায় কোলেস্টেরল শরীরে গেলে সমস্যা তৈরি হতেই পারে।
আরও পড়ুন