যে কোনো বেলায় ভাজাপোড়া খাওয়া মানে সারাদিনের ক্যালরি একেবারে গ্রহণ করা।
Published : 17 Apr 2025, 05:04 PM
বন্ধু, পরিবার কিংবা প্রিয়জনের সঙ্গে বাইরে খেতে যাওয়ার মধ্যে এক ধরনের উৎসবের আমেজ থাকে। তবে এই আনন্দঘন খাওয়া-দাওয়া শেষ পর্যন্ত শরীরের জন্য ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে।
বিশেষ করে যেসব খাবার দিয়ে রেস্তোরাঁতে খাওয়া শুরু হয়— মানে কিছু অ্যাপেটাইজার বা পূর্বাহার।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক পুষ্টি প্রতিষ্ঠান ‘নিউট্রিশন নাও কাউন্সেলিং’-এর পুষ্টিবিদ লরেন মানাকার বলেন, “একটি নির্দিষ্ট ধরনের অ্যাপেটাইজার সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে।”
তার মতে, “পেঁয়াজ স্বাস্থ্যকর। তবে যেভাবে রেস্তোঁরাগুলোতে ‘ব্লুমইন অনিয়ন’য়ের মতো খাবার তৈরি করা হয়, তাতে সেই পুষ্টিগুণ আর থাকে না। বরং তা হয়ে দাঁড়ায় শরীরের জন্য বিপজ্জনক।”
ব্লুমইন অনিয়ন আসলে কী?
“ব্লুমইন অনিয়ন (Bloomin' Onion) নামটি এসেছে মূলত জনপ্রিয় আমেরিকান রেস্তোরাঁ চেইন আউটব্যাক স্টেকহাউস-এর মেনু থেকে”- রিয়েলসিম্পল ডটকম’য়ে প্রতিবেদনে বলেন লরেন মানাকার।
এটি এক ধরনের ডুবো তেলে ভাজা পেঁয়াজের খাবার, যেখানে বিশাল একটি পেঁয়াজ ফুলের মতো কেটে মোটা করে বাটা ব্রেডক্রাম্ব ও মসলা মিশিয়ে ভেজে পরিবেশন করা হয়। সঙ্গে থাকে পনির-ক্রিম নির্ভর ডিপিং সস।
এই একটি অ্যাপেটাইজারেই ক্যালোরির পরিমাণ হতে পারে প্রায় ১৯০০। যা একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের পুরো দিনের ক্যালোরি চাহিদার সমান!
শুধু তাই নয়, এতে থাকে উচ্চমাত্রার স্যাচুরেইটেড চর্বি, সোডিয়াম ও ট্রান্স-ফ্যাট। এগুলো দীর্ঘমেয়াদে উচ্চ রক্তচাপ, স্থূলতা, হৃদরোগ এমনকি ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘অ্যাকাডেমি অব নিউট্রিশন অ্যান্ড ডায়েটেটিকস’-এর তথ্য অনুসারে, এ ধরনের ভাজা খাবার নিয়মিত খেলে শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, এবং হজমপ্রক্রিয়াও দুর্বল হয়ে পড়ে।
বাংলাদেশে কতটা প্রাসঙ্গিক?
ঢাকাসহ দেশের বড় শহরগুলোতে এখন নানান ধরনের ‘থিম’ রেস্তোরাঁ গড়ে উঠেছে। এসবে ‘ব্লুমইন অনিয়ন’ বা এর অনুরূপ খাবার এখন সাধারণ ব্যাপার। যেমন থাকে, অনিয়ন রিং।
অথচ এসব খাবারের মধ্যে থাকা উচ্চমাত্রার চর্বি ও সোডিয়াম বা লবণ আমাদের শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। বিশেষ করে ‘ডিপ-ফ্রাইড’ বা ডুবো তেলে ভাজা অ্যাপেটাইজারগুলো হজমে সমস্যা সৃষ্টি করে এবং ওজন বাড়ানোর অন্যতম কারণ।
এছাড়া অনেকে খাবারে ঝাল কিংবা ভাজাপোড়া কিছু খেতে পছন্দ করেন, যা পশ্চিমা ঘরানার ব্লুমইন অনিয়নের মতোই ক্ষতিকর।
বিকল্প কী হতে পারে?
লরেন মানাকার বলেন, “অ্যাপেটাইজার মানেই যে ভাজাপোড়া বা ক্যালোরি-বোমা হতে হবে, তা নয়। চাইলে এক বাটি সালাদ দিয়েও খাবারের সূচনা করা যায়। এতে থাকবে ভিটামিন-আঁশ সমৃদ্ধ সবজি, যা হজমে সহায়ক। শুধু খেয়াল রাখতে হবে ড্রেসিং যেন হালকা হয়, খুব বেশি মেয়োনেইজ বা ক্রিম না থাকে।”
বাঙালি খাবারের মধ্য থেকেও স্বাস্থ্যকর অ্যাপেটাইজার বা পূর্বাহার বেছে নেওয়া যায় যেমন— টক দই, ছোলা ভুনা, মুড়ি আর শসা-টমেটো-ধনে পাতার সালাদ বা লেবু-চাটমসলা দেওয়া ডাল স্যুপ।
এসব খাবার স্বাদ ও স্বাস্থ্য দুটোরই সমন্বয় ঘটাতে পারে।
একবারই যা খাওয়া উচিত না
অনেকেই হয়ত ভাবছেন তাহলে কি প্রিয় ‘ব্লুমইন অনিয়ন’ বা ‘অনিয়ন রিং’ আর কখনও খাওয়া যাবে না?
বিশেষজ্ঞরা কিন্তু একেবারে নিষেধ করছেন না। বরং বলছেন, এটি যেন ‘অকেশনাল ট্রিট’ হয় অর্থাৎ বছরে এক-দুবার খাওয়া যেতে পারে, তবে নিয়মিত নয়।
মানাকার বলেন, “যে কোনো খাবারই মাঝে মাঝে খাওয়া ক্ষতিকর নয়। তবে তা যদি অভ্যাসে পরিণত হয়, তখনই সমস্যা দেখা দেয়। তাই নিজের শরীরের কথা চিন্তা করে মাঝে মাঝে নিজের প্রিয় ফাস্টফুডটিও এড়িয়ে যাওয়াই ভালো।”
রেস্তোরাঁয় খাওয়া মানেই যে অনিয়ন্ত্রিত ও অস্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে, এমন কোনো কথা নেই।
বরং পরেরবার বাইরে খেতে গেলে টেবিলে ভাজাপোড়া খাবার আসলে, একবার ভেবে দেখবেন শরীর কি সত্যিই এই ১৯০০ ক্যালোরির চাপ নিতে পারবে!
আরও পড়ুন
দেহে মসলাদার ভাজা খাবার খাওয়ার বাজে প্রভাব