মুখের তৈলাক্ত ও লালচেভাব কমাতে সাহায্য করে ‘আইস ওয়াটার ফেইশল’।
Published : 12 Nov 2022, 04:38 PM
‘আইস ওয়াটার ফেইশল’ বা বরফ পানি দিয়ে মুখ ধোয়ার পদ্ধতি বেশ প্রাচীন।
তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সম্প্রতি ত্বকের যত্নে বরফ ঠাণ্ডা পানির ব্যবহার বিশেষত বরফ পানিতে মুখ ডূবিয়ে রাখা বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
আইস ওয়াটার ফেইশল কী?
ঠাণ্ডা পানির ফেইশল খুব সহজ একটা কাজ। একটা পাত্রে বরফ ও পানি নিয়ে তা পুরা মুখে ঝাপ্টা দিতে হবে। ২০ থেকে ৩০ মিনিট ঝাপ্টা দেওয়াই যথেষ্ট।
এই বিষয়ে কানাডার চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ এবং ‘ফেইস ডার্মাটোলজি’র প্রতিষ্ঠাতা গীতা যাদব ওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেন, “সারা শরীরে ঠাণ্ডা পানি ব্যবহার পেশির ক্লান্তি ও ত্বকের জ্বালা কমাতে সহায়তা করে। প্রাচীন গ্রিক ও মিশরে এই পদ্ধতি প্রচলিত ছিল। একবিংশ শতকেও এর পুনরাবৃত্তি ঘটেছে।”
ডা. যাদবের মতে, “বরফ পানির ঝাপটা প্রাকৃতিকভাবে ত্বক উন্নত করে।”
উপকারিতা
“ঠাণ্ডা পানির ঝাপটা প্রদাহ কমায় এবং ত্বককে সতেজ করে,” বলেন ডা. যাদব।
তিনি আরও বলেন, “এই প্রদাহ কমার ফলে অস্থায়ীভাবে দাগ, রোসেসিয়া প্রবণ ত্বকের লালচেভাব ও মলিনতা কমাতে সহায়তা করে।”
ত্বক অতিরিক্ত ঠাণ্ডা তাপমাত্রার সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া করে। ফলে এর নিচের রক্তনালীগুলো সংকুচিত হয়। ত্বকের সেই অংশে রক্তপ্রবাহ কমে, ফলে লালচে ও ফোলাভাব হ্রাস পায়। ত্বক স্বাভাবিক তাপমাত্রা বা ‘হোমিওস্ট্যাসিস’য়ে ফিরে আসলে কৈশিকনালীগুলো খুলে যায় ও ত্বকের সতেজতা ফুটে ওঠে।
নিউ ইয়র্ক’য়ের বোর্ড-প্রত্যয়িত চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ শিল দেশাই সলোমনি আরেক প্রতিবেদনে বলেন, “ঠাণ্ডা পানি মুখের সজীবতা এবং আরও উজ্জ্বল রং দিতে সাহায্য করে। এটি ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় এবং ত্বককে আক্ষরিক অর্থে জাগিয়ে তোলে।”
“যেহেতু ঠাণ্ডা পানি ত্বকের ছিদ্রগুলো সংকুচিত করে, ফলে মুখের চিটচিটে ভাব কমে। কারণ ত্বকের ছিদ্রগুলোর মাধ্যমে সিবেসিয়াস গ্রন্থিগুলোর মাধ্যমে উৎপাদিত তেল ত্বকে ভেসে ওঠে। মুখে ঠাণ্ডা পানির ঝাপটা ত্বকের ছিদ্রগুলোর আকার যথেষ্ট পরিমাণে কমিয়ে আনে। ফলে তৈলাক্ততা কমে।”
এছাড়াও এটা উদ্বেগ কমায় এবং চেহারায় ঝটপট সতেজভাব আনে বলে জানান, ডা. যাদব।
এক সপ্তাহ ‘আইস-ওয়াটার’ ব্যবহারের উপকারিতা
ডা. যাদব নিজের অভিজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, “ইউরোপে তিন সপ্তাহ কর্মসূচি শেষে খুব কম ঘুম ও অধিকাংশ সময় বিমানে কাটানোর পরে আমার ত্বক একদমই নির্জিব আর মুখে ফোলাভাব দেখা দিয়েছিল। ঠাণ্ডা পানি আদৌ কোনো পরিবর্তন আনতে পারে কি-না তা দেখতে এক সপ্তাহ আমি মুখে ঠাণ্ডা পানির ঝাপটা দেই।”
প্রতিদিন সকালে একটা পাত্রে বরফ ও পানি নিয়ে তা সরাসরি মুখে ঝাপটা দিয়েছিলেন তিনি। প্রথম দিকে অভ্যস্ত হতে কিছুটা সময় লেগেছিল তবে তৃতীয় দিনে তা অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছিল। তাছাড়া, আমি খুব একটা উঠার মত নই, সেক্ষেত্রে সকালে ঠান্ডা পানিতে গোসল ও ঝাপ্টা আমাকে চটঝলদি সজীব করে তুলতে সাহায্য করত।
এর ফলে তার ত্বকে দেখা দেওয়া বেশ কিছু পরিবর্তন সম্পর্কে তিনি বলেন, “এতে আমার ত্বক আগের সজীবতা ফিরে পায়। গালের ফোলাভাব কমেছে। চোখ ও চিবুকের আশপাশের ফোলাভাবও হ্রাস পেয়েছে।”
তাছাড়া ত্বকে মসৃণ ও কোমল ভাব দেখা দেয়। এই পরীক্ষা চলাকালীন তিনি ত্বকের বর্ণের প্রসাধনী ব্যবহার বন্ধ রেখেছিলেন।
সামগ্রিকভাবে, বরফ ঠাণ্ডা পানি ত্বকের যে উপকার করেছে তাতে তিনি খুশি।
তবে এটাকে দৈনন্দিন রুটিনের অংশ করার ব্যপারে তিনি বলেন, “এই প্রক্রিয়ার ফলাফলের চেয়ে পরিশ্রম বেশি। ব্যস্ত জীবনে প্রতিদিন বরফের পাত্র পূরণ করা একটু ঝামেলার কাজ।”
সকালে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে গোসল করা বিষয়টা পছন্দ না হলে অন্য উপায় বেছে নিতে হবে।
সতেজ ও টানটান ত্বক পাওয়ার আরেকটি সহজ উপায় সম্পর্কে ডা. যাদব বলেন, “মুখকে যদি বরফ পানিতে ডুবিয়ে রাখার চিন্তা করেন তাহলে আইস রোলার ও ঠাণ্ডা ফেইস গ্লোবের মতো সরঞ্জাম ব্যবহার করা যেতে পারে। এগুলো একই রকম ফলাফল দেয়।”
রেফ্রিজারেটরে শিট মাস্ক রেখে ঠাণ্ডা মাস্কও ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে ফলাফল কিছুটা কম মাত্রায় পেলেও কাজ ভালো হয়, বলে মন্তব্য করেন এই চিকিৎসক।
আরও পড়ুন