ফল স্বাস্থ্যকর খাবার। তবে অতিরিক্ত খেলে নানান সমস্যা হতেও পারে।
Published : 14 Jan 2023, 05:06 PM
কোনো কিছুই বেশি ভালো নয়। ফলের ক্ষেত্রেও কথাটা খাটে।
যদিও ফল স্বাস্থ্যকর খাবার হিসেবে ধরা হয়। তবে ফল মানে প্রাকৃতিক চিনির উৎস। তাই ‘ন্যাচারাল ক্যান্ডি’ হিসেবে পরিচিত এই খাবার অতিরিক্ত খেলে স্বাস্থ্যের ওপর বাজে প্রভাব পড়তেও পারে।
বিশেষ করে যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে তাদের ফল খাওয়ার ক্ষেত্রে সাবধাণ থাকা দরকার।
কিছু সম্ভাব্য অপকারিতা
বেশি খেলে ভালো খাবার থেকেও শরীর খারাপ করে। ফলের ক্ষেত্রেও সেই কথাটা খাটে।
এই বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা নিবাসী পুষ্টিবিদ সারাহ গারন ‘ইটদিস নটদ্যাট ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, “যেমন- আপেল, বেরি, টক বা সিট্রাস-সহ অন্যান্য ফল প্রাকৃতিকভাবে শরীর আর্দ্র রাখতে সাহায্য করে। পাশাপাশি নানান পুষ্টি উপাদান দিতে পারে। তবে বেশি খেলে নানান সমস্যা দেখা দিতে পারে।”
ফিলাডেলফিয়া’র পুষ্টিবিদ ও ‘হেল্থফুল লেন নিউট্রিশন’য়ের প্রতিষ্ঠাতা অ্যামান্ডা লেন ব্যাখ্যা করেন, “বেশি ফল খেলে খিদা মরে যাবে। ফলে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য খাবার যেমন- স্বাস্থ্যকর চর্বি ও প্রোটিন গ্রহণ করা হবে না।”
তিনি আরও বলেন, “বিশ্বাস করুন অতিরিক্ত ফল খাওয়ার কারণে ওজন কমানোর লক্ষ্যও ভ্রষ্ট হয়।”
“তাছাড়া অতিরিক্ত ফল খাওয়ার কারণে রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ বেড়ে যেতে পারে, যা কিনা আরও খাবার ইচ্ছে বাড়ায়”- একই প্রতিবেদনে মন্তব্য করেন যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডে অবস্থিত ‘ক্রেইভ নারিশমেন্ট’য়ের পুষ্টিবিদ ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বনি নিউলাইন।
নির্দিষ্ট কিছু রোগীর ক্ষেত্রে যে রকম প্রভাব ফেলে
‘প্রিডায়াবেটিস’ ও ‘ডায়াবেটিস’য়ে আক্রান্তদের ক্ষেত্রে কার্বোহাইড্রেইট গ্রহণের দিকে খেয়াল রাখতে হয়। আর ফলে প্রচুর পরিমাণে কার্ব থাকে।
‘টু-ডে ডায়াবেটিস ডায়েট’ বইয়ের মার্কিন লেখক ও পুষ্টিবিদ এরিন পালিনস্কি-ওয়েড এই বিষয়ে বলেন, “যাদের এই সমস্যা রয়েছে তাদের প্রাকৃতিকভাবে মিষ্টি খাবার গ্রহণের ক্ষেত্রেও সাবধান থাকতে হবে। বেশিরভাগ ফলই কার্বোহাইড্রেইটে পরিপূর্ণ তাই সামঞ্জস্যতা রক্ষাই হল প্রধান চাবিকাঠি।”
পরিমাণের পাশাপাশি কোন কোন ফল ও খাবার একসঙ্গে খাওয়া উচিত সেটা জানতে হবে।
পালিনস্কি-ওয়েড পরামর্শ দেন, “যাদের ডায়াবেটিস আছে তারা দিনে একবেলার খাবার হিসেবে বা নাস্তায় ফল খেতে পারেন। তবে অবশ্যই সঙ্গে থাকতে হবে প্রোটিন, আঁশ ও স্বাস্থ্যকর চর্বি বা তেল।”
আবার যাদের ‘গ্যাস্ট্রোইনটেস্টিনল’ বা পেট ও অন্ত্রের সমস্যায় ভোগেন তারা সকালে, দুপুরে বা রাতের খাবারের সময় ফল খেলেও জটিলতায় পড়তে পারেন। হতে পারে সেটা গ্যাসের সমস্যা বা ফোলাভাব।
পালিনস্কি-ওয়েড বলেন, “আইবিএস’ সমস্যা একেকজনের ক্ষেত্রে একেকরকম হয়। তাই ফল খেয়ে জটিলতা দেখা দিলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে কোন ফলগুলো বাজে প্রভাব রাখবে না, সেগুলো বাছাই করতে হবে।”
ফলের মিষ্টতা কি ক্ষতিকর?
বিষয় হল- ফলের মধ্যে আলাদাভাবে চিনি যোগ করা হয় না, প্রাকৃতিকভাবেই সেটা বেশি থাকে। স্বাস্থ্যের ওপরে তাই এর প্রভাব ভিন্ন।
নিউলাইন বলেন, “কৃত্রিম চিনি ও প্রাকৃতিক চিনির ক্ষেত্রে দেহ আলাদা ভাবে সারা দেয়। ফলে থাকা প্রাকৃতিক মিষ্টি রক্তে ধীরে মেশে। এর কারণ হল ফলে থাকা আঁশ ও পলিফেনল্স, দেহে ধীরে ভাঙে। মানে শরীরে শোষিত হয় আস্তে ধীরে। যে কারণে ফলে থাকা চিনি দ্রুত রক্তে মিশে শর্করার মাত্রা তাড়াতাড়ি বাড়ায় না।”
তাই বলা যায় ফলের মিষ্টতা শরীরের জন্য ক্ষতিকর নয়। বরং দৈনিক খাদ্যতালিকায় ফল যুক্ত করা শরীরের জন্য উপকার বয়ে আনবে বলে জানান, পালিনস্কি-ওয়েড।
কতটা বেশি হলে অতিরিক্ত ফল খাওয়া বোঝাবে?
নাস্তা হিসেবে ফল স্বাস্থ্যকর পছন্দ।
তবে লেন পরামর্শ দেন, “খুব বেশি হলে দিনে চার থেকে পাঁচবার ফল খাওয়া যেতে পারে।”
তিনি আরও বলেন, “এই পরিমাণ ফল খাওয়া অতিরিক্ত না হলেও পরিমাণ এবং ভিন্নতার দিকে খেয়াল রাখতে হবে। ফলের সঙ্গে ‘শ্বেতসার-হীন সবজি, শুঁটি, পূর্ণ শষ্য, উদ্ভিজ্জ ও প্রাণিজ প্রোটিন-সহ খাওয়াই হবে সুষম খাদ্যাভ্যাসের লক্ষণ।”
আরও পড়ুন