Published : 29 Apr 2025, 06:46 PM
সকালে উঠে ধোয়া-মোছার আগেই অনেকের প্রথম কাজ এক কাপ ধোঁয়া ওঠা কফি হাতে নেওয়া। অনেকে আবার নাস্তার আগে কফি পান না করে যেন সকালটাই শুরু করতে পারেন না।
তবে খালি পেটে কফি পান কী আদৌ ভালো? এর পেছনে আছে একাধিক বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা ও চিকিৎসকদের অভিমত।
কফি ও অ্যাসিডিটির (অম্লীয়) সম্পর্ক
কফি হল এক ধরনের অ্যাসিডিক (অম্লীয়) পানীয়। পিএইচ স্কেলে শূন্য থেকে চৌদ্দের মধ্যে সাতের নিচে যেসব পানীয় পড়ে, সেগুলো অ্যাসিডিক।
ওয়েলঅ্যান্ডগুডে ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, কফির পিএইচ মাত্রা গড়ে ৪.৮ থেকে ৫.১। অর্থাৎ এটি স্বাভাবিকভাবেই অ্যাসিডিক।
যারা অ্যাসিড রিফ্লাক্স বা গ্যাস্ট্রিক সমস্যায় ভোগেন, তাদের জন্য খালি পেটে কফি পান সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে।
গবেষণার ফলাফলে স্বস্তির বার্তা
তবে সাম্প্রতিক একটি পর্যালোচনামূলক গবেষণায় দেখা গেছে, কফির অ্যাসিডিটির পরও এটি দীর্ঘমেয়াদে পেটের আবরণে ক্ষতি করে না এবং ‘গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল’ (পাকস্থলী ও অন্ত্র সংক্রান্ত) সমস্যা বাড়িয়ে দেওয়ার সম্ভাবনাও কম।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘টাফ্টস মেডিকেল সেন্টার’য়ের গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্ট ডা. সুপ্রিয়া রাও এই গবেষণার সঙ্গে একমত।
তবে তার মতে, “খালি পেটে কফি পানের বদলে কিছু হালকা খাবারের সঙ্গে গ্রহণ করা ভালো। এতে পেটে সরাসরি অ্যাসিডের প্রভাব কমে এবং ডায়রিয়া বা ‘আইবিএস’-এর মতো রোগীদের জন্য আরামদায়ক হয়।”
খালি পেটে কফি খাওয়ার সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
অ্যাসিড রিফ্লাক্স বা গ্যাস্ট্রিক বেড়ে যেতে পারে: ডা. রাও একই প্রতিবেদনে বলেন, “যাদের আগে থেকেই গ্যাস্ট্রিক বা অ্যাসিড রিফ্লাক্সের সমস্যা আছে, তাদের ক্ষেত্রে খালি পেটে কফি খাওয়া সমস্যা বাড়াতে পারে। এমনকি যাদের পেটে আলসার রয়েছে, তাদের জন্য এই অভ্যাস আরও ক্ষতিকর হতে পারে।”
পেটে ব্যথা ও ফুলে যাওয়ার আশঙ্কা: ক্যাফিনের প্রাকৃতিক উদ্দীপক প্রভাব রয়েছে। এটি অন্ত্রের কার্যক্রম বাড়িয়ে দেয়, ফলে দ্রুত মলত্যাগের প্রয়োজন দেখা দেয়। তবে আইবিএস (ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম) এটি একটি রোগ যা অন্ত্রের কার্যক্রমে থাকলে- এর প্রভাবে পেটেব্যথা, গ্যাস বা ফাঁপা-ভাব দেখা দিতে পারে।
এ বিষয়ে ডা. রাও বলেন, “যাদের কফি পানে পেটে অস্বস্তি হয় বা মলত্যাগের ধরনে পরিবর্তন আসে, তাদের আমি কফির পরিমাণ কমাতে বলি।”
নার্ভাস বা জিটারি (শারীরিক বা মানসিকভাবে অস্থির বা উদ্বিগ্ন) হয়ে যাওয়া: খালি পেটে কফি খেলে ক্যাফিন দ্রুত রক্তে মিশে যায়। ফলে অতিরিক্ত উদ্দীপনা, নার্ভাস লাগা, হাত কাঁপা, এমনকি হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়ার মতো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।
রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যেতে পারে: বিশেষ করে যারা ডায়াবেটিস বা রক্তে উচ্চ শর্করার মাত্রার ঝুঁকিতে আছেন, তাদের জন্য কফি খালি পেটে গ্রহণ করলে রক্তে শর্করার মাত্রা কিছুটা বেড়ে যেতে পারে।
সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, নাস্তার সঙ্গে কফি পানের তুলনায় খালি পেটে কফি গ্রহণের ফলে রক্তে গ্লুকোজের প্রভাব ৫০ শতাংশ বেশি হয়।
তাহলে কফি ছাড়তে হবে?
দীর্ঘমেয়াদে খালি পেটে কফি পান মারাত্মক ক্ষতি করে না, এমনটাই বলছেন চিকিৎসক ও গবেষকেরা। তবে যারা খালি পেটে কফি গ্রহণ করে শরীরে অস্বস্তি অনুভব করেন, তাদের উচিত খাদ্যাভ্যাসে সামান্য পরিবর্তন আনা।
খালি পেটে কফি খাওয়ার বিকল্প কিছু পরামর্শ
খালি পেটে কফি খাওয়ার অভ্যাস ভালো না খারাপ— এর নির্দিষ্ট উত্তর হয়ত সবার জন্য এক নয়। অনেকেই কোনো সমস্যা ছাড়াই নিয়মিত খালি পেটে কফি গ্রহণ করছেন।
তবে যাদের আগে থেকেই গ্যাস্ট্রিক, আইবিএস বা রক্তে শর্করার সমস্যা রয়েছে, তাদের এই অভ্যাস নিয়ে আরও সতর্ক হওয়া উচিত।
আরও পড়ুন
সকালে কফি পানের আগে যা করা উচিত