নানান রকম খাবারে থাকা উপাদান নাঁক বন্ধ থাকার সমস্যা উপশম করতে পারে।
Published : 24 Jan 2024, 10:15 AM
শীতকালে ঠাণ্ডা, কাশির পাশাপাশি নাক বন্ধের সমস্যাও দেখা দেয়। এর মাত্রা বৃদ্ধিতে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হয়।
তবে নাক বন্ধের সমস্যা দূর করতে পুষ্টিকর খাবার খাওয়া উপকারী। আর এরকম খাবারের সংখ্যাও কম নয়।
যদিও নাক বন্ধ হওয়ার সমস্যা কয়েদিনের মধ্যে নিজে থেকেই ভালো হয়ে যায়। তবে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করলে আরাম লাগে আর দ্রুত সেরে ওঠে।
ভিটামিন সি: রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সব থেকে ভালো কাজ করে। ভিটামিন সি প্রতিদিন খাবার তালিকায় যোগ করা উপকারী।
যুক্তরাষ্ট্রের টাটকা সবজি বাজারজাতকরণ প্রতিষ্ঠান ‘ফ্রেশ কমিউনিকেশন্স’য়ের নিবন্ধিত পুষ্টিবিদ এমি ডেভিস বলেন, “ভিটামিন সি অ্যান্টি অক্সিডেন্টের মতো কাজ করে প্রদাহ কমায় এবং নাক বন্ধ হওয়ার সমস্যা দূর করে।”
ব্রোমেলেইন: এমন একটি এনজাইম যা সহজে হজমের সহায়তা করে এবং রান্নায় মাংসকে নরম করে।
“শরীরের ব্যথা, ফোলা ভাব কমাতে এবং নাকের গহ্বরে অতিরিক্ত শ্লেষ্মা ভাঙতে সহায়তা করে ব্রোমেলেইন”- বলেন ডেভিস।
উদ্ভিজ্জ যৌগ: ভিটামিন ও খনিজের পাশাপাশি মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টগুলো উপকারী যৌগ হিসেবে কাজ করে। উদ্ভিদের যৌগ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বজায় রাখতে মূল ভূমিকা রাখে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের প্রদাহ কমায় এবং উন্মুক্ত রেডিকেলের বিরুদ্ধে কাজ করে।
অক্সিডেটিভ অণুগুলো দীর্ঘমেয়াদী রোগ থেকে শুরু করে সাইনাসের চাপ ও নাক বন্ধের মতো সমস্যা সৃষ্টির জন্য দায়ী।
স্যালিসাইলিক অ্যাসিড: “প্রদাহ বিরোধী উপাদান সমৃদ্ধ এবং এটি শ্লেষ্মা ভেঙে নাক পরিষ্কার করতে সহায়তা করে”- বলেন ডেভিস।
অনেকেই ব্রণের সমস্যা দূর করতে স্যালিসাইলিক অ্যাসিড ব্যবহার করে থাকেন। এটা প্রাকৃতিক ভাবে খাবারে পাওয়া যায়।
সিস্টিইন: একটি অ্যামিনো অ্যাসিড বা প্রোটিনের শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। গবেষণায় দেখা যায়, এটি একটি ‘মিউকোলাইটিক এজেন্ট-টু’ বা এমন কিছু যা শরীরে শ্লেষ্মা ভেঙে ফেলতে সাহায্য করে। আর নাকের নাকবন্ধ ভাব দূর করতে পারে।
পানি: আরোগ্য লাভে সহায়তা করে, বিশেষ করে যখন নাক বন্ধ থাকে।
ডেভিস ব্যাখ্যা করেন, “প্রচুর পানি ও গরম চা পান করে আর্দ্র থাকা যায়। এটা শ্লেষ্মা পাতলা করে এবং সাইনাসের চাপ প্রতিরোধ করতে পারে।”
নাক বন্ধের সমস্যা সমাধানে কাজ করে এমন কয়েকটি খাবার হল-
আনারস: আনারস প্রাকৃতিক ব্রোমেলেইন ও ভিটামিন সি সমৃদ্ধ। এটা সাইনাসে জমাট ভাব কমাতে সহায়তা করে। হিমায়িত এবং টিনজাত আনারস খাওয়াও উপকারী। তবে খেয়াল রাখতে হবে এতে যেন বাড়তি চিনি যোগ করা না থাকে।
হিমায়িত ও টিনজাত আনারসে প্রক্রিয়াজাত চিনি ব্যবহার করা হয় যা প্রদাহকে আরও খারাপ করতে পারে।
রসুন: খাওয়া নাক বন্ধ ভাব কমাতে সহায়তা করে। এতে আছে শক্তিশালী প্রদাহনাশক উপাদান, ব্যাক্টেরিয়া ও ভাইরাস বিরোধী উপাদান, যা নাক বন্ধের মূল কারণ খুঁজে সমাধানে সহায়তা করে।
মুরগির সুপ: কিছু খাবার গরম খেতে ভালো লাগে, মুরগির সুপ এমন একটি খাবার যা এই মৌসুমে খেতে বেশ মজা। মুরগির সুপ সম্পূর্ণ পানি ভিত্তিক এবং এতে থাকা অ্যামিনো অ্যাসিড ‘সিস্টিইন’, ভাপ উৎপাদন করে বন্ধ নাকের সমস্যা সমাধান করে থাকে।
‘চেস্ট’ সাময়িকীতে প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রের ‘মাউন্ট সিনাই হসপিটাল’য়ের করা গবেষণায় দেখা গেছে, মুরগির সুপ নাসিকার শ্লেষ্মা গরম পানির তুলনায় দ্রুত অপসারণে ভূমিকা রাখে।
মধু: প্রাকৃতিক মিষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ। এতে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, প্রদাহ, ভাইরাস ও ব্যাক্টেরিয়া বিরোধী উপাদান। আরও আছে স্যালিসাইলিক অ্যাসিড যা নাঁক বন্ধের সমস্যা দূর করে।
২০২১ সালের এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, মধু শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ কমাতে এবং নাক বন্ধ হওয়া দূর করতে পারে।
সামুদ্রিক খাবার: নাক বন্ধের সমস্যা কমাতে বিভিন্ন রকমের সামুদ্রিক খাবার খাওয়া উপকারী যেমন- শামুক ও কাঁকড়ার মতো খাবারে রয়েছে জিংক। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের সামুদ্রিক মাছও উপকারী।
আদা: ডেভিস বলেন, “উষ্ণ গরম পানিতে আদা মিশিয়ে গ্রহণ করলে নাক পরিষ্কার হয় এবং গলা ব্যথা কমে।”
তিনি জানান, এতে রয়েছে উদ্ভিজ্জ যৌগ যা প্রদাহ কমায়। আদাতে অ্যান্টি-হিস্টামিন বেশি থাকে যা নাক বন্ধের জন্য দায়ী অ্যালার্জি দূর করতে উপকারী।
চা: চায়ের বাষ্প নিঃশ্বাসের মাধ্যমে নিলে, নাকের শ্লেষ্মা ভেঙে দিতে সহায়তা করে।
গ্রিন টি ও পুদিনার চা উদ্ভিজ্জ যৌগ সমৃদ্ধ যা প্রদাহ কমায়। এছাড়াও পুদিনার তেল সাইনাসের সমস্যা কমাতে সহায়তা করে।
জাম্বুরা: সিট্রাস বা টক ধরনের ফল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সহায়ক ভিটামিন সি সমৃদ্ধ। জাম্বুরা উচ্চ স্যালিসাইলিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ যা নাক বন্ধের সমস্যা দ্রুত নিরসন করে। ফলে আরাম পাওয়া যায়।
শীত মৌসুম সিট্রাস ফল খাওয়ার উপযুক্ত সময়। ঠাণ্ডা-কাশি কমাতে ফল ও সবজি উপকারী।
মরিচ: ঠাণ্ডা ও নাক বন্ধের সমস্যা দূর করতে মরিচ উপকারী। এতে থাকা ক্যাপসাইসিন নাঁক-সম্পর্কিত সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে।
আরও পড়ুন
৬ ধরনের খাবার গলা ব্যথায় এড়ানো উচিত