দুটাই স্বাস্থ্যকর বীজ। তবে পুষ্টির গুণের দিক থেকে উপকারিতা ভিন্ন।
Published : 08 Apr 2025, 05:24 PM
চিয়া বীজ ও ফ্ল্যাক্স বা তিসির বীজ পুষ্টিকর এবং ‘সুপারফুড’ হিসেবে পরিচিত।
এই দুই খাবারের স্বাদ, গঠন এবং পুষ্টিগুণে কিছু পার্থক্য থাকলেও, স্বাস্থ্য উপকারে ভরা।
তবে এর মধ্যে কোনটি শরীরের জন্য একটু বেশি উপকারী হবে, তা নির্ভর করবে ব্যক্তির পুষ্টি প্রয়োজন এবং খাদ্যাভ্যাসের ওপর।
চিয়া বীজ কী?
চিয়া বীজ হচ্ছে চিয়া গাছের বীজ, যা মূলত মেক্সিকো এবং গুয়াতেমালায় জন্মায়। এই বীজগুলো ছোট, সমতল, ডিম্বাকৃত এবং নানান রংয়ের হতে পারে, যেমন- সাদা, কালো বা লাল।
রিয়েলসিম্পল ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে নিউ ইয়র্ক ভিত্তিক পুষ্টিবিদ মারিসা কার্প বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রে কালো চিয়া বীজ সব ধরনের মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ বলা হয়ে থাকে। চিয়া বীজে প্রচুর পরিমাণ আঁশ থাকে যা হজমের জন্য অত্যন্ত উপকারী।”
এটি শরীরের কোলেস্টেরল কমাতে, রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ করতে এবং দীর্ঘ সময় ক্ষুধা অনুভব না করতে সাহায্য করে।
এছাড়াও চিয়া বীজে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ক্যালসিয়াম, ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডস এবং উদ্ভিজ্জ প্রোটিন থাকে, যা শরীরের বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারে আসে।
চিয়া বীজের স্বাদ ও গঠন
স্বাদ বেশ হালকা, এক ধরনের মৃদু বাদামি গন্ধ ও স্বাদ অনুভব হয়; যা অনেকটা বাদাম বা সাদা তিলের মতো। মানে এ খাবারের খুব তীব্র স্বাদ নয়, বরং তেমন কোনো বিশিষ্ট স্বাদও থাকে না।
চিয়া বীজ সাধারণত অন্যান্য উপকরণের সাথে মিশে যায়, তাই এর স্বাদ অন্যান্য খাবারের সাথে মিশে গিয়ে আরও মৃদু এবং হালকা মিষ্টি হয়ে ওঠে।
নিউ ইয়র্ক ভিত্তিক আরেক পুষ্টিবিদ অ্যান জিয়াটা একই প্রতিবেদনে বলেন, “শুকনা অবস্থায় এটি হালকা ক্রাঞ্চি বা মচমচে। তবে, যখন পানি বা দুধে ভিজিয়ে রাখা হয়, তখন এটি নরম জেলির মতো হয়ে যায় এবং মজাদার গঠন সৃষ্টি করে।”
এই বীজগুলো বিভিন্ন রকমের মিষ্টি বা সস দিয়ে ভিজিয়ে চিয়া পুডিং তৈরি করা হয়, যা খুবই জনপ্রিয় একটি খাবার।
তিসির বীজ কী?
ফ্ল্যাক্স বা তিসির বীজ ‘লিনসিড’-ও বলা হয়। এ উপাদান তিসি বা শণ গাছের বীজ, যা মূলত তুরস্ক এবং ইরানে জন্মায়- জানান অ্যান জিয়াটা।
“এই বীজগুলো সোজা, তির্যক এবং বাদামি রংয়ের। এটাও চিয়ার মতো আঁশ এবং ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডের ভালো উৎস”- বলেন্ এই পুষ্টিবিদ।
এছাড়াও, এতে ‘লিগন্যান্স’ নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য এবং হাড়ের সুস্থতার জন্য উপকারী।
আর এতে থাকা প্রোটিন এবং ভিটামিন ই শরীরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
তিসির বীজের স্বাদ ও গঠন
এর স্বাদ একটু গাঢ়, মাটির গন্ধযুক্ত এবং মাঝারি রকমের বাদামি বা তিলের মতো।
জিয়াটা বলেন, “আস্ত তিসির বীজ কিছুটা খসখসে ও আঁশযুক্ত থাকে। তবে মাটির মতো মিহি গুঁড়া করলে গাঢ় মিশ্রণ তৈরি করে।”
যখন তিসির বীজ গুঁড়া করে পানিতে মেশানো হয়, তখন এটি জেলির মতো হয়, যা বিভিন্ন ধরনের নাস্তা বা পুডিং তৈরিতে উপযোগী।
চিয়া বীজ যেভাবে খাওয়া যায়
“বেশ কয়েকটি উপায়ে খাওয়া যায়। তবে খাওয়ার আগে অবশ্যই তরল (দুধ বা পানি) দিয়ে ভিজিয়ে নিতে হবে। কারণ শুকনা অবস্থায় এটি শরীরে পানি শোষণ করতে পারে। ফলে পাচনতন্ত্রে সমস্যা বাড়ে”- বলেন মারিসা কার্প।
চিয়া বীজ দিয়ে চিয়া পুডিং তৈরি করা এখন বেশ প্রচলিত। এই পুডিং সহজেই তৈরি করা যায়।
এক্ষেত্রে, চিয়া বীজ এবং পছন্দের দুধ বা তরল কোনো উপাদান একত্র করে ফ্রিজে রেখে দিলেই পরদিন এটি পুডিংয়ের মতো হয়ে যাবে।
চিয়া বীজের আরেকটি জনপ্রিয় ব্যবহার হল ‘স্মুদি’। এটি মিশিয়ে নিলে স্মুদি আরও গাঢ় এবং পুষ্টিকর হয়।
তিসির বীজ যেভাবে খাওয়া যায়
কাঁচা বা গুঁড়ো অবস্থায় খাওয়া যেতে পারে। এটি নাস্তা, মাফিন, সালাদ বা রুটির ওপর টপিং (কোনো কিছু ছড়ানো বা লাগানো) হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
এছাড়াও, এটি তেল হিসেবেও ব্যবহার করা যায়, যা সালাদের ড্রেসিং বা ‘গার্নিশ’ হিসেবে খুবই উপকারী।
জিয়াটা বলেন, “তিসির তেলের সীমাবদ্ধতা হল অল্প তাপমাত্রায় পোড়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। তাই এটি রান্নায় ব্যবহার না করাই ভালো। গুঁড়া তিসির বীজ দই, স্মুথি বা সিরিয়ালে মেশানো যেতে পারে।”
চিয়া বীজ কি তিসির পরিবর্তে ব্যবহার করা যেতে পারে?
বেশ কিছু ক্ষেত্রে চিয়া বীজ এবং তিসির বীজ একে অপরের পরিবর্তে ব্যবহার করা যেতে পারে।
জিয়াটা উদাহরণ দেন, “যেমন- স্মুথি বা স্ন্যাকসে একে পরিবর্তন করে ব্যবহার করা যায়। তবে তিসির স্বাদ একটু বেশি জোড়ালো এবং গাঢ়, যা চিয়া বীজের তুলনায় একটু ভিন্ন।”
বেইকিংয়ের ক্ষেত্রে, দুটোই ডিমের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে চিয়া বীজে তরল শোষণ করার প্রবণতা বেশি থাকায়, তাই বেইকিংয়ে কিছুটা সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে যদি সেই রেসিপিতে তরল কম থাকে।
কোনটি বেশি স্বাস্থ্যকর?
অধিকাংশ পুষ্টিবিদদের মতে, চিয়া ও তিসির বীজ দুটোই পুষ্টিকর এবং সুস্থতার জন্য উপকারী।
“আর যদি লক্ষ্য থাকে হজমের উন্নতি করার, তবে চিয়া বীজ নির্বাচন করাই ভালো। কারণ এতে আঁশের পরিমাণ অনেক বেশি”- বলেন জিয়াটা।
মারিসা কার্প মন্তব্য করেন, “চিয়া ও তিসির বীজ দুটাই পুষ্টিকর। তবে চিয়া বীজে বেশি আঁশ থাকে, যা হজমের জন্য উপকারী। অন্যদিকে তিসির বীজে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বেশি, যা হৃদরোগ এবং হাড়ের জন্য ভালো।”
তাই শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের প্রয়োজন মেটাতে তিসির বীজ হতে পারে একটি ভালো বিকল্প। হৃদযন্ত্র ও হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এই খাবার উপকারী।
তবে যে কোনো খাবার যদি নিয়মিত খাওয়া যায় তবে সেটা সহায়ক হিসেবেই কাজ করবে।
আরও পড়ুন