সয়াবিন, কর্ন, ক্যানোলা, সানফ্লাওয়ার এরকম উদ্ভিজ্জ-ভিত্তিক পরিশোধিত তেলের উপকারিতাও আছে।
Published : 05 Dec 2023, 12:31 PM
আজকাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের জানা যায় যে, বীজের তেল ভালো না। এটা প্রদাহ, অন্ত্রের স্বাস্থ্য ও অন্যান্য স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ায়।
তবে পুষ্টি বিশেষজ্ঞদের মতে, এই তথ্য পুরোপুরি সত্য নয়। তারা মনে করেন, প্রদাহ ততটা খারাপ নয় যতটা বোঝানো হয়।
এমনকি ব্যায়াম করলেও শরীরে এক ধরনের প্রদাহ সৃষ্টি হয়।
ধারণা ১: বীজের তেল হৃদ-স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর
বীজের তেল ও প্রদাহের বিবেচনায় হৃদ-স্বাস্থ্যের কথাও আসে। ‘আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন’ অনুযায়ী, বীজের তেল গ্রহণে হৃদরোগের ঝুঁকি সম্পর্কিত কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
ফিলিপিন্স নিবাসি পুষ্টিবিদ ক্যাথরিন জার্ভেসিও ওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেন, “বীজের তেল যেমন- তিসি, চিয়া ও হেম্প বীজের উচ্চ ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডস সমৃদ্ধ।”
‘টপ নিউট্রিশন কোচিং’য়ের নিবন্ধিত মার্কিন পুষ্টিবিদ ড্যানিয়েল স্মিথ বলেন, “এগুলো শরীরের জন্য অপরিহার্য এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতা, হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ্য ও প্রদাহ কমানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বীজের তেল পলিআনস্যাচুরেটেড এবং মনোআনস্যাচুরেটেড চর্বির উৎস যা হৃদস্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। যেমন- এলডিএল বা ‘খারাপ’ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়।”
ধারণা ২: বীজের তেল উচ্চ ওমেগা-সিক্স সমৃদ্ধ যা, তীব্র প্রদাহজনক
এটা সত্য যে, ওমেগা-সিক্স ফ্যাটি অ্যাসিডস তীব্র-প্রদাহ-জনক হিসেবে বিবেচিত। তবে কিছু গবেষণার ফলাফল ইঙ্গিত দেয় যে, ওমেগা-সিক্স অধিক ব্যবহার শরীরের উচ্চতর প্রদাহজনক প্রতিক্রিয়াগুলোর সাথে সম্পর্কযুক্ত নয়।
স্মিথ বলেন, “এটি নির্ভর করে খাদ্যের ওমেগা-সিক্স এবং ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডস’য়ের অনুপাত এবং দুটির পর্যাপ্ত পরিমাণে গ্রহণের ওপর।”
উচ্চ অনুপাতে গ্রহণ করা প্রদাহের মাত্রা বৃদ্ধি করে।
তিনি আরও বলেন, “ওমেগা-সিক্স ফ্যাটি অ্যাসিডস অত্যাবশ্যকীয় পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ যা আমাদের শরীরের সঠিক কার্যকারিতার জন্য প্রয়োজন। তবে এগুলো শরীর নিজে থেকে তৈরি করতে পারেনা।”
এটা লক্ষ করা গুরুত্বপূর্ণ যে, খাদ্য তালিকার পরিবর্তন প্রদাহকে দূরে রাখতে পারে- এই ধারণাও ভুল। এক্ষেত্রে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ধারণা ৩: বীজের তেল বিষাক্ত
জার্ভেসিও বলেন, “যদি বীজের তেল মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ায় পরে ব্যবহার করা হয় বা ভুল পন্থায় সংরক্ষণ করা হয়, তাহলে বিষাদ ও বিষাক্ত হতে পারে। তবে সঠিক উপায়ে সংরক্ষণ করা হলে গ্রহণ করা নিরাপদ।”
তাজা, উচ্চ মানের বীজের তেল ব্যবহারের পরামর্শ দেন, এই পুষ্টিবিদ। আর সেটা যেন ঠাণ্ডা, অন্ধকারাচ্ছন্ন স্থানে সংরক্ষণ করা হয়।
পুষ্টিবিদ স্মিথ ‘কোল্ড প্রেসড’ ভিত্তিক বিভিন্ন ধরনের তেল ব্যবহারের পরামর্শ দেন। এতে তেলের গুণগত মান পুষ্টি উপাদান বেশিদিন বজায় থাকে।
বীজের তেল কেবল নিরাপদ নয় বরং স্বাস্থ্য বান্ধব।
স্মিথের ভাষায়, “অনেক বীজের তেল উচ্চ অত্যাবশকীয় পুষ্টি উপাদান যেমন- ভিটামিন ই সমৃদ্ধ, যা শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।”
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রদাহনাশক হিসেবে কাজ করে।
যেমন- কালোজিরার তেল উচ্চ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। যা প্রদাহর বিরুদ্ধে কাজ করে, কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়, এবং এতে আছে দেহের প্রয়োজনীয় ফ্যাটি অ্যাসিডস।
ধারণা ৪: বীজের তেল সবার ওপর একই প্রভাব রাখে
জার্ভেসিও বলেন, “বীজের তেলে আছে প্রদাহ সৃষ্টিকারী উপাদান। তবে কেবল অতিরিক্ত গ্রহণের ফলে হতে পারে।”
স্মিথ এই মন্তব্য সমর্থন করে আরও বলেন, “এটা ব্যক্তির সাধারণ স্বাস্থ্যের ওপর অনেকটা নির্ভর করে।”
“অধিকাংশ ক্ষেত্রে বীজের তেলের প্রদাহনাশক গুণাগুণ বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠে নির্দিষ্ট কিছু স্বাস্থ্য ঝুঁকি যেমন- বিপাক সমস্যা ও ‘ইনফ্লামাটরি ডিজিজ’ থাকলে।”
তাই বীজের তেল ও প্রদাহ প্রসঙ্গে ‘স্বাস্থ্য পরামর্শ’ আরও গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করতে হবে।
আরও পড়ুন