শুধু বেতন নয়, অন্যান্য সুবিধা অসুবিধার কথাও মাথায় রাখতে হয়।
‘ইন্টারভিউ’ পর্যায় পেরিয়ে নতুন জায়গা কাজটা পেয়েই গেলেন। অবশ্যই তা একটা আনন্দের সংবাদ। তবে সেই আনন্দের মাঝে ভুলে গেলেন নতুন চাকরি জীবনে যে পরিবর্তনগুলো আনবে সেগুলোর কথা।
এখানে বিবেচনার বিষয় শুধু নতুন চাকরির বেতন বা সুযোগ সুবিধা নয়। যাতায়াতের পথ, নতুন দায়িত্ব, নতুন পরিবেশ সবই বিবেচনার বিষয়।
যথেষ্ট মূল্যায়ন হবে কি?
লন্ডনের ‘ক্যারিয়ার চেইঞ্জ কনসালটেন্ট’ এবং ‘ক্যারিয়ার রিলঞ্চ পডকাস্ট’য়ের উপস্থাপক জোসেফ লিউ রিয়েলসিম্পল ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেন, “কর্মক্ষেত্র যদি আপনার দক্ষতা ও অভিজ্ঞতাকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারে তবেই সেই কর্মক্ষেত্রে কাজ করে আপনি তৃপ্তি পাবেন, আপনার যথাযথ মূল্যায়ন হবে। আর তা যদি না হয় তবে কাজে একসময় হতাশা ঘিরে ধরবে।”
তাই কর্মক্ষেত্র পরিবর্তনের সময় কোন পদ ছেড়ে কোন পদে যোগ দিতে যাচ্ছেন সেটা যাচাই করে তবেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
সহকর্মীরা কেমন?
শিকাগোর ‘বস্টন কনসাল্টিং গ্রুপ’য়ের ‘ক্যারিয়ার সার্ভিস কোচ’ জেনা হেস বলেন, “প্রতিষ্ঠান যত বড় মাপেরই হোক না, নব্য সহকর্মীদের সঙ্গে বোঝাপড়া ভালো না হলে সেই চাকরিতে টিকে থাকা কঠিন হবে। তাই নতুন চাকরির সুযোগ গ্রহণ করার আগেই ‘রিপোর্টিং বস’, আপনার দলের সহকর্মীরা, আপনি নিজে যাদের ‘বস’ হবেন, অফিসের মানুষের পারস্পারিক আচরণ এই বিষয়গুলো খেয়াল করা জরুরি।”
নতুন চাকরিতে যোগ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি-বদ্ধ হওয়ার আগে ওই প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন এমন কারও সঙ্গে আলাপ করার সুযোগ খুঁজতে হবে, জানতে হবে ভেতরের পরিবেশ কেমন। জেনে নিতে হবে অফিসে যাওয়া আর বের হওয়া সময় নিয়ে, বেতনভাতা বৃদ্ধির প্রক্রিয়া কী এবং তা কতটুকু কার্যকর হয় সেই বিষয়গুলো সম্পর্কে।
কাজের ধরন কি আপনাকে অনুপ্রেরণা যোগাবে?
লিউ বলেন, “নতুন কর্মক্ষেত্রে কাজের যে পরিধি হবে সেটা যদি পছন্দের হয় তবে কাজ করে আনন্দ পাবেন, আরও কাজ করার অনুপ্রেরণা যোগাবে। আর যদি মনের মতো না হয় তবে কাজ যত করবেন ততই আপনার হতাশা বাড়বে।”
এই হতাশা একসময় চাকরি ছাড়তে বাধ্য করবে। পুরুষের তুলনায় নারীর জন্য এই পরিস্থিতিটা বেশি তীব্র। তাই আগেই কাজের দায়িত্ব ও তার পরিধি বুঝে নিতে হবে।
বর্তমান কর্মক্ষেত্রেই কি একই সুযোগ সুবিধা পাওয়া সম্ভব?
যুক্তরাজ্যের ‘রেড ক্রেস্ট ক্যারিয়ারস’য়ের ‘ক্যারিয়ার কোচ অ্যান্ড ডিরেক্টর’ ফিয়োনা আর্নল্ড বলেন, “চাকরির বদলানোর সময় একজন কর্মী গুরুত্বপূর্ণ যে বস্তুটি হারায় তা হল, আগের কর্মক্ষেত্রের মানুষগুলো সঙ্গে সম্পর্ক। নতুন কর্মক্ষেত্রে গিয়ে সেখানকার মানুষগুলোর সঙ্গে নতুন করে সম্পর্ক গড়তে হবে। তা গড়ে উঠবে কি-না সেটা অনিশ্চিত। তাই কর্মক্ষেত্র বদলানো আগে এটা ভাবা উচিত।”
যে সুযোগ সুবিধাগুলো পাওয়ার উদ্দেশ্যের চাকরি বদলানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সেগুলো বর্তমান কর্মক্ষেত্রে, যেখানকার মানুষগুলো সঙ্গে ইতোমধ্যেই আপনার সম্পর্ক তৈরি হয়েছে, সেখান থেকেই পাওয়া সম্ভব কি-না।
উইসকোনসিন’য়ের ‘ক্রাফ্টেড ক্যারিয়ার কনসেপ্ট’য়ের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এলি হোয়ায়েক বলেন, “নতুন চাকরিতে কেনো যাচ্ছেন? নতুন কর্মক্ষেত্র কি আপনার জন্য বেশি উপযুক্ত? নাকি পরে ভালো কিছু পাবেন কি-না সেটা নিয়ে আতঙ্ক থেকে যা পেয়েছেন সেটাই বেছে নিচ্ছেন?”
প্রথমবার চাকরিতে যোগ দেওয়ার ক্ষেত্রেও একই প্রশ্ন প্রযোজ্য। উপার্জনের বিষয়ে প্রতিটি মানুষই ঝুঁকিমুক্ত থাকতে চায়। তবে ভবিষ্যতে কী পাবেন বা কী পাবেন না সেই ভয়ে থাকলে এমন কোনো স্থান যোগ দিয়ে বসতে পারেন যা আপনার গলার কাটা হয়ে দাঁড়াবে।
আবার এই নতুন চাকরি থেকে ভবিষ্যতে আপনি কী পেতে পারেন সেটাও ভাবার বিষয়। হয়ত কয়েক বছর পর নতুন প্রতিষ্ঠানকেই ভালোবেসে ফেলবেন। কিন্তু আপনার কাজকে নয়। কারণ সেই পুরানো গৎবাঁধা কাজই আপনি করে যাচ্ছেন, ভিন্নতা নেই।
“ভবিষ্যতে আপনার চাহিদা যদি পূরণ হওয়া সম্ভাবনা নাই থাকে তবে চাকরি বদলানো অপ্রয়োজনীয়,” বলেন হোয়ায়েক।
আপনার ক্যারিয়ার আর জীবনযাত্রার তুলনায় নতুন সুযোগটা কেমন?
স্যান দিয়েগো’র ‘লাইফ কোচ’ এবং নারীদের চাকরি বদলানোর ক্ষেত্রে পরামর্শক জেনা হিলার বলেন, “অনেকের জীবনের একটি বড় অংশ হল তার ‘ক্যারিয়ার’। তবে সেটাই সবকিছু নয়। ‘ক্যারিয়ার’য়ের মোড় কোন দিকে যাবে তা অনেকটা নিয়ন্ত্রণ করে পারিবারিক অবস্থা।”
নতুন কর্মক্ষেত্রে যোগ দেওয়াটা আপনার বর্তমান জীবনযাত্রার সঙ্গে কতটুকু মানানসই হবে সেটাও একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক। তাই নতুন জায়গায় শুরুতেই নিজের ব্যক্তিগত প্রয়োজনগুলো ছাড় দেওয়া যাবে না।
আরও পড়ুন