চাকরি ছাড়ার আগে যা করা উচিত

প্রথমেই পয়সা-কড়ির বিষয়টা মাথায় নিয়ে তারপর আগাতে হবে।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Sept 2021, 11:37 AM
Updated : 27 Sept 2021, 11:38 AM

সিংহভাগ চাকরিজীবী স্বপ্ন দেখেন অন্যের অনুগত হয়ে না থেকে নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠা করার। তবে স্থিতিশীল একটা উপার্জনের উৎস ছেড়ে ব্যবসার অনিশ্চয়তায় কথা চিন্তা করলে এক পা এগোয় তো দুই পা পিছিয়ে যায়।

এভাবেই একসময় অবসরের সময়টা চলে আসে। তখন আর প্রস্তুতি না থাকলেও উপায় থাকে না।

বয়স থাকতেই চাকরি ছেড়ে দেওয়া কিংবা অবসর গ্রহণের আগে কিছু বিষয় অবশ্যই মাথায় রাখা উচিত।

যেগুলো সম্পন্ন করতে পারলে চাকরি ছাড়ার পর আর্থিকভাবে দিশেহারা হওয়ার সম্ভাবনা কমবে।

চাকরি থেকে যতটুকু সম্ভব অর্থ গুছিয়ে নিতে হবে

অর্থনীতি বিষয়ক যুক্তরাষ্ট্রের পেশাদার লেখিকা ডানা সিতার। নিজের লেখাগুলো জনসাধারনকে পড়ার সুযোগ করে দিতে প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘হেলদি রিচ’ নামক ওয়েবসাইট।

তিনি ‘রিয়েলসিম্পল ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেন, “চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার আগে বর্তমান কর্মক্ষেত্র থেকে কী কী সুযোগ সুবিধা পাবেন তা ভালোভাবে জেনে নিতে হবে। শুধু আর্থিক সুযোগ সুবিধার কথা বলা হচ্ছে তা কিন্তু নয়। চাকরি ছেড়ে নিশ্চয়েই আপনি ঘরে বসে থাকবেন না। তাই পরের ধাপের জন্য প্রস্তুতি হিসেবে বর্তমান কর্মক্ষেত্র থেকেই প্রশিক্ষণ নিতে পারেন, গোছাতে পারেন নিজের ব্যবসার পরিকল্পনা।”

“চাকরি সুবাদের আপনার যে পরিচিতি মন্ডল তৈরি হয়েছে ভবিষ্যতে তারাই আপনার ব্যবসার গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠতে পারে, তাই সেদিকেও নজর রাখা জরুরি। এছাড়াও অবসর ভাতা, প্রভিডেন্ট ফান্ড হেলথ ইন্সুরেন্স ইত্যাদির হাত ধরে চাকরি ছাড়ার পর আপনার কর্মস্থল কী সুবিধা দেবে, তার নিয়মগুলোও জেনে নিতে হবে।”

সিতার আরও বলেন, “পরিবারের প্রধান উপার্জনকারীর জন্য চাকরি ছাড়া কিংবা অবসরে যাওয়া একটা আতঙ্কের নাম। তাই সেই সিদ্ধান্ত ঘাড়ে নেওয়ার আগেই ভবিষ্যত আর্থিক পরিকল্পনা করতে হবে। অন্যথায় প্রচণ্ড মানসিক চাপে দিশেহারা হয়ে পড়বেন।”

চাকরি থেকেই যোগাতে হবে ব্যবসার মুলধন

প্রাত্যহিক জীবনের আর্থিক সিদ্ধান্তগুলোর বিশেষজ্ঞ এবং সাবেক ‘এমপ্লয়মেন্ট অ্যাটর্নি’ ডিলেইন বারোস। বয়স তার ৪৫-এর কাছাকাছি এবং নিজেই ভাবছেন অবসর গ্রহণের কথা।

যুক্তরাষ্ট্রের এই পেশাজীবী চাকরি ছেড়ে উদ্যোক্তা হওয়ার পথে পা বাড়াতে যাওয়া মানুষগুলোকে চাকরি করা অবস্থাতেই ব্যবসাটা শুরু করা পরামর্শ দেন।

প্রতিবেদনে তিনি বলেন, “চাকরির পয়সা থেকেই নিজের ব্যবসার ভিত্তিটা দাঁড় করাতে হবে। বাড়ি ভাড়া, সংসার খরচ, স্কুলের বেতন ইত্যাদির পয়সা কোথা থেকে আসবে সেই দুশ্চিন্তা যদি মাথায় না থাকে তবেই আপনি নিজের ব্যবসা দাঁড় করানোর ক্ষেত্রে বুদ্ধিদীপ্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। ব্যবসায়িক কোনো চুক্তি যদি আপনার আদর্শের সঙ্গে না মেলে তবে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া জোর আপনার মাঝে থাকবে। আর সেই জোর জোগাবে আপনার চাকরিটা।”

“অপরদিকে ব্যবসা পরিকল্পনা গোছানো থাকলেও খুঁটিনাটি অনেক কাজ নিয়ে আপনাকে মাথা ঘামাতে হবে। নিজের প্রতিষ্ঠানের জন্য কর্মী নিয়োগ করা, হিসেব রাখা, প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার আইনগত বিষয়গুলোর দিকে নজর রাখা, আপনার ব্যবসায়িক পরিকল্পনা বাজারের সঙ্গে কতটা সামাঞ্জস্যপূর্ণ সেটা যাচাই করা ইত্যাদি অসংখ্য বিষয় আছে। যে কারণে চাই সময় এবং ঠাণ্ডা মাথা। চাকরিতে যুক্ত থাকলে এই বিষয়গুলো সামলানো আপনার জন্য সহজ হবে।”

“ব্যবসায়িক আর ব্যক্তিগত খরচ সবসময় আলাদা রাখবেন। এতে বছর শেষে কর বা ট্যাক্সের হিসাব করা সহজ হবে। আর ব্যবসা কেমন যাচ্ছে সেটা বুঝে কখন চাকরি ছেড়ে পুরোপুরি ব্যবসায় মনযোগ দেওয়া উচিত সেটাও অনুধাবন করতে পারবেন।”

আতঙ্কিত হবেন না

সিনেমাগুলোয় দেখা যায়, যারা ব্যাংক লুট করতে আসে তারা খুব যত্ন সহকারে সবকিছু পরিকল্পনা করে আসে যে কীভাবে দ্রুত পুরো কাজটা শেষ করা যায়।

তবে শেষ মুহূর্তে কোথাও না কোথাও অপরিকল্পিত কিছু ঘটে যায়। আর সেখানেই আতঙ্কিত হয়ে লেজে গোবরে অবস্থা তৈরি হয়।

আপনি ব্যাংক লুটতে কিংবা কোনো আইন বহির্ভুত কাজ করছেন না। নিজের উপার্জন করা হালাল পয়সা দিয়ে একটা হালাল ব্যবসা প্রতিষ্ঠা করতে চাইছেন।

তাই এখানে তাড়াহুড়ো করার প্রশ্নই আসে না। ধীরে সুস্থে বুঝে শুনে অভিজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে কাজ করতে হবে। যে কোনো ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে একটা নিরাপদ পরিমাণ অর্থ সরিয়ে রাখতে হবে বিপদের সময়টার জন্য।

বারোস বলেন, “ন্যূনতম একবছর সব ধরনের খরচ চালিয়ে নেওয়া যাবে এমন পরিমাণ অর্থ সরিয়ে রাখতে হবে। এতে মানসিক চাপ কমবে।”

কোনো দরজা বন্ধ করা যাবেনা

চাকরি ছেড়ে ব্যবসায় যাবেন কিংবা অবসরে যাবেন তাই বলে কর্মক্ষেত্রের সঙ্গে সকল সম্পর্ক বিছিন্ন হয়ে যাবে এমন কিন্তু নয়।

তাই সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে খোশমেজাজে বিদায় নিতে হবে। বিদায় নেওয়া জন্য প্রতিষ্ঠানের নিয়ম কানুন মেনে প্রস্তুতি নিতে হবে।

বিদায়ের দিন সহকর্মীদের সঙ্গে উপহার আদান-প্রদান করুন। কাছের মানুষগুলোকে আলাদাভাবে সময় দিন। কর্মকর্তাদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করার সুযোগ থাকলে হাতছাড়া করবেন না।

সম্পর্ক রক্ষার পাশাপাশি মনে রাখতে হবে, বিপদ বলে কয়ে আসে না। তাই ব্যবসায় সুবিধা করতে না পারলে আবারও চাকরি জীবনে ফিরতে হতে পারে।

তাই চাকরির জগতে অর্জন করা সুনামের কোনো ক্ষতি হতে দেওয়া যাবে না।

ছবি: রয়টার্স।

আরও পড়ুন