রাতে ভালো ঘুমের জন্য নির্দিষ্ট কিছু অভ্যাস গড়ে তোলা জরুরি।
Published : 16 Apr 2025, 05:50 PM
একটা ব্যস্ত দিন শেষে ঘুমাতে যাওয়ার আগে সময়টা কেমন কাটে? ধীরে ধীরে কি নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করেন, নাকি ব্যস্ততাপূর্ণ কোনো কাজ করেই দিন শেষ করেন?
অনেকেই ঘুমের আগে এমন কাজ করেন, যা মস্তিষ্ককে আরও বিক্ষিপ্ত করে তোলে। ফলাফল হয় গভীর ঘুমে বিঘ্ন।
অথচ ভালো ঘুম মানেই সুস্থ জীবন, শরীর, মন এবং আবেগের ওপর প্রভাব।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ‘রোড টু ওয়েলনেস থেরাপি’র প্রতিষ্ঠাতা এবং মনোবিশেষজ্ঞ জ্যানেট বেরামাইয়ান মনে করেন, “ঘুমের আগে কিছু নির্দিষ্ট অভ্যাস আমাদের মস্তিষ্ক এবং শরীরকে প্রশান্ত করতে সাহায্য করে। এগুলো শুধু ঘুমের মানই উন্নত করে না, বরং সার্বিক মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও অত্যন্ত কার্যকর।”
হালকা যোগ ব্যায়াম
রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে কিছুক্ষণ হালকা যোগব্যায়াম বা স্ট্রেচিং করলে তা মস্তিষ্ককে ‘রিল্যাক্স মোড’ (বিশ্রামের অবস্থা)-এ নিয়ে যায়।
বেরামাইয়ান রিয়েলসিম্পল ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেন, “এই ধরনের শরীরচর্চা কর্টিসল (স্ট্রেস বা চাপের হরমোন) কমায় এবং ‘প্যারাসিমপ্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেম’ সক্রিয় করে তোলে। ফলে শরীর ধীরে ধীরে ঘুমের জন্য প্রস্তুত হয়।”
এটি শুধু শরীর নয়, মনকেও শান্ত করে তোলে। বিশেষ করে যারা দিনের বেশিরভাগ সময় বসে কাজ করেন বা মানসিক চাপের মধ্যে থাকেন।
তাদের জন্য এই ছোট ব্যায়ামের অভ্যাস হতে পারে এক দারুণ ‘মেডিটেটিভ’ বা ধ্যানমগ্ন কিংবা মনে প্রাণে গভীরভাবে মনোযোগের প্রক্রিয়া।
রাতে ১০ মিনিটেরও কম সময় দিলেই এর সুফল মিলবে।
ভাবনাগুলো লিখে ফেলা: মস্তিষ্ককে অতিরিক্ত চিন্তা থেকে মুক্ত
ঘুমাতে গেলে মাথার মধ্যে নানান ভাবনা আসতে থাকে। কাজের সময়সীমা, ব্যক্তিগত সমস্যা, আগামী দিনের প্রস্তুতি- এই চিন্তাগুলোই অনেক সময় ঘুমকে করে তোলে অনিয়মিত ও অস্থির।
বেরামাইয়ান পরামর্শ দেন, “প্রতিদিন ঘুমাতে যাওয়ার আগে একটি নোটবুকে নিজের ভাবনা, দুশ্চিন্তা বা পরদিনের কী করা হবে সেটার তালিকা লিখে ফেলুন।”
তিনি বলেন, “লিখে ফেলার মাধ্যমে মস্তিষ্ক স্বস্তি পায়। এটি মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে, মস্তিষ্ককে জঞ্জাল মুক্ত করে। আর গভীর ঘুমে যেতে সাহায্য করে।”
এ যেন এক ধরনের মানসিক ডায়েট। যেখানে অপ্রয়োজনীয় চিন্তাগুলোকে নিরুৎসাহিত করে প্রশান্তি খোঁজা হয়।
উষ্ণ, মৃদু আলোয় আরামদায়ক পরিবেশ তৈরি
প্রাকৃতিকভাবে শরীর সূর্যের আলো থেকে সময় বুঝে নেয়। তবে শহুরে জীবনে রাতে কৃত্রিম উজ্জ্বল আলো মস্তিষ্ককে বিভ্রান্ত করে ফেলে। ফলে দেহ বিশ্রাম অবস্থায় যেতে চায় না।
বেরামাইয়ান বলেন, “ঘুমের আগে নরম, উষ্ণ আলো ব্যবহার করলে মস্তিষ্ক ‘ঘুম প্রস্তুতির’ সংকেত পায়।”
সাধারণ সাদা বা নীল আলো এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। বদলে ব্যবহার করতে হবে হলদে হালকা আলো, বা ‘ডিমিং লাইট’। এতে পরিবেশ হয় অনেক বেশি আরামদায়ক, ঘরও হয়ে ওঠে যেন এক শান্তির আশ্রয়।”
মোমবাতির আলোয় উষ্ম স্নান
গরম পানিতে গোসল শুধুই বিশুদ্ধতার জন্য নয়, বরং এটি একটি ঘুম উদ্রেককারী থেরাপি হিসেবেও কাজ করে।
বেরামাইয়ান বলেন, “গরম পানির স্পর্শ ‘প্যারাসিমপ্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেম’ সক্রিয় করে, যা শরীরকে আরাম দেয় এবং ঘুমের জন্য তৈরি করে।”
গোসলের সময় কৃত্রিম আলো বন্ধ করে কেবল একটি প্রিয় মোমবাতি জ্বালিয়ে রাখলে অভিজ্ঞতাটি হয়ে উঠবে আরও প্রশান্তিময়। এই সময় ব্যক্তিগত ‘রিচার্জিং’ মুহূর্ত হিসেবেও কাজে দেবে।
আবার চাইলে প্রিয় কিছু হালকা সুগন্ধিও ব্যবহার করা যায়, যেমন- ল্যাভেন্ডার, চন্দন কিংবা রোজমেরি; যা আরও গভীরভাবে চিন্তামুক্ত করতে সহায়তা করবে।
অভ্যাসে স্থায়িত্ব: প্রতিদিন একই সময় ঘুমানো
অনিয়মিত সময়সূচি শুধু ঘুমের মান নয়, সারাদিনের শক্তির মাত্রাকে প্রভাবিত করে।
বেরামাইয়ানের ভাষায়, “প্রতিদিন একই সময় ঘুমাতে যাওয়া দেহঘড়িকে ঠিক রাখে। এতে ঘুম আসা সহজ হয় এবং একইভাবে প্রতিদিন জেগে উঠতেও সুবিধা হয়।”
শরীর যেন নিজেই ঘুমের সময় আর জেগে ওঠার সময় বুঝে নিতে পারে সেজন্য দরকার অভ্যাসে ধারাবাহিকতা।
এক্ষেত্রে মোবাইল বা টিভির পর্দা থেকে দূরে থাকা এবং ঘুমানোর ৩০ মিনিট আগে থেকে বিশ্রাম অবস্থায় যাওয়াটা জরুরি।
আরও পড়ুন
মস্তিষ্কের বয়স বৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলতে পারে ঘুমের প্রকৃতি