মানসিক প্রশান্তির জন্য লেখালেখি

চিন্তা, অনুভূতি, অভিজ্ঞতা বা প্রতিদিনের ঘটনা কোথাও গুছিয়ে লিখে রাখার অভ্যাস মানসিক স্বস্তি দিতে পারে।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Dec 2021, 12:07 PM
Updated : 22 Dec 2021, 12:07 PM

বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গির দিক থেকে এই অভ্যাস রীতিমতো মস্তিষ্কের রাসায়নিক গঠনে পরিবর্তন আনতে সক্ষম বলে দাবি করেন বিশেষজ্ঞরা। যার প্রেক্ষিতে বন্ধ হবে মানসিক চাপ সৃষ্টিকারী হরমোন তৈরি। আর শুরু হবে শরীর ও মনকে শান্ত করার হরমোনের উৎপাদন।

ব্যথা ও মানসিক চাপ বিষয়ে অভিজ্ঞ ‘ফিজিশিয়ান’, ব্যক্তিগত ও পেশাজীবী প্রশিক্ষক নিউ ইয়র্ক’য়ের ডা. লরা লিউইস ম্যান্টেল বলেন, “লেখালেখির অভ্যাস একজন মানুষের অনুভূতিগুলো বদ্ধ রাখার বদলে তা প্রকাশ করা একটা মাধ্যম দেয়। এতে এই অনুভূতিগুলো সামাল দেওয়ার অভূতপূর্ব পদ্ধতি নজরে আসে।”

রিয়েলসিম্পল ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে তিনি আরও বলেন, “অনুভূতিগুলো অন্য কোনো ব্যক্তির সঙ্গে ভাগাভাগি করার ক্ষেত্রে সেগুলোকে গুছিয়ে নেওয়ার সুযোগ করে দেয় লেখার অভ্যাস। আর অনুভূতিগুলো লিপিবদ্ধ করার মাধ্যমে সেগুলোর প্রকৃত অর্থ বোঝা সহজ হয়।”

“শুধু সুখকর অনুভূতি দেওয়া নয়, মনের কথাগুলো লিখে রাখার অভ্যাস স্বাস্থ্য ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্যও উপকারী। জীবনের চড়াই উৎরাইয়ের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া সহজ হয় এই অভ্যাসের কল্যাণে।”

কীভাবে এই অভ্যাস গড়ে তোলা যায় সেই বিষয়েও পরামর্শ দিয়েছেন কয়েকজন বিশেষজ্ঞ।

মন ভালো করে এমন কোনো ঘটনা লেখা

নিজের মনের ভাবগুলো লিখে রাখা কীভাবে শুরু তা জানা না থাকলে একটা কথাই মাথায় রাখা জরুরি। আর তা হল মনে যা আছে তাই লিখে ফেলা। কোনো কিছুই বাদ দেওয়ার নেই। জীবনের ইতিবাচক ঘটনা, এমন কিছু যা আপনার মন ভালো করে দেয় তা দিয়েই শুরুটা করা সবচাইতে সহজ।

যুক্তরাষ্ট্রের ‘ক্লিনিকাল সাইকোলজিস্ট’ ক্লোয়ি কারমাইকেল বলেন, “ডাইরিতে মনে কথা লিখে রাখার উদ্দেশ্য যদি মন ভালো করাই হয় তবে জীবনের দুএকটা মজার ঘটনা দিয়ে শুরু করার চাইতে ভালো আর কি হতে পারে। এতে লেখালেখির কাজটাতে আগ্রহ পাবেন। পাশাপাশি দিনের আনন্দদায়ক ঘটনাগুলো মনে করার প্রশিক্ষণ পাবে মস্তিষ্ক।”

যা কিছুর জন্য আপনি কৃতজ্ঞ

জীবনের যে প্রাপ্তিগুলোর জন্য আপনি কৃতজ্ঞতা অনুভব করেন সেগুলো নিয়ে কিছু লেখার মাধ্যমে জীবনের ইতিবাচক দিকের প্রতি মনযোগ বাড়াতে পারবেন সহজে।

এখানে থাকতে পারে কোনো ব্যক্তির বদান্যতা, কোনো ঘটনা, আপনার কোনো কাজ, কোনো বিশেষ বস্তু যা আপনার জীবনে আছে বলে আপনি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করেন।

মন খারাপের গল্প

কষ্টগুলো লিখে রাখার মাধ্যমে নিজেকে হালকা করে নিতে পারেন। আপনার বিরক্তি, দুশ্চিন্তা, মানসিক চাপ ইত্যাদির কারণগুলোও এখানে থাকতে পারে।

তবে এখানে গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় মানতে হবে। শুধু সমস্যাগুলো লিখে রাখলেই হবে না, সঙ্গে তা সমাধানের সম্ভাব্য উপায়গুলোও সেখানে লিখে রাখতে পারেন।

এতে সমস্যার পাশাপাশি তা সমাধানের জন্য নিজেকে কীভাবে শোধরাতে হবে সেটাই মাথায় থাকবে। আর এটাই মানসিক প্রশান্তি যোগাবে।

আটকে গেলে কী করা

লিখতে বসে মাথায় অনেক কিছুই ঘুরপাক খাচ্ছে কিন্তু কিছুতেই গুছিয়ে লিখতে পারছেন না। এমন অবস্থায় আগে ভাবতে হবে কেনো আপনি এই লেখার অভ্যাস গড়তে চান, উদ্দেশ্য কী ছিল।

লক্ষ্য স্থির করতে পারলে তা অর্জনের পথ বের করা সহজ হবে। সময় বেঁধে নিয়েও উপকার পেতে পারেন।

ধরুন ১০ থেকে ২০ মিনিট মনের গভীরে লুকিয়ে রাখা কথাগুলো লিখবেন, তা সে যতই এলোমেলো হোক।

কাজ, আর্থিক অবস্থা, পরিবার, জীবনের অনিশ্চয়তা, সামাজিক অবস্থা যেকোনো বিষয় নিয়েই লেখা যেতে পারে।

ছবি: রয়টার্স।

আরও পড়ুন