অবশ্যই বিছানায় শুয়ে থাকতে আরাম। তবে নতুন অভিজ্ঞতা মগজাস্ত্র করবে ধারালো।
Published : 09 Apr 2025, 06:19 PM
সারাদিনের ক্লান্তি শেষে আরামদায়ক বিছানা, নরম সোফায় গা এলিয়ে বসা— শুনতে যতটা আরামদায়ক, অভ্যস্ত জীবনও ঠিক ততটাই নিরাপদ মনে হয়।
চেনা পরিবেশ, চেনা কাজ প্রায়ই এই নিরাপত্তার বলয় থেকে বের হতে মন চায় না। ইংরেজিতে যাকে বলে ‘কমফোর্ট জোন’।
তবে এই অভ্যস্ততা ছেড়ে নতুন কিছু শেখা বা অভিজ্ঞতা অর্জন- শুধু আত্মবিশ্বাসই বাড়ায় না, মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যও ভালো রাখে।
শহুরে জীবনে এখন অনেকেই নানান ধরনের ক্লাস বা কোর্সে যুক্ত হচ্ছেন— চিত্রাঙ্কন, নাচ, যোগব্যায়াম, ফটোগ্রাফি কিংবা ভাষা শিক্ষা। এসব শুধু সময় কাটানোর মাধ্যম নয়, বরং মানসিক সুস্থতা রক্ষারও কার্যকর উপায়।
নতুন কিছু শেখায় মস্তিষ্কের যেভাবে উপকার হয়
যুক্তরাষ্ট্রের ‘গ্লোবাল ব্রেইন হেল্থ ইন্সটিটিউট’য়ের স্নায়ু-বিজ্ঞানী ডা. ক্লেয়ার সেক্সটন বলেন, “প্রতিদিনের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী মস্তিষ্কের গঠন এবং কার্যকারিতা পরিবর্তিত হতে পারে।”
মানে দাঁড়াচ্ছে, যত বেশি নতুন অভিজ্ঞতা, মস্তিষ্কে তত বেশি পরিবর্তন। ফলে যে কেউ ধীরে ধীরে পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে শেখে।
এন্ডোরফিন্স নিঃসরণ বাড়ে
নতুন কিছু শেখার সময় শরীর এন্ডোরফিন্স নামক এক ধরনের হরমোন নিঃসরণ করে, যা মূলত ব্যথা কমানোর কাজ করলেও এটি মেজাজ ভালো রাখে এবং উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করে। কম উদ্বেগ মানেই ভালো ঘুম এবং উন্নত স্মৃতি শক্তি।
‘আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন’- এর এক গবেষণা বলছে, মস্তিষ্কের ‘হাইপোথ্যালামাস’ অংশ থেকে এই হরমোন নির্গত হয়, যা আমাদের স্নায়ুতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
পরিবর্তনে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা বাড়ে
নতুন অভিজ্ঞতার মাধ্যমে মস্তিষ্ক নতুন পরিস্থিতিতে নিজেকে মানিয়ে নিতে শেখে। এটি শুধু মনের জোর বাড়ায় না, বরং বাস্তব জীবনের ঝুঁকিপূর্ণ কিংবা চাপযুক্ত পরিস্থিতিতে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে।
স্নায়ু পথ শক্তিশালী হয়
ডা. সেক্সটনের ভাষায়, “নতুন কলা-কৌশল যেমন- পিয়ানো বাজানো শেখার মাধ্যমে মস্তিষ্কের ‘মোটর কর্টেক্সে’ পরিবর্তন আসে, যা গতি ও চলাফেরার সঙ্গে যুক্ত। তেমনি লন্ডনের ট্যাক্সি ড্রাইভারদের মধ্যে দেখা গেছে, বেশি অভিজ্ঞতাসম্পন্ন চালকদের ‘হিপোক্যাম্পাস’ নামক মস্তিষ্কের স্থানের আকার বড় হয়, যা স্থান-ভিত্তিক স্মৃতি ও শেখার সঙ্গে জড়িত।”
মস্তিষ্কে উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়
নতুন কিছু শিখলে, সেটি যে কাজই হোক না কেন— চিত্রাঙ্কন, নাচ, সাইকেল চালানো বা রান্নার নতুন রেসিপির চেষ্টা— তাতে মস্তিষ্ক সক্রিয় হয়।
গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত নতুন কিছু শেখার মাধ্যমে ‘ডিমেনশা’ বা স্মৃতিভ্রংশ রোগের ঝুঁকি কমে ও মস্তিষ্ক দীর্ঘদিন তরতাজা থাকে।
কত ঘন ঘন নতুন কিছু শেখা উচিত?
বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন, এর নির্দিষ্ট নিয়ম নেই। তবে যত বেশি শিখবেন, তত ভালো।
প্রতিদিন যদি নতুন কিছু শেখার সুযোগ না-ও হয়, অন্তত সপ্তাহে একদিন হলেও কিছু ভিন্ন অভিজ্ঞতা নেওয়া যেতে পারে।
নতুন জায়গায় বেড়াতে যাওয়া, নতুন রান্না শেখা, নতুন ভাষা শেখা কিংবা নতুন বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানো— সবই মস্তিষ্কের জন্য উপকারী।
ডা. সেক্সটন বলেন, “নিউরোপ্লাস্টিসিটি— অর্থাৎ মস্তিষ্কের নিজেকে বদলে নেওয়ার ক্ষমতা, মিলি-সেকেন্ড থেকে শুরু করে বছরের পর বছর ধরে হতে পারে। যা নির্ভর করে আপনি কতটা নিয়মিত এবং গভীরভাবে নতুন কিছু শিখছেন।”
ভয় দূর হলে সুবিধা আরও বেশি
প্রথমবার এবং নতুন কিছু শেখার সময় সবাই কিছুটা ভয় পায়। তবে সেই ভয় কাটিয়ে ওঠার মধ্যেই রয়েছে সবচেয়ে বড় অর্জন।
একবার অভ্যস্ত হয়ে গেলে ভবিষ্যতে নতুন কিছু শেখার ভয় অনেকটাই কমে যায়।
উদ্বেগ কমলে রাতের ঘুমও ভালো হয়, যা মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ঘুমের সময় মস্তিষ্ক তার অভ্যন্তরীণ কাজ, যেমন- স্মৃতি সংরক্ষণ, তথ্য বিশ্লেষণ, সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রস্তুতি ইত্যাদি করে থাকে।
নিজেকে একটু সাহস দিন
“প্রতিদিনের ব্যস্ততা, যানজট, সামাজিক দায়বদ্ধতা একঘেয়ে করে তুলতে পারে। তবে সেই একঘেয়েমি থেকে নিজেকে মুক্ত করতে একটু সাহস নিয়ে নতুন কিছু শেখা শুরু করলে নিজের মধ্যেই পরিবর্তন টের পাওয়া যায়”- বলেন ডা. সেক্সটন।
হয়ত প্রথমে খুব ভালো লাগবে না বা সফলতাও আসবে না। তবে মনে রাখতে হবে, এটা শুধু শেখা নয়, বরং মস্তিষ্ক সচল রাখা, মানসিক চাপ কমানো এবং ভবিষ্যতের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করা।
আরও পড়ুন
মাথায় আছে মুখে আসছে না- এরকম কেনো হয়!