সারাদিনের ক্লান্তি দূরে রাখতে দরকার সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও জীবন পদ্ধতি।
Published : 15 Jan 2025, 05:55 PM
শীতের অলস দুপুর কিংবা গ্রীষ্মের ক্লান্ত বিকেল- মৌসুম যাই হোক না কেনো সারা বছর, সারা দিন তরতাজা অনুভব করতে জোর দিতে হয় সময় বুঝে খাবার খাওয়া ও সঠিক জীবনযাপন পদ্ধতির ওপর।
এই চাপযুক্ত জীবনে প্রতিদিন উজ্জীবিত বোধ করতে কয়েকটি বিষয়ের ওপর দেন পুষ্টিবিদেরা।
সুষম খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা
সার্বিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সুষম খাবার খাওয়া যেমন চৌকশ একটা কৌশল তেমনি পুষ্টিকর খাবার খাওয়া হল তাজা থাকার প্রধান চাবিকাঠি।
মার্কিন পুষ্টিবিদ ও ‘ফিনিক্স ভেগান ডায়েটিশান’য়ের প্রতিষ্ঠাতা রিয়েলসিম্পল ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেন, “ফল, সবজি, পূর্ণ শষ্য, মটর, বাদাম ও বীজ ধর্মী স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার পাশাপাশি অতিরিক্ত খাওয়া কমানো, চিনিযু্ক্ত আর প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং স্যাচুরেইটেড চর্বি বাদ দেওয়ার মাধ্যমে দেহের শক্তির মাত্রা সঠিক মাত্রায় ধরে রাখা যায়।”
যারা উদ্ভিজ্জ প্রোটিন গ্রহণ করতে চান না, তারা বেছে নিতে পারেন চর্বিহীন মাংস, যেমন- মাছ, মুরগি, ডিম ও কম ননীযুক্ত দুগ্ধজাতীয় খাবার।
সকালের নাস্তা বাদ দেওয়া যাবে না
সকালে ঠিকমতো নাস্তা করলে অর্ধেক বেলা চলে গেলেও খিদা পাওয়ার সম্ভাবনা কমে।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘টপ নিউট্রিশন কোচিং’য়ের নিবন্ধিত পুষ্টিবিদ অ্যানেটি স্নাইডার একই প্রতিবেদনে মন্তব্য করেন, “ঘুমের সময় দেহ অভুক্ত থাকে। যে কারণে সকালে শরীরের জ্বালানি হিসেবে নাস্তা খেতেই হবে।”
এই জ্বালানি পেশি নড়াচড়ার করানোর পাশাপাশি মস্তিষ্ক সচল রাখতে ভূমিকা রাখে। এছাড়া মনোযোগ ধরে রাখা ও খিদা নিয়ন্ত্রণেও ভূমিকা রাখে সকালের নাস্তা।
সম্পর্কিত প্রতিবেদন
অজান্তেই হয়ত নিজের শক্তি ক্ষয়ের কারণ হচ্ছেন
সারাদিন কর্ম শক্তি ধরে রাখার উপায়
সব সময় ক্লান্ত, অলস ও নির্জীব লাগার কারণ
প্রোটিন সমৃদ্ধ নাস্তা
যে কোনো সময় নাস্তা হিসেবে প্রোটিন ধর্মী খাবার বেছে নিতে হবে।
টরন্টো-ভিত্তিক পুষ্টিবিদ অ্যানার আলিডিনা বলেন, “নাস্তা ক্যাফিন বা চিনিধর্মী খাবার খাওয়ার জন্য মন চাইতেই পারে। তবে শক্তির মাত্রা ধরে রাখতে বেছে নিতে হবে প্রোটিন।”
এরফলে রক্তে দ্রুত শর্করার মাত্রা বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কমবে। ফলে দ্রুত ক্লান্তিবোধ করাবে না।
ডিম, বীজ, দিই বা পনির হতে পারে প্রোটিনধর্মী নাস্তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ। আর এসবের সাথে ফলও খাওয়া যেতে পারে।
খাবার সময় নির্ধারণ করা
ব্যস্ত দিনে দুপুরের খাবার বাদ দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটতেই থাকে। আবার মনে হয় পরে খাব, আগে কাজটা শেষ করি।
তবে মার্কিন পুষ্টিবিদ র্যাচেল গার্গানো বলেন, “খাবার খাওয়ার তিন ঘণ্টার পর রক্তের শর্করার মাত্রা প্রাকৃতিকভাবেই কমতে থাকে। যার ফলে খিদা লাগা শুরু হয়। তাই দুপুরে দুর্বল অনুভব হলে, মধ্যাহ্নভোজ এড়ানো যাবে না।”
এরমানে হল সকালের খাবারের তিন ঘণ্টা পর নাস্তার খাওয়া এক সময় ঠিক করা যেতে পারে। আবার এর পরের তিন ঘণ্টা পর আরেকবার নাস্তা খাওয়া যেতে পারে।
এভাবে খিদা অনুভূত হওয়ার মাত্রার ওপর নাস্তা খাওয়া অভ্যাস গড়ে সারাদিন ধরে তেজবান থাকা যায়। আর অবশ্য খাবার হিসেবে বেছে নিতে হবে প্রোটিন এবং আঁশ।
আর্দ্র থাকা
হজম শক্তি উন্নত করা থেকে ত্বকের স্বাস্থ্য রক্ষা- দেহের সমস্ত কার্যক্রম সুস্থভাবে পরিচালনার জন্য পর্যাপ্ত পানি পান করতেই হবে।
এই পরামর্শ দিয়ে ‘টপ নিউট্রিশন কোচিং’য়ের আরেক পুষ্টিবিদ ক্যাথলিন গার্সিয়া-বেনসন, “দেহে পানিশূন্যতা হলে অবশ্যই ক্লান্ত অনুভূত হবে। এমনকি অল্প হলেও দুর্বল বোধ হবে।”
প্রতিদিন ব্যায়াম করা গুরুত্ব দেওয়া
অনেকেই মনে করেন ব্যায়াম করলে দুর্বল বোধ হয়।
তবে মার্কিন পুষ্টিবিদ ও ‘ক্যামেলব্যাক নিউট্রিশন অ্যান্ড ওয়েলনেস’য়ের প্রতিষ্ঠাতা ক্রিস্টিনা কার্লি বলেন, “যে কোনো ধরনের শরীরচর্চা বা শারীরিক কর্মকাণ্ড রক্ত প্রবাহ বাড়ায় এবং এন্ডোরফিন্স হরমোন নিঃসরণ ঘটায়। যা শক্তির মাত্রা ও মন-মেজাজ উন্নত করে।”
এমনকি মাত্র পাঁচ মিনিটের ‘স্ট্রেচিং’ বা দ্রুত হাঁটা বা বসে ব্যায়ামের মাধ্যমেও এই উপকার মিলবে।
আর সারাদিনের যে কোনো সময় ৪৫ থেকে দেড় ঘণ্টার সম্পূর্ণ মাত্রার ব্যায়ামে অলসভাব যেমন কাটবে তেমনি উন্নত হবে মনোযোগ।
তবে অতিমাত্রায় শক্তি-নির্ভর ব্যায়াম করলে দুর্বল লাগতে পারে।
পুষ্টিকর স্মুদি গ্রহণ
সারাদিন শক্তি পাওয়ার অন্যতম মাধ্যম হল পুষ্টিকর স্মুদি পান করা। কারণ এতে থাকা উপাদান মিশ্রিত হয়েই থাকে। ফলে গ্রহণ করলে দ্রুত পুষ্টি শোষিত হয় দেহে।
এজন্য পুষ্টিকর উপাদান দিয়ে স্মুদি তৈরির পরামর্শ দেন, যুক্তরাষ্ট্রের লুজিয়ানা-ভিত্তিক পুষ্টিবিদ অ্যামি ডেভিস।
ফল, সবজি, বাদাম, বীজ ও দই দিয়ে তৈরি করা স্মুদি দেহের শক্তির মাত্রা বজার রাখতে ভূমিকা রাখে।
প্রশান্তির ঘুম দেওয়া চেষ্টা করা
“পর্যাপ্ত ঘুম হল শরীরের শক্তি বজায় রাখার অন্যতম শর্ত”- মন্তব্য করেন নিউ ইয়র্ক/ নিউ জার্সি-ভিত্তি পুষ্টিবিদ অ্যালায়সা স্মোলেন।
অনেকে মনে করে ঘুমের অভাব পূরণ করে নেবেন সাপ্তাহিক ছুটির দিনে। তবে এতে কোনো কাজ হয় না।
এই পুষ্টিবিদ বলেন, “দেহঘড়ির ছন্দ ঠিক রাখতে নিয়মিত ঘুমের সময় বজায় রাখতে হবে। এজন্য রাতে ‘স্ক্রিন টাইম’ কমানো, ঘুমের অন্তত এক ঘণ্টা আগে ভারী খাওয়া বাদ দেওয়া এবং শোবার ঘর অন্ধকার করা প্রয়োজন হবে।”
এছাড়া দিনে ‘ন্যাপ’ বা স্বল্প ঘুমের মাত্রাও কমাতে হবে, যাতে রাতে ঠিকঠাক ঘুম হয়।
বেশি খাওয়া এড়ানো
উজ্জীবিত থাকার পাশাপাশি মনোযোগ বৃদ্ধিতে দিনের যে কোনো সময় বেশি খাওয়া এড়াতে হবে।
শিকাগো-ভিত্তিক পুষ্টিবিদ ও লেখক ডেবরাহ মার্ফি বলেন, “বেশি খেলে ঘুমঘুম লাগার অভিজ্ঞতা আমাদের সকলেরই আছে। এর কারণ হল দেহ স্বাভাবিকভাবেই সব খাবার একসঙ্গে হজম করা শুরু করে। ফলে ক্লান্তিবোধ হয়।”
তাই তিনবেলার খাবার ছাড়াও সারাদিন ধরে কয়েক ঘণ্টা পরপর হালকা নাস্তা করা উপকারী।
মার্ফি বলেন, “কী খাওয়া হচ্ছে সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। প্রোটিন-ধর্মী খাবারের চেয়ে কার্বোহাইড্রেইটস এবং চর্বি নির্ভার খাবার বেশি খেলে ক্লান্তিবোধ কাজ করবে বেশি।”
আরও পড়ুন