ঘুম ছাড়াও ক্লান্তিবোধ দূর করতে কিছু অভ্যাস রপ্ত করতে হয়।
Published : 08 Apr 2024, 01:17 PM
সাত-আট ঘণ্টা ঘুমের পরও সকালে বিছানা ছাড়তে মন চায় না। মনে হয় পাশ ফিরে আবার ঘুমাই।
অথবা দুপুরে খাওয়ার পর কোথা থেকে যেন রাজ্যের ঘুম নেমে আসে চোখে।
এরকম ক্লান্তি লাগলে কিছু অভ্যাস পরিবর্তনের প্রয়োজন হতে পারে।
গভীর ঘুম
সাধারণভাবে বলা হয়- সাত আট ঘণ্টা ঘুমানো জরুরি। তবে এর সাথে ভালো মানের ঘুমেরও প্রয়োজন রয়েছে। নিরবিচ্ছিন্ন ঘুমের সাথে গভীর ঘুম না হলে শরীর ও মস্তিষ্ক পুরোপুরি বিশ্রাম পায় না।
হার্ভার্ড হেল্থ’য়ের তথ্যানুসারে- গভীর ঘুম বা ‘স্লো ওয়েভ স্লিপ’ দেহের শক্তির মাত্রা বাড়াতে ভূমিকা রাখে।
তাই ঘুমের মান উন্নত করতে প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমতে যাওয়া এবং ওঠার অভ্যাস করতে হবে।
আরও পড়ুন: ভালো ঘুমের জন্য
পুষ্টি
খাওয়া দাওয়া হচ্ছে ঠিকই। তবে খাবার থেকে প্রধান পুষ্টি উপাদানগুলো না মিললে শরীর ক্লান্ত লাগতে পারে।
খাবার থেকে দেহ সাধারণভাবে যেসব পুষ্টি উপাদান গ্রহণ করে সেগুলো হল- কার্বোহাইড্রেইটস, প্রোটিন ও চর্বি। এগুলো থেকেই শরীর শক্তি পায়, যা ক্যালরি হিসেবে গননা করা হয়।
এই বিষয়ে রিয়েলসিম্পল ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ক্যারলিনা নিবাসী পুষ্টিবিদ জেসমিন ওয়েস্টব্রুকস বলেন, “শক্তি ধরে রাখতে বিভিন্ন ধরনের খাবারের সংমিশ্রণ থাকতে হবে। যেমন- সবজি, পূর্ণ শষ্য, চর্বিহীন মাংস, স্বাস্থ্যকর চর্বি- যেমন বাদাম ও অলিভ অয়েল।”
মৌলিক পুষ্টি উপাদান গ্রহণ না করলে বা নিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস থেকে সারাদিন শ্রান্ত বোধ হতে পারে।
আরও পড়ুন: পুষ্টির চাহিদা মেটানোর আদর্শ খাবার
দুপুরের ভারী খাবার থেকে ক্লান্তি
একেকজনের খাদ্যাভ্যাস একেকরকম। কেউ তিন-চার ঘণ্টা পর খায়। কেউ আবার কয়েক ঘণ্টা পরপর নাস্তা করে।
তবে একটা কথা মনে রাখতে হবে দুপুরে ভারী খাবার খাওয়া মানেই দেহকে ক্লান্ত করে ফেলা।
ওয়েস্টব্রুকস বলেন, “বেশিমাত্রায় খাওয়ার কারণে রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ যেমন বেড়ে যায়, তেমনি দ্রুত কমেও আসে। ফলে দেহে অবসন্নভাব তৈরি হয়।”
এছাড়া ভাজাপোড়া বা ফাস্টফুড, অতিরিক্ত কফি পান এবং আঁশযুক্ত খাবার কম খাওয়ার কারণেও দেহে শক্তির অভাব দেখা দেয়।
“আবার সকাল বা দুপুরের খাবার এড়িনো ঠিক নয়”- একই প্রতিবেদনে মন্তব্য করেন ফ্লোরিডা’র পুষ্টিবিদ অ্যাশলে কার্টার।
খাবার থেকেই প্রধান শক্তি আসে। তাই দেহ কী চায় সেটা বুঝে উন্নত মানের প্রোটিন ও পূর্ণ শষ্যের খাবার দিতে হবে শরীরকে। অতিরিক্ত ও ভারী খাদ্যাভ্যাস এড়াতে হবে।
আরও পড়ুন: বেশি খেলে যে কারণে ঘুম পায়
পর্যাপ্ত পানি পান করতে ভুলে যাওয়া
শক্তির মাত্রা ধরে রাখার প্রধান চাবিকাঠি হল দেহকে আর্দ্র রাখা। আর পানি দেহের কোণায় কোণায় পুষ্টি পৌঁছে দিতে সাহায্য করে।
তাই পানিশূন্যতা রোধে পর্যাপ্ত পানি পানের অভ্যাস গড়ার পরামর্শ দেন, অ্যাশলে কার্টার। এক গ্লাস পানি পান দিয়ে দিন শুরু করা জরুরি। এরপর সারাদিনে অল্প অল্প করে পানি পান চালিয়ে যেতে হবে।
নিজের ও মানসিক যত্ন
সারাদিন নানান কাজে ব্যস্ত থাকা, পরিবারের দায়িত্ব পালন করা, বন্ধুদের সাথে আড্ডা বা কোনো অনুষ্ঠানে যাওয়া- এসবের পর ক্লান্তি ঝরাতে পর্যাপ্ত ঘুমের প্রয়োজন হয়। অনেকে সাত-আট ঘণ্টা ঘুমানোর চিন্তা করেন, কেউ আবার দুপুরে একটু ঘুমিয়ে নেন।
তবে শুধু ঘুম নয় বিশ্রামের জন্য অন্যান্য বিষয়গুলোর দিকেও খেয়াল দিতে হবে।
মার্কিন চিকিৎসক ও ‘সিক্রিড রেস্ট’ বইয়ের লেখক সান্দ্রা ডাল্টন-স্মিথ বিশ্রামকে সাতটি ভাগে ভাগ করেছেন। সেগুলো হল- সামাজিক, সংবেদনশীল, সৃজনশীল, আধ্যাত্মিক, শারীরিক, মানসিক এবং মানসিক বিশ্রাম।
যেমন- সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ব্যবহার না করার মানে হল, সংবেদনশীল বিশ্রাম। যা শ্রান্তি ও অতিরিক্ত উত্তেজনা কমাতে সাহায্য করে।
কয়েকটি সন্ধ্যা বা রাত নিজের মতো কাটানো যেতে পারে। যাতে সময়টা নিজের মতো করে সাজিয়ে উপভোগ করা যায়। সেটা হতে পারে ঘরে টিভিতে পছন্দের অনুষ্ঠান দেখা। কিংবা উদ্যানে নিজের মতো হাঁটাহাঁটি করা, বা নিজের কোনো শখ পূরণ করা।
প্রায় সময় এভাবে নিজেকে বিশ্রাম দিতে পারলে আরও বেশি দায়িত্বশীল হওয়া যায়। হয়ত সবসময় সুযোগ মিলবে না। তবে এই ধরনের বিশ্রামগুলো নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। প্রাথমিক অবস্থায় মনে হতে পারে এটা স্বার্থপরতা বা অলস জীবনযাপন।
তবে সতেজ বোধ করার জন্য এই ধরনের বিশ্রামের মধ্যে কোনটি নিজের জন্য প্রয়োজন সেটা খুঁজে বের করতে হবে। এই সাত ধরনের বিশ্রাম শক্তির অবক্ষয় রোধ ও মানসিক উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
আরও পড়ুন
মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার ১০ উপায়