গরম থেকে ত্বকে পানি-গোটা উঠতে পারে। সঠিক ব্যবস্থা না নিলে ক্ষতি হতে পারে বেশি।
Published : 18 Apr 2024, 07:47 PM
অতি গরম থেকে ত্বকে পানিযুক্ত ছোট দানা ওঠে। দ্বিতীয় মাত্রার রোদপোড়া থেকে চামড়ার এই সমস্যা দেখা দেয়।
সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির সংস্পর্শে ত্বকের উপরিভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে এই অবস্থা তৈরি হয়।
নিউ ইয়র্ক ভিত্তিক চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. ব্রেন্ডান ক্যাম্প এই বিষয়ে হেল্থ ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেন, “গরম থেকে হওয়া ফুসকুড়ি- ব্যথা ও চুলকানি যুক্ত হয়। ভেতরে থাকে তরল, যা ফেটে গিয়ে বের হয়ে আসে। তীব্রতার ওপর নির্ভর করে চিকিৎসকা করা হয়। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ঘরোয়াভাবে নিরাময় করা যায়।”
তবে যতবার গরম থেকে ফুসকুড়ির সমস্যা দেখা দেবে ততবারই ত্বকের ক্ষতি, অকালে বার্ধক্যের ছাপ ও ত্বকের ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।
লক্ষণ
দেখতে ছোটদানাদার ভেতরে সাদা, হলদে বা স্বচ্ছ তরল থাকে। সাধারণত রোদেপোড়ার কয়েক ঘণ্টা থেকে দিন কয়েকের মধ্যে এই ফুসকুড়ি উঠতে দেখা যায়।
ত্বকের আক্রান্ত স্থানে অনেক সময় লালচে হয়ে ফুলে ওঠে। হতে পারে একটি বা অনেকগুলো।
ধরলে বা ছুঁলে ব্যথা লাগে। প্রথম দিকে প্রদাহ না থাকলেও ৬ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ব্যথা করতে পারে।
সাধারণত খুবই চুলকানি যুক্ত হয়। বিশেষ করে শুকানোর সময়।
সারতে ৭ থেকে ১০ দিন লাগে। তবে শুকাতে ২১ দিনও গড়াতে পারে। সেরে ওঠার পরও ত্বকে দাগ রেখে যায়।
ঝুঁকি যাদের বেশি
সাধারণত যাদের গায়ের রং হালকা তাদের গরমে ফুসকুড়ি ওঠার ঝুঁকি বেশি। কারণ তাদের মেলানিন কমের কারণে গায়ের রং হালকা হয়। আর মেলানিন ত্বককে অতি বেগুনি রশ্মির হাত থেকে রক্ষা করে। তবে যাদের ত্বক গাঢ় রংয়ের তাদেরও ফুসকুড়ি হতে পারে।
এছাড়াও ফুসকুড়িতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশিদের মধ্যে আছে
শিশু ও সদ্যজাত শিশু
সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টার মধ্যে রোদে থাকা। কারণ এই সময়টায় অতি বেগুনিরশ্মি বেশি মাত্রায় থাকে।
সানস্ক্রিন ব্যবহার না করা
উঁচু ভূমিতে থাকা যেখানে সূর্যালোক বেশি পড়ে।
পানি বা বালুর কাছাকাছি সময় বেশি কাটানো। কারণ এগুলো সূর্য রশ্মি প্রতিফলিত হয়ে গায়ে লাগে।
সূর্যালোকের প্রতি স্পর্শকাতর করে ফেলে এরকম ওষুধ খাওয়া। যেমন- অ্যান্টিবায়োটিকস, টেট্রাসাইক্লিন ও ডক্সিসাইক্লিন।
যেভাবে বোঝা যায়
ত্বকে যে কোনো ধরনের ফুসকুড়ি উঠলে অবশ্যই চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। আর গরম থেকে ফুসকুড়ি ওঠার সাধারণ বৈশিষ্ট্যের মধ্যে রয়েছে
ফুসকুড়ির মাথা লালচে হওয়া
ব্যথা না কমে বাড়তে থাকা
চাপ দিলে মনে হবে ফেটে গিয়ে ভেতরের পানি বের হয়ে যাবে
জ্বর আসতে পারে একশো’র ওপর।
প্রতিকার
কিছু ঘরোয়া পন্থা রয়েছে যেগুলো ব্যথা কমাতে পারে।
আক্রান্ত স্থান ঠাণ্ডা রাখতে শীতল ভাব দিতে হবে। ১৫ মিনিট শাওয়ার নেওয়া ভালো।
ফুসকুড়ির জায়গায় ‘নন স্টিক’ ব্যান্ডেজ ব্যবহার করা যাতে সংক্রমণ না ছড়ায়। দিনে দুবার ব্যান্ডেজ পরিবর্তন করতে হবে।
অ্যান্টিবায়োটিক ক্রিম ব্যবহার করা যায় চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে।
ঢিলাঢালা, হালকা সুতির জামা পরতে হবে। আর রোদ যাতে না লাগে ত্বকে সেভাবে থাকতে হবে। ফুসকুড়ি ভালো না হওয়া পর্যন্ত রোদ এড়াতে হবে।
আর্দ্র থাকতে হবে। কারণ ফুসকুড়ি মারাত্মক আকার ধারণ করলে পানিশূন্যতাও তৈরি হতে পারে দেহে। সাধারণ পানির পাশাপাশি ইলেক্ট্রোলাইট সমৃদ্ধ পানীয় পান করা উপকারী।
তৈলাক্ত পণ্য ব্যবহার এড়াতে হবে। যেমন পেট্রোলিয়াম জেলি। অনেকে ঘরোয়া চিকিৎসায় মেয়োনেইজ, বাটার, ডিমের সাদা অংশ, ল্যাভেন্ডার তেল বা টুথপেস্ট ব্যবহার করেন। এগুলো করা যাবে না। এর থেকে বরং জ্বালাপোড়া বাড়তে পারে। বরং হালকা ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা যেতে পারে।
ব্যথা কমানোর ওষুধ খাওয়া যেতে পারে।
ফুসকুড়ি খোঁটা যাবে না। ছোঁয়া, টেপা, চুলকানোর এড়াতে হবে। না হলে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়বে।
প্রতিরোধ করতে
গরম থেকে ফুসকুড়ি হওয়ার রোধ করতে ত্বককে রাখতে হবে সুরক্ষিত।
সানস্ক্রিন ও এসপিএফ যুক্ত লিপবাম ব্যবহার করতে হবে।
বাইরে থাকলে রোদ যাতে কম লাগে সেভাবে ঢেকে পোশাক পরতে হবে। তবে মোটা না, কাপড় হতে হবে হালকা ও সুতির যাতে বাতাস চলাচল করতে পারে।
সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত রোদে থাকা এড়াতে হবে। না হলে ছায়াতে থাকার ব্যবস্থা করতে হবে।
আরও পড়ুন