যে বয়সেই পিঠ ব্যথা হোক না কেনো, পুষে রাখা মস্ত বড় ভুল হবে।
আগের কোনো আঘাত না থাকলেও যে এই সমস্যা হবে না তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।
যুক্তারাষ্ট্রের ‘ব্যাপটিস্ট হেল্থ মায়ামি নিউরোসাইন্স’য়ের ‘স্পাইন সেন্টার’য়ের ‘মেডিকেল ডিরেক্টর’ ডা. রোনাল্ড বার্টন টোলচিন বলেন, “পিঠ ব্যথার কারণ খুঁজতে গিয়ে মেরুদণ্ডের নানান গুরুতর সমস্যা বেরিয়ে আসে। তাই যে বয়সেই পিঠ ব্যথা হোক না কেনো, অবহেলা করে পুষে রাখা মস্ত বড় ভুল হবে।”
ইটদিস নটদ্যাট ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে তিনি আরও বলেন, “মেরুদণ্ড হল পুরো শরীরের ভিত্তি। নিয়মিত শরীরচর্চা আর শারীরিক নড়াচড়া সবল মেরুদণ্ডের মুলমন্ত্র। তাই ‘আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন’য়ে পরামর্শ মোতাবেক সকলের উচিত দৈনিক নুন্যতম ৩০ মিনিট শরীরচর্চা করা।”
আর মেরুদণ্ডে গুরুতর কোনো সমস্যা দেখা দিচ্ছে কি-না সেই বিষয়ে বিভিন্ন লক্ষণের কথা জানিয়েছেন এই চিকিৎসক।
অনরবত ও তীব্র ব্যথা
ডা. টোলচিন বলেন, “এই ব্যথা সাধারণ পিঠ ব্যথা নয়। মেরুদণ্ডের অবস্থান যেমনই হোক না কেনো এই ব্যথার তীব্রতায় কোনো পরিবর্তন আসে না, আর তীব্রতাও আসলে অনেক হয়।”
মেরুদণ্ডের সাধারণ ব্যথা হয় ভোঁতা ধরনের কিন্তু এই ব্যথা হয় তীক্ষ্ণ বিদ্যুৎস্পৃষ্ঠ হওয়ার মতো। এই ব্যথার পেছনেই মেরুদণ্ডের বড় ধরনের সমস্যা লুকিয়ে থাকে।
পায়ে ব্যথা ও দূর্বলতা
মেরুদণ্ডের কোনো সমস্যার জন্য যদি কোনো স্নায়ুতে চাপ পড়ে, তবে সেটা ব্যথা কিংবা দূর্বলতা হিসেবে প্রকাশ পেতে পারে পায়ে।
চিকিৎসা শাস্ত্রে একে বলা হয় ‘নিউরোজেনিক ক্লোডিকেইশন’। আর এর প্রধান কারণ হল ‘স্পাইনাল স্টেনোসিস’।
শরীরের নিচের অংশে দুর্বলতা সৃষ্টি করে এই পরিস্থিতি। বিশেষত, পায়ের পাতায়। এর বিশেষ উপসর্গ হল প্রথমে পা অবশ হয়ে যায়, সুঁচ ফুটানোর মতো অনুভূতি হয়। পরে পা ভারি মনে হয়।
অনেক সময় ব্যথা শুরু হয় নিতম্বে, সেটা যায় পায়ে, সেখান থেকে পায়ের পাতায়।
কাঁপুনি ও জ্বর
ডা. টোলচিন বলেন, “পিঠ ব্যথার সঙ্গে যদি শরীরে কাঁপুনি কিংবা জ্বর আসে তাহলে বুঝতে হবে মেরুদণ্ডে সমস্যা হয়েছে কিংবা হয়ত কোনো স্নায়ুতে গুরুতর প্রদাহ হয়েছে। এই কাঁপুনি ও জ্বর যদি নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়ায় তবে দ্রুত হাসপাতালে যেতে হবে।”
রাতে ব্যথা
ডা. টোলচিন বলেন, “রাতের বেলা গভীর ঘুম থেকে ব্যথার কারণে যদি জেগে উঠেন তবে সেটা হতে পারে মারাত্মক মেরুদণ্ডের সমস্যার ইঙ্গিত।”
সাধারণ পিঠ ব্যথা বা বাত থেকে হওয়া পিঠ ব্যথায় মানুষ শুতে গিয়ে কষ্ট পায়, কোনোভাবে শুয়েই যেন আরাম হয় না। তবে নানানভাবে শোবার পর একটা নিদির্ষ্ট অবস্থানে শুয়ে তার আরাম হয়, ঘুমাতে পারে।
কিন্তু এক্ষেত্রে শোবার সময় কোনো ব্যথা থাকে না কিন্তু পরে তীক্ষ্ণ ব্যথার কারণে ঘুম ভাঙে মাঝরাতে। এই লক্ষণের পেছনে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে।
দ্রুত এই সমস্যা নিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
অস্বাভাবিকভাবে ওজন কমে যাওয়া
ডা. টোলচিন বলেন, “ক্যান্সারের উপসর্গ হিসেবে এই পরিস্থিতি বেশি দেখা যায়। ‘মেটাস্ট্যাটিক ক্যান্সার’ যখন মেরুদণ্ডে ছড়িয়ে পড়ে, প্রধানত তখনই রোগীর ওজন অস্বাভাবিক মাত্রায় কমে যায়।”
তাই পিঠ ব্যথার সমস্যা থাকার সঙ্গে যদি পর্যাপ্ত খাবার খাওয়ার পরও ওজন কমতে থাকে তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতেই হবে।
মল ও মূত্র ত্যাগে নিয়ন্ত্রণ হারানো
ডা. টোলচিন বলেন, “মেরুদণ্ডে গুরুতর ‘ডিস্ক হার্নিয়েশন’ হয়ে এমনটা হয়। অর্থাৎ মেরুদণ্ডের কোনো ‘ডিস্ক’ অনেকটা সরে গিয়ে যদি কয়েকটি স্নায়ুর ওপর একসঙ্গে চাপ ফেলে তখন মানুষ মল ও মূত্র ত্যাগের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারায়।”
একইভাবে স্নায়ুর গোড়ায় চাপ পড়লেও এই সমস্যা দেখা দেবে। নিয়ন্ত্রণ দুভাবেই হারাতে পারেন রোগী- নিজের অজান্তেই মূত্রত্যাগ করে ফেলতে পারেন, আবার চেষ্টা করেও মূত্র ত্যাগে ব্যর্থ হতে পারেন।
আরও পড়ুন