শুধু বয়স্ক মানুষই নয়, বিভিন্ন অভ্যাসের কারণে তরুণরাও এই সমস্যায় ভুগতে পারেন।
Published : 12 May 2015, 04:40 PM
জেড. এইচ সিকদার উইমেন্স মেডিকাল কলেজের ফিজিওথেরাপি বিভাগ এবং পিপলস পেইন ফিজিওথেরাপি অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন ক্লিনিকের প্রধান কনসালটেন্ট ডা. শিবলী নোমানী জানান, ডাক্তারি হিসাব অনুযায়ি শতকরা ৮০ ভাগ মানুষই তার জীবনকালে একবারের জন্য হলেও কোমরব্যথায় আক্রান্ত হয়ে থাকেন। ৪০ থেকে ৫০ বছর বয়সেই এই সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তবে তরুণরাও আশঙ্কার বাইরে নন। ডাক্তারি ভাষার এই সমস্যাকে বলা হয় এলবিপি (লো ব্যাক পেইন)।
দৈনন্দিন জীবনযাত্রা, বয়সের সঙ্গে শরীরের হাড় ও মাংসপেশির ক্ষয় ইত্যাদির কারণেই মূলত কোমরে ব্যথা হয়ে থাকে। থাকতে পারে বিভিন্ন জন্মগত সমস্যাও।
কোমর ব্যথার কারণ সম্পর্কে ডা. নোমনী বলেন, “বেশিরভাগই দৈনন্দিন জীবনযাত্রার বিভিন্ন অভ্যাসগত ভুলের কারণে এই রোগে আক্রান্ত হন। এদের মধ্যে আছে শরীরের ক্ষমতার তুলনায় অতিরিক্ত কাজ করা, ভারি জিনিসপত্র ওঠানো-নামানোর ক্ষেত্রে অসাবধানতা, বেশিক্ষণ চেয়ারে বসে থাকা, শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টির অভাব ইত্যাদি।”
তিনি আরও বলেন, “কোমরের হাড়ের গঠনগত জটিলতার কারণেও কোমরব্যথা হতে পারে। এছাড়াও স্পাইনাল টিউমার, হেমাঞ্জিওমা, কিডনিতে পাথর, গলব্লাডারে পাথর, ইউরিনারি ও গাইনোকোলজিকাল সমস্যা ইত্যাদি প্যাথলজিকাল কারণেও কোমরব্যথা হয়ে থাকে।”
তিনি বলেন, “কোমরের হাড়ের কোনো একটি অংশ সঠিকভাবে জোড়া না লাগাকে ডাক্তারি ভাষায় বলা হয় স্পাইনাল বাইফিডা। এবং লাম্বার সেক্রালাইজেশন হল মেরুদণ্ডের পাঁচ নম্বর হাড়ের ট্রান্সভার্স প্রসেস সেক্রামের সঙ্গে লেগে যাওয়া।”
“এছাড়াও মেরুদণ্ডের হাড়গুলোর মাঝখানের ফাঁকা স্থানগুলো চেপে যাওয়ার কারণেও কোমরে ব্যথা হতে পারে। হাড়ের মাঝখানের এই ফাঁকা স্থানগুলো ডাক্তারি ভাষায় বলা হয় ‘ডিস্ক’। আর এই সমস্যাকে বলা হল ‘ডিস্ক কলাপস”, বললেন ডা. নোমানী।
দৈনন্দিন জীবনযাত্রার অভ্যাসগত ভুলগুলো সম্পর্কে ডা. শিবলী নোমানী বলেন, “দীর্ঘ সময় চেয়ারে বসে থাকা কোমরব্যথা হওয়ার একটি বড় কারণ। অনেকেই মনে করেন শক্ত কাঠের চেয়ারে কিংবা নরম গদিযুক্ত চেয়ারে বসলে কোমরব্যথার হওয়ার সম্ভাবনা কমে। তবে এই ব্যথা এড়ানোর জন্য পিঠে হেলান দিয়ে বসাই বেশি জরুরি।”
তিনি পরামর্শ দিতে গিয়ে বলেন, “এক্ষেত্রে যেসব চেয়ারের হেলান দেওয়ার অংশটি বাঁকানো সেসব চেয়ার ব্যবহার করা দরকার। আর অতিরিক্ত নরম গদিযুক্ত চেয়ারে বসলেও কোমরের ক্ষতি হতে পারে। এজন্য পাতলা গদির চেয়ারে বসতে হবে।”
দীর্ঘ সময় ধরে মোটরসাইকেল চালানো, এক কাঁধে ব্যাগ বা ভারি কিছু বহন করার কারণেও কোমরে ব্যথা হওয়ার আশঙ্কার কথা জানালেন ডা. শিবলী নোমানী। হাঁটার সমস্যার কারণেও কোমরব্যথা হতে পারে।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, “প্রত্যেকটি মানুষেরই হাঁটার একটি ধরণ থাকে। কেউ সামনে ঝুঁকে হাঁটেন, কেউ আবার একপাশে বাঁকা হয়ে হাঁটেন। এ অভ্যাসগুলো পরিবর্তন করার চেষ্টা করতে হবে। হাঁটার সময় শরীর সোজা রাখতে হবে। এছাড়া একটানা বেশিক্ষণ জোরে হাঁটা উচিত নয়। উঁচুনিচু স্থানে ওঠানামা করার সময় সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।”
তার কথায়, “শরীরে চর্বি জমে যাওয়ার কারণে ওজন বেড়ে যায়। এতে কোমরের উপর চাপ পড়ে। ফলে কোমরের হাড় বেঁকে যেতে পারে।”
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ মিনিট ব্যায়াম করার পরামর্শ দেন ডা. নোমানী।
তিনি বলেন, “নিজেকে প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ মিনিট সময় দিন। এই সময়ে সাধারণ ব্যায়ামগুলোর মাধ্যমে শরীরে মাংসপেশিগুলো প্রসারিত করার অভ্যাস গড়ে তোলার চেষ্টা করুন।”
কোমরব্যথায় আক্রান্ত হলে করণীয় সম্পর্কে ডা. শিবলী নোমানী বলেন, “প্রথমবারের মতো ব্যথা হলে অবহেলা না করে বিশ্রাম নিতে হবে। কোমরে গরমভাপ দিলে উপকার পেতে পারেন। কোমরব্যথার বিভিন্ন মলম ব্যবহার করতে পারেন। তবে মালিশ করা যাবে না। ব্যথা তিন দিনের বেশি স্থায়ী হলে অবশ্যই একজন ফিজিওথেরাপিস্ট কিংবা নিউরোলজিস্টের পরামর্শ নিতে হবে।”
ছবির মডেল: তৃষা ও জিতু। ছবি সৌজন্যে: ই স্টুডিও।