অনেকেই সহজে অসুস্থ হয় না, আবার কেউ কেউ অল্পতেই ঠাণ্ডা-কাশিতে ভোগেন।
Published : 17 Sep 2024, 03:25 PM
প্রাপ্তবয়স্ক একজন মানুষ বছরে গড়ে দুতিনবার ঠাণ্ডা-কাশিতে আক্রান্ত হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রিয় রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংস্থা (সিডিসি)’র এই তথ্য জানিয়ে ‘টেক্সাস হেল্থ রিসোর্স’য়ের সংক্রমক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. নিখিল ভাবানি বলেন, “মানুষ ভেদে এই অবস্থা ভিন্ন হতে পারে, বিশেষ করে নারীদের ক্ষেত্রে।”
ওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এই চিকিৎসক আরও বলেন, “পুরুষদের চাইতে ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সি নারীরা বেশি মাত্রায় সাধারণ ঠাণ্ডা কাশিতে ভুগে থাকেন।”
নানান গবেষণায় দেখা গেছে হরমোনের পরিবর্তন সাথে অসুস্থ শিশু সন্তান থাকা এর প্রধান কারণ।
বেশিরভাগ সময় অসুস্থ থাকার আরও নানান কারণ রয়েছে। যেমন-
পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া
গভীর রাত পর্যন্ত জেগে থাকার অভ্যাসটা ক্ষতিকর।
‘স্লিপ’ সাময়িকীতে প্রকাশিত ‘ল্যান্ডমার্ক ক্লিনিক’য়ের একটি গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে ডা. ভাবানি জানান, নানান রকম জীবাণুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা তৈরি করতে পর্যাপ্ত ঘুমের প্রয়োজন হয়। প্রতি রাতে যারা সাত ঘণ্টা বা এর বেশি সময় ঘুমায় তাদের তুলনায় যারা ছয় ঘণ্টার বেশি ঘুমায় না, তারা সাধারণত বেশিমাত্রায় অসুস্থ হয়।
তাই প্রতিরাতে অন্তত সাত ঘণ্টা ঘুমানোর চেষ্টা করতে হবে।
মানসিক চাপে থাকা
সারাক্ষণ মানসিক চাপে থাকলে অসুস্থ থাকার পরিমাণ বাড়তে পারে দুই গুণ।
‘পার্সপেক্টিভ ইন সাইকোলজি সায়েন্স’ সাময়িকীতে প্রকাশিত ‘কার্নেগি মেলোন ইউনিভার্সিটি’র মনোবিজ্ঞান বিভাগের করা গবেষণায় এই তথ্য উঠে আছে।
অপর্যাপ্ত ঘুমের মতো অতি মাত্রায় দীর্ঘমেয়াদে মানসিক চাপে থাকলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে যায়। ফলে সহজেই জীবণুর আক্রমণের শিকার হতে হয়।
দীর্ঘমেয়াদি রোগ থাকা
বিভিন্ন ধরনের রোগে অনেকদিন ধরে ভুগলে রোগ প্রতিরোধ প্রক্রিয়া ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক’য়ের তথ্যানুসারে এমন রোগের মধ্যে রয়েছে- রিউমাটয়েড আর্থাইটিস, সোরায়সেস আর্থারাইটিস, থাইরয়েডের সমস্যা, টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিস ইত্যাদি।
পরিবেশ
আশপাশের পরিবেশ পরিস্থিতির কারণে অসুস্থতার পরিমাণ বাড়তে পারে। যেসব জায়গায় জীবাণুর বিস্তার বেশি ঘটে সেখানে বারবার যাওয়া পড়লে সংক্রমক রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
যেমন- লোকালয় পূর্ণ এলাকা, সর্ব সাধারণের ব্যবহার করা শৌচাগার বা সেখানকার দরজার হাতল, সুপার শপের বাজার করার ট্রের হাতল, সিঁড়ির রেলিং বা লিফটের বোতাম ইত্যাদি।
শিশু সন্তান থাকলে
শিশুরা আদরের, যে কারণে অন্যান্যরা তাদের দেখলেই আদর করতে চায়। ফলে নানান জনের সংস্পর্শে জীবাণু ঘরে ঢোকার পরিমাণ বাড়তে পারে, আর সেটা থেকে ঘরের মানুষদের অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে- মন্তব্য করেন ডা. ভাবানি।
নির্দিষ্ট কিছু পুষ্টির অভাব
স্বাস্থ্যবান থাকাটা অনেকাংশে নির্ভর করে খাদ্যাভ্যাসের ওপর। ভিটামিন সি, ডি এবং ই’র সাথে নানান ধরনের খনিজ- জিঙ্ক ও সেলেনিয়াম রোগ প্রতিরোধ শক্তি বাড়াতে কাজ করে।
“দেহে এসবের ঘাটতি থাকলে অসুস্থ থাকার পরিমাণ বাড়তেই পারে”- বলেন ডা. ভাবানি।
বেশিরভাগ সময় অসুস্থ হওয়া প্রতিরোধ করতে
ওপরের এক বা একাধিক কারণ মিলে গেলে অসুস্থ হওয়ার হাত থেকে নিজেকে বাঁচাতে নানান পন্থা অবলম্বন করার পরামর্শ দেন, ডা. ভাবানি।
হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়া: শুধু হাতের মাধ্যমে জীবণুর সংক্রমণে শিকার হয়ে ফুসফুসের অসুস্থতায় ভোগার পরিমাণ হল ২০ শতাংশ; আর পেটের রোগের ভোগার সম্ভাবনা বাড়ে ৩০ শতাংশ- জানায় সিডিসি।
তাই বাসায় ফিরে, অফিসে থাকার ক্ষেত্রে আর খাওয়ার আগে অবশ্যই ভালো মতো হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়তে হবে।
পুষ্টিকর খাবার খাওয়া: পূর্ণ শষ্য, ফল, সবজি, মটর, বাদাম, বীজ- এসব খাবার বেশি করে খাওয়ার পরামর্শ দেন ডা. ভাবানি। আর এড়াতে হবে প্রক্রিয়াজাত এবং ভাজাপোড়া খাবার।
ব্যায়াম: নিয়মিত শরীরচর্চা করলে রক্ত প্রবাব স্বাস্থ্যকর পর্যায়ে থাকে। জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য শ্বেত কণিকার মাত্রা বাড়ে। এছাড়া ব্যায়াম মানসিক চাপ কমাতেও সাহায্য করে।
পর্যাপ্ত ঘুম: প্রতিরাতে অন্তত সাত ঘণ্টা ঘুমাতে হবে। যদি ঘুমিয়ে পড়তে সমস্যা হয় তবে নানান পদ্ধতি অবলম্বন করা যেতে পারে। যেমন-
জনপ্রিয় খাবার তবে ঘুমের জন্য ক্ষতিকর
রাতে যেসব খাবার খেলে ঘুমের বারোটা বাজতে পারে
আনন্দ করা: “মানসিক চাপ কাটাতে সহায়তা করে আনন্দময় সময়। যা কিনা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও ভূমিক রাখে”- বলেন ডা. ভাবানি।
তাই ইয়োগা, নিজের ডায়রি লেখা, সংগীত শোনা বা নানান রকম শখ পূরণ যেমন- ছবি আঁকার বা যেগুলো করতে ভালোলাগে সময় বের করে সেগুলো করতে হবে।
ভ্যাকসিন নেওয়া: ‘ফ্লু’ এবং ঠাণ্ডা-কাশি থেকে বাঁচতে নানান ধরনের ভ্যাকসিন ইঞ্জেকশন নেওয়া যায়। এক্ষেত্রে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
ডাক্তারের কাছ যেতে হবে যখন
“এরকম কোনো নির্দিষ্ট সংখ্যা নেই যে, এতবার অসুস্থ হলে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে”- বলেন ডা. ভাবানি।
তবে বছরের বেশিরভাগ সময় অসুস্থ থাকা বা সাধারণ সময়ের চাইতে বারবার ঠাণ্ডা-কাশি, পেটের সমস্যা ইত্যাদিতে ভোগার পরিমাণ বাড়লে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া সময় হয়েছে বুঝতে হবে।
আরও পড়ুন
অসুস্থ অবস্থায় যে ধরনের পানীয়তে আরাম মেলে