ঢাকায় সিনে উৎসবে এসে অভিনয় জীবনের ইতি টানার ইংগিত দিলেন এই অভিনেতা।
Published : 16 Jan 2023, 05:17 PM
বাংলা, হিন্দি, তামিল মিলিয়ে তার অভিনীত সিনেমার সংখ্যা একশর কাছাকাছি; ওই সংখ্যার হিসাবকে থামিয়ে দিয়ে এবার ‘অবসরে যেতে চান’ সত্যজিত রায়ের ‘ফেলুদা’ চরিত্রে নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া সব্যসাচী চক্রবর্তী।
পশ্চিমবঙ্গের এ অভিনেতা বললেন, “আমার সময় শেষ। এখন রিটায়ার্ড। এখন অবসরপ্রাপ্ত।”
চলচ্চিত্র উৎসবে যোগ দিতে ঢাকায় এসেছেন সব্যসাচী চক্রবর্তী। উৎসবের উদ্বোধনী দিন শনিবার তার অভিনীত ‘জেকে-৭১’ সিনেমাটি দেখানো হয়।
এক সাক্ষাৎকারে গ্লিটজকে তিনি বললেন ঢাকার প্রতি নিজের অনুরাগের কথা; নিজের ক্যারিয়ার আর বাংলাদেশের চলচ্চিত্র নিয়েও আলাপ হল।
কোনো রাখঢাকা না রেখেই সব্যসাচী বললেন, “ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে আসতে পেরে খুবই ভালো লেগেছে। এর আগেও নেমতন্ন করেছিল। মহামারীর কারণে আসতে পারিনি। এবার এসে খুবই ভালো লেগেছে।”
দুই শহরের জনজীবন ও সংস্কৃতির মিল-অমিল বিচারে সব্যসাচীর ভালোলাগার পাল্লা বেশি ঝুঁকে আছে ঢাকার দিকেই।
“কলকাতার চেয়ে ঢাকা অনেক বেশি বাঙালিত্বকে ধারণ করে। ঢাকায় বাঙালি বেশি। কলকাতায় তো অবাঙালি বেশি। কলকাতা শহরটা মেট্রোপলিটন সিটি হয়ে গেছে। ওখানে বাঙালি ছাড়াও অনেক ধরনের মানুষ বসবাস করে। মিক্সড কালচারের শহর বলা যায়।
এজন্য এ শহরে এলে বরাবরই অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করে। এবার তার সঙ্গে যোগ হয়েছে নতুন প্রসঙ্গ।“
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে উপজীব্য করে নির্মিত ‘জেকে-৭১’ সিনেমার গল্প সব্যসাচীর বিচারে ‘চমৎকার’।
তিনি বলেন, “এবার আমার অভিনীত ‘জেকে-৭১’ ছবি দিয়ে ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধন হয়েছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এক ফরাসি যুবক বাংলাদেশের শিশুদের ঔষধ সাহায্য পাঠানোর দাবিতে পাকিস্তানের যাত্রীবাহী একটি বিমান হাইজ্যাক করে।“
দেশ-বিদেশের হলভর্তি সিনেমাপ্রেমীদের সামনে ‘জেকে-৭১’র প্রিমিয়ারের ঘটনাটি ‘ভীষণ আনন্দের’ বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশের সিনেমার খোঁজখবর রাখেন জানিয়ে সব্যসাচী বলেন, “ইদানিং বাংলাদেশে খুব ভালো ভালো সিনেমা হচ্ছে। ওটিটিতে আলাদা একটা দর্শক শ্রেণি তৈরি করছে।“
তবে বড় পর্দার জন্য আরও ‘ভালো’ সিনেমা বানানোর তাগিদ এসেছে তার কাছ থেকে।
“বড় পর্দার জন্য বেশি বেশি ভালো সিনেমা বানাতে হবে। হলেও দর্শক ফিরতে শুরু করেছে। এটা ধরে রাখলেই শুধু চলবে না, দিনকে দিন বৃদ্ধি করতে হবে।”
বাংলাদেশের সঙ্গে সব্যসাচীর অভিনয়ের সখ্য পুরনো। গত বছরেও সব্যসাচী ও বাংলাদেশের অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফা অভিনীত’ গণ্ডি’ দেখান হয় এই সিনে উৎসবে। এছাড়া এই দেশের ‘গোরা’, ‘পরবাসিনী’ ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি।
আগামীতে তার ইচ্ছা বা পরিকল্পনায় বাংলাদেশ আছে কি না প্রশ্ন করলে সব্যসাচী জানিয়ে দেন, তাকে আর কোনো ছবিতেই দেখা যাবে না, কারণ ছবির দুনিয়া থেকেই বিদায় নিচ্ছেন তিনি।
“আমার কাছে অনেক ছবিরই প্রস্তাব আসছে। সবাইকে না বলে দিয়েছি। আর কাজ করব না। আমার সময় শেষ।”
সব্যসাচী অভিনীত ‘জেকে-৭১’ ও ‘গণ্ডি’ দুটি সিনেমারই নির্মাতা ফাখরুল আরেফীন খান। এই নির্মাতা যদি ‘ব্যতিক্রমী’ কোনো গল্প নিয়ে সব্যসাচীর কাছে যান, তাহলে তিনি কী করবেন?
সব্যসাচীর উত্তর, “শুধু ফাখরুল কেন, সারা পৃথিবী থেকে অনেক স্ক্রিপ্ট আমার কাছে আসে। অনেকেই আমাকে তাদের গল্পে, তাদের সিনেমায় চাইছেন। সবাইকে না বলে দিয়েছি। ফাখরুলকেও ওই একই কথা বলব।”
সত্যজিৎ রায়ের ‘কালজয়ী’ গোয়েন্দা চরিত্র ফেলুদা প্রসঙ্গও আসে গ্লিটজের সঙ্গে আলপচারিতায়। নব্বইয়ের দশকে যে চরিত্রটি করে ঢাকা-কলকাতা দুই বাংলার দর্শকদের কাছেই দারুণ খ্যাতি কুড়িয়েছিলেন সব্যসাচী।
‘ফেলুদার কী বয়স বাড়ে?’ এই প্রশ্নে এল ভিন্ন উত্তর। সব্যসাচী বললেন, “আমি সব্যসাচী চক্রবর্তী। ফেলুদার থেকে আলাদা হয়ে গেছি। এতদিন অন্যের জন্য কাজ করেছি। এখন শুধুই নিজের জন্য কাজ করব।”
তো ‘নিজের’ জন্য কাজের তালিকায় কী কী আছে? সব্যসাচীর উত্তর, “খাওয়া, ঘুমানো, বই পড়া, টিভি দেখা, খেলা দেখা, এগুলোতে ব্যস্ত থাকব।”
একজন শিল্পী কি শিল্প ছেড়ে দূরে থাকতে পারে?’ সব্যসাচী বললেন, “আমি শিল্পী আপনাকে কে বলল? আমি মিস্ত্রি, জোর করে আমাকে শিল্পী বানানো হয়েছিল। আমি আগাগোড়া একজন মিস্ত্রি ছিলাম। আমার কাজ ছিল হাতুড়ি, ছেনি, স্ক্রু ড্রাইভার... এগুলো নিয়ে। সেখান থেকে জোর করে আমাকে অভিনেতা বানানো হয়েছে।”
সব্যবাচীর দুই ছেলে গৌরব চক্রবর্তী ও অর্জুন চক্রবর্তী অভিনয় করছেন। গৌবরকে দেখা গেছে গোয়েন্দা ব্যোমকেশ চরিত্রে। দুই ছেলের কাজ তার চোখে কেমন?
এই অভিনেতা বললেন, “ওদের কাজ নিয়ে আমি কেন মূল্যায়ন করব? ওরা ওদের মত কাজ করছে। কাজটা মূল্যায়ন করবে দর্শক।”
পুরনো খবর
ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব শুরু
‘ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব’-এ গণ্ডি
এবার ঢাকায় সব্যসাচী-সুবর্ণার ‘গণ্ডি’
চেহারার জন্য কেউ এমন চরিত্রে ডাকেনি: সব্যসাচী
ফেলুদার পর এবারই বাংলাদেশের ছবির সেটে জন্মদিনের কেক কাটলাম- সব্যসাচী চক্রবর্তী
আমি ফেলুদা নই: সব্যসাচী চক্রবর্তী