কিংবদন্তি অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের পর সত্যজিত রায়ের ‘ফেলুদা’ চরিত্রে নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন অভিনেতা সব্যসাচী চক্রবর্তী। নিজের নাম ছাপিয়ে ‘ফেলুদা’ নামেই জায়গা করে নিয়েছেন বাংলাভাষী দর্শকদের হৃদয়ে; তবে নিজেকে ‘ফেলুদা’ বলতে নারাজ বলে জানালেন এ অভিনেতা।
Published : 05 Feb 2020, 02:43 PM
বুধবার দুপুরে রাজধানীর একটি হোটেলে ফাখরুল আরেফিন খানের পরিচালনায় ‘গণ্ডি’ চলচ্চিত্রের প্রচারণার অংশ হিসেবে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের মুখোমুখি হলেন তিনি।
সত্যজিত রায়ের পরিচালনায় ‘ফেলুদা’ চরিত্রে অভিনয়ের আগ্রহের কথা তাকে জানানোর পর প্রত্যাখ্যাত হয়েছিলেন কেন?
উনি আমাকে ঠিক প্রত্যাখ্যান করেননি। উনি আমাকে বলেছিলেন, ‘আমি আর ফেলুদা করছি না। কারণ সন্তোষ দত্ত বেঁচে নেই; উনি বেঁচে থাকলে হয়তো ভাবতাম। কিন্তু এখন আর করব না। আমার ছেলে (সন্দীপ রায়) হয়তো করতে পারে, তার সঙ্গে কথা বলতে পারো। ‘
সন্দীপ রায়কে পীড়াপীড়ির পর শেষ পর্যন্ত তিনি আমাকে কাজের সুযোগ করে দেন।
সন্দীপ রায়ের পরিচালনায় যখন ‘বাক্স রহস্য’ করলেন তখন বাঙালিদের কাছে ফেলুদা মানেই সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়; নবাগত অভিনয়শিল্পী হিসেবে আপনার কাছে বিষয়টি কেমন চ্যালেঞ্জিং ছিল?
আমি কোনো চ্যালেঞ্জ নিইনি। সৌমিত্র চ্যাটার্জি আর ফেলুদা করবে না-এটা জেনেই আমি করেছিলাম। আমার মনে হয়েছিল ফেলুদার মতো একটা ফ্র্যাঞ্চাইজি বন্ধ হয়ে যাওয়া উচিত নয়। তাহলে ইয়াং জেনারেশন ভীষণভাবে বঞ্চিত হবে। ব্যক্তিগতভাবে ফেলুদা চরিত্রের প্রতি আমি আসক্ত ছিলাম। সেকারণেই সত্যজিত রায়কে বলেছিলাম, ‘আমাকে নিন না।’ আমাকে নেবেন কি নেবেন না- সেটা কিছু বলেননি। উনি বলেছিলেন, ‘ফেলুদা উনি আর করছেন না।’
বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তারুণ্যে ফেলুদার চরিত্রের সঙ্গে আপনার ব্যক্তিগত জীবনের খানিকটা মিল ছিল। সেই বোহেমিয়ান জীবন ছেড়ে ঘর-সংসার শুরুর পর ফেলুদার কোনো বৈশিষ্ট্য আর আপনার মধ্যে টিকে আছে?
ফেলুদার কোনো বৈশিষ্ট্য টিকে থাকার দরকার নেই। আমি তো অভিনেতা। আমি তো ফেলুদা নই। ‘গণ্ডি’ সিনেমায় যে চরিত্র করছি-সেটাও একটি চরিত্র। সেই চরিত্র কিন্তু আমি না। ফেলুদারও অভিনয়ের সময় আমি যা নই সেটাই করেছি।
কিন্তু ফেলুদার চরিত্রের সঙ্গে আপনার মিল খুঁজে ফেরেন দর্শকরা…
সেটা দর্শকরা খুঁজে পেয়েছেন। আপনাদের ভালোবাসার জন্য এটা খুঁজে পেয়েছেন। আমার কোনো মিলই নেই। আমি যদি ফেলুদা হতাম তাহলে আমি কী করতাম সেটাই মূলত ছবিতে করার চেষ্টা করেছি। ফেলুদা সত্যজিত রায়ের, তার মতো তো হতেই পারব না।
চার দশকের ক্যারিয়ারে শত শত অনেক চরিত্রে অভিনয় করলেও দর্শকরা আপনাকে ‘ফেলুদা’ নামেই চেনে; শিল্পী হিসেবে এটি আপনার জন্য সংকট তৈরি করে?
একেবারেই নয়। এটা আমার আনন্দের জায়গা। আজ পর্যন্ত যতগুলো চরিত্রে অভিনয় করেছি তার মধ্যে ফেলুদাই আমার সবচেয়ে প্রিয় চরিত্র। কারণ ফেলুদার সঙ্গে আমার বাবার ভীষণ মিল আছে। যেহেতু সব ছেলেই নিজের বাবার মতো হতে চায় সেকারণে এটিকে আমার স্বপ্ন সফল হওয়া বলতে পারেন। সেই হিসেবে ফেলুদা করতে সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে।
দীর্ঘদিন ধরে ‘ফেলুদা’ রূপে পর্দায় নেই আপনি; সামনে কখনো দেখা যাবে?
এটা তো প্রযোজক-পরিচালকরা বলবেন, আমি করতে এখনও ইচ্ছুক। যদি আমাকে নেন; আমি করব।
এবার ‘গণ্ডি’ প্রসঙ্গ। এ চলচ্চিত্রে আপনার অভিনয়ের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
সিনেমার কথা যখন আরেফিন আমাকে বললেন তখন গল্পটা শুনে আমার মনে হয়েছিল সামাজিক ধারণা নিয়ে একটা গল্প। চরিত্রটা কীভাবে করব সেটা আমি পরিস্কার ছিলাম না। কারণ আমার চেহারা ও গলা রুক্ষ। আর অভিনয়টাও বলা যেতে পারে একটু পুলিশি-গোয়েন্দা গোছের। আমি এই ধরনের চরিত্র পারব কি?
উনিই (ফাখরুল আরেফিন) বলেছিলেন, ‘হ্যাঁ আপনি পারবেন।’ উনার সেই কনফিডেন্স ছিল। সেই কনফিডেন্সের ভিত্তিতেই আমি রাজি হয়ে গেলাম।
এটা অন্য ধরনের ছবি। এই ধরনের ছবি যে করিনি-তা নয়। কিন্তু প্রথমেই বাংলাদেশে এই ধরনের একটা ছবি হবে ও সুবর্ণা মুস্তাফার মতো মেধাবী অভিনয়শিল্পী আমার বিপরীতে থাকবেন তখন ঠিক বুঝে উঠতে পারিনি বিষয়টি কেমন হবে। এখন মনে হচ্ছে, ডিরেক্টরদের ছবিটি পছন্দ হয়েছে; কো-আর্টিস্টদেরও পছন্দ হয়েছে। এবার শেষ বিচার করবে দর্শক।
সুবর্ণা মুস্তাফার সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা কেমন?
ভীষণ ভালো। উনি এতদিনের পুরনো অভিনয়শিল্পী। কাজের সময় খুব কঠোর। যারা কাজে গাফিলতি দেখায় মূলত তাদের উপর এটি বর্ষিত হয়। উনি আমাকে ভীষণ হেল্প করেছেন। তার কাছ থেকে অনেকগুলো সাজেশনও পেয়েছি। আশা করছি, ছবিটি দর্শকদের ভালো লাগবে।
গণ্ডি’র পর বাংলাদেশের কোনো চলচ্চিত্রে অভিনয়ের পরিকল্পনা আছে?
নাহ। এখনও কোনো পরিকল্পনা হয়নি; কারো সঙ্গে কথাও হয়নি। সবকিছু মিলে গেলে তো কাজ করতে চাই।
ছবিঘর: সব্যসাচীর সাথে কিছুক্ষণ