লিজা বলেন, “বাবার অবস্থা একটু বেশিই ক্রিটিক্যাল হয়ে গেছে। শ্বাসকষ্ট হচ্ছে, অক্সিজেন লেভেল কমে গেছে। এখন অবস্থা একটু বেশিই খারাপ।”
Published : 15 Oct 2024, 05:54 PM
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসের সাথে জড়িয়ে থাকা সংগীত পরিচালক ও সুরকার সুজেয় শ্যামের শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন সুরকারের চিকিৎসা চললেও তার জন্য আইসিইউ শয্যা মিলছে না বলে জানিয়েছেন মেয়ে রূপমঞ্জুরী শ্যাম লিজা।
মঙ্গলবার দুপুরে লিজা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাবার অবস্থা একটু বেশিই ক্রিটিক্যাল হয়ে গেছে। শ্বাসকষ্ট হচ্ছে, অক্সিজেন লেভেল কমে গেছে। এখন অবস্থা একটু বেশিই খারাপ।”
কয়েক বছর ধরেই শারীরিক অসুস্থতা নিয়েই কাটছে সুজেয় শ্যামের দিন। গত জুন মাসেও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন এই সংগীতব্যক্তিত্ব। ক্যান্সার, ডায়েবেটিস, কিডনিসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত তিনি।
গত সেপ্টেম্বর তার হার্টে পেসমেকার বসানোর পর ইনফেকশন হয়ে যায় বলে জানান লিজা।
“বাবার পেসমেকার বসানোর কারণে ইনফেকশন হলে গত ২৪ সেপ্টেম্বর হাসপাতালে ভর্তি করেছিলাম। আজকে সকাল থেকে অবস্থা একটু বেশিই খারাপ হয়ে গেছে।”
আইসিইউতে শয্যা খালি না থাকায় তাকে সিসিইউতে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে লিজা বলেন, “আমরা আইসিইউ বেড পাওয়ার জন্য সবাই মিলে চেষ্টা করছি। এই হাসপাতালে আইসিইউ বেড খালি নেই। বেড ম্যানেজ হলে আইসিইউতে নেওয়া হবে। সবাই দোয়া করবেন।”
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসের সাথে জড়িয়ে আছে সুজেয় শ্যামের নাম। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের নয়টি গানে সুর করেছিলেন সুজেয় শ্যাম, যেগুলো একাত্তরের জুন থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত গাওয়া হয়েছিল।
এর মধ্যে রয়েছে ‘মুক্তির একই পথ সংগ্রাম’, ‘ওরে শোনরে তোরা শোন’, ‘রক্ত চাই রক্ত চাই’, ‘আজ রণ সাজে বাজিয়ে বিষাণ’, ‘আহা ধন্য আমার’,‘আয়রে চাষী মজুর কুলী’।
তার সুর করা গানের মধ্যে ‘রক্ত দিয়ে নাম লিখেছি’ এবং ‘বিজয় নিশান উড়ছে ওই’ গান দুটি বাংলাদেশের যে কোনো জাতীয় দিবসের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে আছে।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ যখন বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে, তখনই স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সুরকার ও সংগীত পরিচালক সুজেয় শ্যামকে বলা হল, বিজয়ের গান করতে।
এরপর শহীদুল ইসলামের লেখা ‘বিজয় নিশান উড়ছে ওই/ খুশির হাওয়ায় উড়ছে/ উড়ছে উড়ছে উড়ছে/ বাংলার ঘরে ঘরে’ গানটিতে সুর করেন সুজেয় শ্যাম।
মাত্র ১৫ মিনিট লেগেছিল গানটি লেখা ও সুর করতে; এরপর রেকর্ডিং। আর পুরো গানটার জন্ম হয়েছিল মাত্র এক ঘণ্টায়।
গিটার বাদক ও শিশুতোষ গানের পরিচালক হিসেবে ১৯৬৪ সালে তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তান চট্টগ্রাম বেতারে কর্মজীবন শুরু হয় সুজেয় শ্যামের। পরে তিনি ঢাকা বেতারে যোগ দেন।
১৯৬৯ সালে চলচ্চিত্রের সংগীত পরিচালক হিসেবে কাজ শুরু করেন সুজেয় শ্যাম। ঢাকাই চলচ্চিত্রে অবদানের জন্য তিনবার শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালক হিসেবে তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন।
বাংলাদেশ বেতারের প্রধান সংগীত প্রযোজক পদ থেকে ২০০১ সালে অবসরে যান সুজেয় শ্যাম।
২০০৬ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশ বেতারে প্রচারিত ৪৬টি গানের সংকলন নিয়ে ‘স্বাধীন বাংলা বেতারের গান’ শিরোনামে একটি অ্যালবামের সংগীত পরিচালনা করেন তিনি।
এর ধারাবাহিকতায় ২০১৩ সালে আরও ৫০টি গানের সংকলন নিয়ে ‘স্বাধীন বাংলা বেতারের গান-২’ নামে আরেকটি অ্যালবামের সংগীত পরিচালনা করেন শিল্পী। ‘টুনাটুনি অডিও’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সংগীত পরিচালক হিসেবেও কাজ করেছেন তিনি।
১৯৪৬ সালে সিলেটে জন্ম নেওয়া সুজেয় শ্যামকে সংগীতে অবদানের জন্য ২০১৮ সালে একুশে পদক দেওয়া হয়। তার আগে ২০১৫ সালে শিল্পকলা পদক পান তিনি।
সুজেয় শ্যামের আক্ষেপ, 'কেউ আর খোঁজ নেয় না'
জ্বর, শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে সুজেয় শ্যাম