অস্ট্রেলিয়ায় প্রবাসী এক বাংলাদেশি নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ অস্বীকার করে চিত্রনায়ক শাকিব খান দাবি করেছেন, তিনি সেখানে ‘হানি ট্র্যাপের শিকার’ হয়েছিলেন।
নির্বাহী প্রযোজক রহমত উল্লাহর বিরুদ্ধে করা মামলায় এই অভিযোগ করেন তিনি। চাঁদা দাবি ও হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ এনে বৃহস্পতিবার ঢাকার আদালতে এই মামলা করেন এই চিত্রনায়ক।
অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী রহমত উল্লাহ শাকিব খানের সিনেমা ‘অপারেশন অগ্নিপথ’র নির্বাহী প্রযোজক। এই সিনেমার প্রযোজক জানে আলম নামে আরেক প্রবাসী বাংলাদেশি। সহপ্রযোজক হিসেবে প্রবাসী আরেক নারীও রয়েছেন।
‘অপারেশন অগ্নিপথ’র পরিচালক আশিকুর রহমান, নায়িকা হিসেবে আছেন শিবা আলী খান। পাঁচ বছর আগে সিনেমাটি নির্মাণের ঘোষণা হয়েছিল, অস্ট্রেলিয়ায় শুটিংও করে এসেছিলেন শাকিব, তবে এটি এখনও মুক্তি পায়নি।
রহমত উল্লাহ গত ১৫ মার্চ দেশে এসে শাকিব খানের বিরুদ্ধে পরিচালক সমিতি, প্রযোজক সমিতি ও চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিতে লিখিত অভিযোগ করেন।
তাতে তিনি শাকিব খানের বিরুদ্ধে আর্থিক ক্ষতি সাধনের অভিযোগ করার পাশাপাশি বলেন, ২০১৭ সালে সিনেমার শুটিংয়ে অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে নারী সহপ্রযোজককে ‘ধর্ষণ’ও করেন এই চিত্রনায়ক, যা নিয়ে মামলাও হয়।
তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে শাকিব খান উল্টো রহমত উল্লাহকে ‘প্রতারক-বাটপার’ আখ্যায়িত করেন, যা নিয়ে তাকে উকিল নোটিসও পাঠিয়েছেন প্রবাসী ওই প্রযোজক।
রহমত উল্লাহর বিরুদ্ধে মামলায় সেই প্রসঙ্গ ধরে বলা হয়েছে, শুটিংয়ের জন্য শাকিব অস্ট্রেলিয়ায় গেলেও তখন নায়িকা শিবার ভিসা না হওয়ায় তিনি যেতে পারেননি। তখন ওই সহপ্রযোজককে নায়িকা করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন রহমত উল্লাহ, কিন্তু শাকিব তা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।
তাই শাকিবকে ফাঁসাতে রহমত উল্লাহ ভিন্ন পথ নিয়েছিলেন বলে দাবি করেন শাকিব।
তিনি বলেন, তখন রহমত উল্লাহ একদিন শুটিং শেষে তাকে ‘রিফ্রেশমেন্টের জন্য’ একটি ক্লাবে নিয়ে যান। সেখানে ওই নারীসহ (সহ প্রযোজক) আরও দু-তিনজন অপরিচিত ব্যক্তিকে দেখেন শাকিব। সেখানে খাওয়ার পর একটি পানীয় দেওয়া হয়, যা পান করে অসুস্থবোধ করেন শাকিব। তাই নিজ হোটেলে ফিরে যেতে চান। বিদায় নেওয়ার সময় তিনি রহমত উল্লাহ ও অন্যদের খুঁজে পাননি। তাই গভীর রাতে অসুস্থ শাকিবকে ওই নারী হোটেলে তুলে দিয়ে আসেন।
তখন অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলেন দাবি করে শাকিব বলেন, ওই অবস্থায় হোটেলে হয়ত রহমত উল্লাহরা কোনো আপত্তিকর কিছু করে ভিডিও করে রাখতে পারে বলে আশঙ্কা ছিল তার। পরে রহমত উল্লাহ এবং ওই নারী ভিডিও প্রকাশের ভয় দেখিয়ে তার কাছ থেকে এক লাখ অস্ট্রেলিয়ান ডলার চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না দিলে তার বিরুদ্ধে অস্ট্রেলিয়ায় মামলার হুমকি ও দেশে ফেরা বন্ধ করে দেওয়ার ভয় দেখান।
মানসম্মানের ভয়ে তখন বাংলাদেশি মুদ্রায় ৪০ লাখ টাকা রহমত উল্লাহকে দিয়েছিলেন বলে জানান শাকিব খান।
এরপর এই বছর রহমত উল্লাহ ১ লাখ ডলার চাঁদা দাবি করেন এবং তা না পেলে প্রাণনাশের হুমকি দেন বলে মামলায় অভিযোগ করেন শাকিব।
অস্ট্রেলিয়া পুলিশের কাছে ওই নারী যে অভিযোগ করেছিলেন, সেই অভিযোগও প্রমাণিত হয়নি বলে দাবি করেন শাকিব খান।
মামলায় তিনি বলেন, অস্ট্রেলিয়ান পুলিশ ‘হানি ট্র্যাপে’ পড়েছেন উল্লেখ করে এসব চক্র সম্পর্কে তাকে সতর্ক করে দিয়েছিল।
অন্যদিকে চলচ্চিত্র সংগঠনগুলোর কাছে দেওয়া অভিযোগে রহমত উল্লাহ বলেছিলেন, ২০১৭ সালে শাকিব খান শুটিং করতে অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে নারী সহ-প্রযোজককে ‘কৌশলে ধর্ষণ’ করেছিলেন।
অভিযোগে তিনি লিখেছেন, “ভুক্তভোগী এই নারীকে তিনি অত্যন্ত পৈশাচিকভাবে নির্যাতন করেন। গুরুতর জখমসহ রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়েছিল। নির্যাতিতা তখন এই ব্যাপারে অস্ট্রেলিয়ান পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। আমি সেই ফৌজদারি অভিযোগের সাক্ষী ছিলাম।
“ওইদিন আমরা যখন সহকর্মীকে নিয়ে হাসপাতালে ব্যস্ত, শাকিব খান তখন কাউকে কিছু না জানিয়ে চুপিসারে অস্ট্রেলিয়া থেকে চলে যান। এরপর থেকে শাকিবের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও আমরা ব্যর্থ হয়েছি।”
২০১৮ সালে শাকিব খান ফের অস্ট্রেলিয়ায় গেলে সেখানে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন বলেও দাবি করেন রহমত উল্ল্যাহ।
তিনি বলেন, “সামাজিক চাপে এবং আরও নিগ্রহের ভয়ে নির্যাতিতা প্রকাশ্যে মুখ খুলতে রাজি না হওয়ায় শাকিব সেই যাত্রায় ছাড়া পেয়ে যান।”
এই অভিযোগ দেওয়ার পর রহমত উল্লাহর বাংলাদেশ ছাড়া আটকাতে চেয়েছিলেন শাকিব খান। তাতে ব্যর্থ হয়ে তিনি বলেছেন, দেশে কারও সহযোগিতা পেয়ে অস্ট্রেলিয়ায় রওনা হতে পেরেছে রহমত।
বৃহস্পতিবার মামলা করার পর তিনি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “আজকে দিন শেষে জয়ের হাসিটা আমরাই হাসছি। দিনশেষে সেই প্রতারক কিন্তু পালিয়েই গেল। আমাদেরই জয় হল।”
আদালত শাকিব খানের জবানবন্দি শুনে বিবাদী রহমত উল্লাহকে আগামী ২৬ এপ্রিল আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়ে সমন জারি করেছে।