Published : 28 Mar 2025, 12:30 PM
মাথার ওপর গ্যাংস্টার লরেন্স বিষ্ণোইয়ের খুনের হুমকির কারণে নিরাপত্তাকর্মীর চক্রব্যূহ্যে থাকতে আর ‘ভালো লাগছে না’ বলিউডি অভিনেতা সালমান খানের।
সেই ভালো না লাগার কথা প্রকাশ করে এই অভিনেতা বলেছেন, ‘জীবন ও মৃত্যু দুটোই আল্লাহর হাতে’।
কারাবন্দি গ্যাংস্টার লরেন্স বিষ্ণোইয়ের দেওয়া লাগাতার হুমকিতে থাকা সালমান এ কথা বলেছেন ঈদে মুক্তি পেতে চলা তার ‘সিকান্দার’ সিনেমার প্রচার অনুষ্ঠানে গিয়ে।
এনডিটিভি লিখেছে সালমান বলেন, “আমার আয়ু আল্লাহর হাতে। যতটা আয়ু লিখিয়ে এনেছি ততটাই বাঁচব।"
দুই বছর আগে সালমানের বাবা চিত্রনাট্যকার সেলিম খানের হাতে ছেলের মৃত্যু নিয়ে উড়ো চিঠি আসার পর থেকেই সালমান নিজের নিরাপত্তা বাড়িয়েছিলেন। এরপর গেল বছর মুম্বাইয়ের বান্দ্রায় এই তারকার গ্যালাক্সি অ্যাপার্টমেন্টের বাড়ির সামনে গুলি এবং মুম্বাইয়ের বিধায়ক বাবা সিদ্দিকীকে গুলি করে হত্যা করার পর সালমানের সেই নিরাপত্তা জোরদার করা হয় চোখে পড়ার মত।
সালমান যাতায়াতে বুলেটপ্রুফ গাড়ি ব্যবহার করেন, এছাড়া ওই গাড়ির পেছনে পুলিশের একটা গাড়িও থাকে, যেখানে অস্ত্রহাতে কনস্টেবল থাকেন। বাড়ানো হয়েছে সালমানের বান্দ্রার গ্যালাক্সি অ্যাপার্টমেন্টের নিরাপত্তাও।এমনকি রিয়েলিটি শো ‘বিস বস’সহ সিনেমার শুটিংয়েও বিপুল পরিমাণ নিরাপত্তাকর্মীর ঘোরাটোপে কাজ করেন সালমান।
এসব নিয়ে সালমানের ভাষ্য, “কখনও কখনও অসুবিধা হয় এই এত লোকজনকে নিয়ে চলাফেরা করতে।”
১৯৯৮ সালে কৃষ্ণসার হরিণ শিকারে সালমানের নাম জড়িয়েছিল। এর ‘বদলা নিতে’ ২০১১ সালে ‘রেডি’ সিনেমার শুটিংয়ের মাঝে সালমান খানকে হত্যার হুমকি দিয়ে আলোচনায় এসেছিলেন লরেন্স বিষ্ণোই।
কারণ বিষ্ণোই সম্প্রদায়ের মানুষ কৃষ্ণসার বা চিংকার হরিণকে পবিত্র বলে মনে করে, বলতে গেলে তারা পূজা করে।
এরপর ২০১৮ সালে সালমানকে হত্যার জন্য বিষ্ণোই তার সহযোগী সম্পত নেহরাকে দায়িত্ব দেন। কিন্তু সে সময় অস্ত্রের জটিলতায় পরিকল্পনা মাফিক কাজ সারতে পারেনি খুনিরা।
ওই ঘটনার পর ২০২২ সালে সকালে হাঁটতে বেরিয়ে হুমকি চিঠি আসে সালমন খানের হাতে। ওই চিঠিতে সালমানের বাবা সেলিম খানকে মেরে ফেলার হুমকি ছিল।
এরপর ২০২৩ সালের মার্চের তৃতীয় সপ্তাহে পুরনো ‘শত্রু’ কানাডাভিত্তিক এক গ্যাংস্টার গোল্ডি ব্রারের কাছ থেকে ই-মেইলে খুনের ‘হুমকি’ আসে সালমানের কাছে।
গত বছরে শেষ নাগাদ সালমানকে হত্যায় বিষ্ণোইয়ের ছক বেরিয়ে আসে দিল্লি ও পাঞ্জাব পুলিশের তদন্তে। সে সময় ভারতের জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ) জানিয়েছিল, জেলবন্দি বিষ্ণোই যে ১০ জনকে ‘খতমের তালিকা’য় রেখেছে, তাদের মধ্যে প্রথমেই রয়েছে সালমনের নাম।
২০২৪ সালের ১৪ এপ্রিল রাতে সালমানের বান্দ্রার ওই বাসভবনের বাইরে কয়েক রাউন্ড গুলি ছুড়েছিল বাইকে আসা দুই ব্যক্তি। এই ঘটনায় লরেন্স বিষ্ণোই গ্যাংয়ের সদস্যদের বিরুদ্ধে হত্যার ষড়যন্ত্র ও অন্যান্য গুরুতর অপরাধের অভিযোগ আনা হয়।
অভিযোগপত্র অনুযায়ী, ২৫ লাখ রুপির বিনিময়ে বলিউডের ভাইজানকে হত্যার দায়িত্ব দিয়েছিল বিষ্ণোই গ্যাং। ২০২৩ সালের অগাস্ট থেকে ২০২৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত কয়েক মাস ধরে এই পরিকল্পনা করা হয়েছিল।
এর মধ্যে গেল বছর মুম্বাইয়ের শহরতলি বান্দ্রায় দশেরার বাজি ফোটানোর সময় তিনবারের বিধায়ক বাবা সিদ্দিকীকে গুলি করে হত্যা করা হলে সালমানের বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় আসে।
সালমানের সঙ্গে বাবা সিদ্দিকীর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। বাবা সিদ্দিকীকে হত্যার দায় স্বীকার করে বিষ্ণোই গ্যাং হুমকি দেয়, বাবা সিদ্দিকীর বন্ধুরাও যেন তৈরি থাকে।
কয়েক ডজন মামলা মাথায় নিয়ে লরেন্স বিষ্ণোই বর্তমানে গুজরাটের একটি কারাগারে বন্দি আছেন, তবে তার দল মুক্তিপণের জন্য ব্যবসায়ীদের ফোন কল দিয়ে সংবাদের শিরোনাম হয়েছে।
বিষ্ণোইয়ের ঘনিষ্ঠ সহযোগী রোহিত গোদারা এর আগে দাবি করেছিলেন, সালমান খানের যে কোনো বন্ধুই তাদের চোখে ‘শত্রু’ হিসেবে বিবেচিত।তবে কেবল হত্যার হুমকি নয় ‘শত্রুতার অবসান ঘটাতে’ সালমানের কাছে পাঁচ কোটি রুপি দাবি করেছিল বিষ্ণোইয়ের গ্যাং।
সালমানের 'সিকান্দারে' কাটছাঁট, বাদ গেল যা যা
এবার হুমকি নয়, সালমানের বাড়ির সামনে গুলি
৬০ নিরাপত্তাকর্মীর চক্রব্যূহ্যে সালমান
'বাঁচতে চাইলে ৫ কোটি দিন', ফের হুমকি সালমানকে
'প্রাণে বাঁচতে' সালমান কী বিষ্ণোইয়ের ক্ষমাপ্রার্থী হবেন?