উপনির্বাচনে জিতে মেয়র হলেও এক বছরও পদে থাকতে পারেননি আতিকুল ইসলাম, সময় ফুরিয়ে যাওয়ায় তার আগেই চলে আসে নতুন নির্বাচন।
Published : 02 Feb 2020, 01:56 AM
এবারের নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে আতিক তার নয় মাসের দায়িত্ব পালনকে ‘ওয়ার্মআপ’ অভিহিত করে বলেছিলেন, এবার ‘টেস্ট’ খেলতে চান তিনি। সেই ‘টেস্ট’ খেলতে ভোটে রায় পেয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আতিক।
শনিবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়রের চেয়ার আরও পাঁচ বছরের জন্য বসতে চলেছেন তিনি।
নৌকা প্রতীকে আতিক পেয়েছেন ৪ লাখ ৪৭ হাজার ২১১ ভোট, তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির তাবিথ আউয়াল ধানের শীষ প্রতীকে পেয়েছেন ২ লাখ ৬৪ হাজার ১৬১ ভোট।
ঢাকা উত্তরে মোট ভোটার ছিল ৩০ লাখ ১০ হাজার ২৭৩ জন। তার মধ্যে ভোট দিয়েছেন ২৫ দশমিক ৩০ শতাংশ।
আনিসুল হকের মৃত্যুতে গত বছর অনুষ্ঠিত মেয়র পদে উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে ৮ লাখ ৩৯ হাজার ৩০২ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন আতিক। বিএনপি সেই ভোট বর্জন করেছিল। ফলে আতিকের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জাতীয় পার্টির শাফিন আহমেদ ৫২ হাজার ভোট পেয়ে।
তার আগে ২০১৫ সালে অনুষ্ঠিত ঢাকা উত্তরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থিত প্রার্থী আনিসুল হক ৪ লাখ ৬০ হাজার ১১৭ ভোট পেয়ে জিতেছিলেন। তখনও বিএনপির প্রার্থী ছিলেন তাবিথ, তিনি আনিসের চেয়ে ১ লাখ ৩৫ হাজার ৩৭ ভোট কম পেয়েছিলেন।
সেবার ভোটগ্রহণের মাঝপথে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছিল বিএনপি; এবার ভোটগ্রহণ শেষে ফল প্রত্যাখ্যান করে ডেকেছে হরতাল।
ভোটকেন্দ্রে ভোটার খরার মধ্যে অনুষ্ঠিত শনিবারের নির্বাচনে আতিক তার প্রতিদ্বন্দ্বী তাবিথের চেয়ে ১ লাখ ৮৩ হাজার ৫০ ভোট বেশি পেয়েছেন।
তৈরি পোশাক ব্যবসায়ীদের নেতা ৫৯ বছর বয়সী আতিক এক বছর আগে হঠাৎ করেই রাজনীতিতে নেমে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী হন।
শৈশব, কৈশোর ও তারুণ্য ঢাকার কাটালেও আতিকের বাড়ি কুমিল্লার দাউদকান্দিতে। পুলিশ কর্মকর্তা বাবার কর্মস্থল নীলফামারীর সৈয়দপুরে ১৯৬১ সালের ১ জুলাই তার জন্ম।
মা মাজেদা খাতুন ও বাবা পুলিশ কর্মকর্তা প্রয়াত মমতাজউদ্দিন আহমেদের ১১ সন্তানের মধ্যে সবার ছোট আতিক। ঢাকার বিএএফ শাহীন স্কুল ও কলেজ থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করেন তিনি।
ব্যবসায়ী ও প্রকৌশলী বড় ভাই শফিকুল ইসলামের হাত ধরে ১৯৮৫ সালে ব্যবসা অঙ্গনে ঢোকেন আতিক, তার মধ্যেই স্নাতক ডিগ্রি নেন তিনি।
আতিকের মেজভাই মো. তাফাজ্জল ইসলাম বাংলাদেশের সাবেক প্রধান বিচারপতি। আরেক ভাই সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মইনুল ইসলাম বিডিআর বিদ্রোহের পর পুনর্গঠিত বিজিবির মহাপরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন।
তৈরি পোশাকের ১৬ ধরনের ব্যবসা নিয়ে তার ইসলাম গার্মেন্টেসের বর্তমান কর্মী সংখ্যা ২০ হাজারের মতো। ২০১৩-১৪ মেয়াদে বিজিএমইএর সভাপতি ছিলেন আতিক। ২০১৫ সালে আতিক বাংলাদেশ ভলিবল ফেডারেশনের সভাপতির দায়িত্ব নেন।
উত্তরার বাসিন্দাদের শরীরচর্চা, খেলাধুলা এবং আড্ডার কেন্দ্র হিসেবে আতিকের উদ্যোগে গড়ে উঠেছে ‘বাংলাদেশ ক্লাব’। তার উদ্যোগে ওই এলাকায় গঠিত হয়েছে ‘হাটি হাটি খাই খাই’ নামের একটি সংগঠন, যেটি শরীরচর্চার পাশাপাশি নানা ধরনের সামাজিক কর্মকাণ্ডেও যুক্ত।
এত সবে যুক্ত থাকার পর মেয়র হয়ে অল্প সময়ের জন্য দায়িত্ব পেয়ে যে কাজগুলো শুরু করেছিলেন, তা এগিয়ে নিতে এবার ভোটারদের সুদৃষ্টি চেয়েছিলেন আতিক।
ঢাকাকে ‘সুস্থ, সচল ও আধুনিক’ নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে মশা নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত ‘ভেক্টর ম্যানেজমেন্ট’, বায়ুদূষণ রোধে বিদ্যুতচালিত বাস নামানোসহ ৩৮টি প্রতিশ্রুতি দেন তার এবারের নির্বাচনী ইশতেহারে।
ভোটগ্রহণ শেষে ফল ঘোষণায় যখন আতিকের জয়ের আভাস মিলছিল, তখন সাংবাদিকদের সামনে এসে তিনি বলেন, “আমি নির্বাচিত হলে সবাই মিলে সবার ঢাকা গড়ে তুলব।
“বিএনপির প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের ইশতেহারে দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও বাস্তবায়নের চেষ্টা করব। আমার ওপর আস্থা রাখুন, সুস্থ সচল আধুনিক ঢাকা উপহার দেব।”
তার কিছু দিন আগে এক নির্বাচনী সভায় আতিক বলেছিলেন, “আপনাদের ভোটে নির্বাচিত হয়ে আমি গত নয় মাসে আমি যে কাজ করেছি সেই কাজ করতে করতে আরেকটি নির্বাচন চলে এসেছে।
“আমি মনে করি, যে এক্সপেরিয়েন্স অর্জন করেছি, সেটা ছিল আমার জন্য ওয়ার্মআপ। খেলার আগে অনুশীলন লাগে। নয় মাস আমি কঠিন অনুশীলন করেছি। সেই ওয়ার্মআপ আমি আগামী ৫ বছর কাজে লাগাব। আমি এখন ৫ বছরের টেস্ট খেলার জন্য প্রস্তুত।”