সংকটের সেই কালো মেঘ সরিয়ে ঝকঝকে নতুন প্রত্যাশার চাপ নিয়েই শুরু হচ্ছে নতুন বছর।
Published : 31 Dec 2023, 07:40 PM
চড়া বাজারের উত্তাপে পুড়ছে সীমিত আয়ের মানুষ; বছরজুড়েই ভোক্তারা যেমন ছিলেন দিশেহারা, তেমনি বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ প্রেক্ষাপটে সাধারণের ওপর নেমে আসা এ চাপ সামলাতে হিমশিম অর্থনীতিও সঠিক দিশা পায়নি।
যে কারণে আইএমএফের ঋণ পাওয়ার সুখবর দিয়ে শুরু হওয়া বিদায়ী বছরেও নানান উদ্যোগের পরও অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ফেরানোর চ্যালেঞ্জ বছর শেষে পুরোদমে উতরাতে পারেনি বাংলাদেশ। সংকটের সেই মেঘ সরিয়ে ঝকঝকে নতুন প্রত্যাশার চাপ নিয়েই শুরু হচ্ছে নতুন বছর।
মূল্যস্ফীতিকে সঙ্গী করে লড়তে থাকার মধ্যে নির্বাচনকেন্দ্রিক অস্থিরতাও অর্থনীতিকে চোখ রাঙিয়েছে নানাভাবে। বিনিয়োগে খরা, রপ্তানি আয় ও রেমিটেন্সে উথাল-পাতাল সময়ের মধ্যে ভিসা নীতির ভয় মাঝেমধ্যেই ব্যবসা-বাণিজ্যকে পিছু টেনে ধরেছে, যা অর্থনীতির গতিকে করেছে ধীর। এরমধ্যেই বিভিন্ন খাতে সংস্কারকে এগিয়ে নিয়ে পুনরুদ্ধারের পথে হাঁটার চেষ্টা ছিল সরকারের।
তবুও প্রায় দুই বছর ধরে চলা ডলার সংকটের ঝড় পুরোপুরি থামানো যায়নি। বছরের শেষ ভাগে আইএমএফের দ্বিতীয় কিস্তি ও বাজেট সহায়তার ঋণের অর্থছাড়ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পতনকে উন্নতির ধারায় নিতে পারেনি। জ্বালানির দাম কমে এলেও বাড়তে থাকা বিপুল দায় নিয়মিত সরবরাহ ব্যবস্থায় ঝাঁকুনি দিয়েছে প্রায়ই। ডলারের ঘাটতি আমদানি নির্ভর শিল্প ও সেবাখাতসহ সার্বিক অর্থনীতিতে অস্থিরতা জিইয়ে রেখেছে।
তবে নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা আর টালমাটাল সময় পেরিয়ে আসার ইঙ্গিত নতুন বছরে অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে আশার সঞ্চার করেছে। বছরজুড়ে উচ্চাভিলাশী জিডিপি প্রবৃদ্ধিকে পিছু টেনে ধরার আভাসের মধ্যেও আগের বছরের ধারাবাহিকতায় আরও কিছু নতুন নতুন মেগা প্রকল্পের দ্বার উন্মোচন সরকারকে শক্তি জুগিয়েছে এগিয়ে যাওয়ার।
পাশাপাশি জ্বালানি তেলের দাম পড়তে শুরু করায় মূল্যস্ফীতি কমতে থাকবে। এর সঙ্গে আর্থিক খাতে সংস্কারের অগ্রগতি পুরনো অস্থিরতাকে পেছনে ফেলে নতুন বছরে অর্থনীতির ক্ষত সারিয়ে তুলে প্রধান সূচকগুলোকে ভালো অবস্থানে নিয়ে যাবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
২০২৪ সালকে অর্থনীতির বাঁক বদল হওয়ার বছর হিসেবে দেখছেন তারা। তবে এর সুফল পেতে হলে আর্থিক নীতি কৌশলে আরও বদল চান তারা।
অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ জায়েদ বখত বলছেন, নির্বাচনের পরই সরকার দায়িত্বগ্রহণ করতে পারবে দ্রুত। তখন যেসব পদক্ষেপ ধীর গতিতে চলছে তার গতিও বাড়বে।
নতুন বছরে বাজারমুখী মুদ্রানীতি ডলার সংকটে সুফল বয়ে নিয়ে আসবে বলে মনে করছেন তিনি।
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ‘‘সরকার স্থিতিশীল হবে নির্বাচনের পরপরই। আমরা বিশ্বাস করি ডলারের দর ঠিক হলে রেমিটেন্স ও রপ্তানি আয় বাড়বে। প্রবাসীদের উৎসাহিত করতে পারলে সব আয় ব্যাংকেই আসবে। তখন বিদেশি বিনিয়োগ আসবে-আমাদের সংকট কেটে যাবে।’’
কেমন গেল ২০২৩
রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধের ঝড়ের প্রভাব কমে এলেও আগের বছরের মতো ২০২৩ সালও অর্থনীতির আলোচনার কেন্দ্রজুড়ে ছিল ডলারের যাতাকলে পিষ্ট হয়ে কমতে থাকা রিজার্ভ আর উচ্চ হারের মূল্যস্ফীতি। নিত্যপণ্যের বাজারের থলে অতিভারী ঠেকেছে সাধারণের কাছে। আটা, ডিম, আলু আর পেঁয়াজের দিনকে দিন দামি হয়ে ওঠা কোনঠাসা করেছে সীমিত আয়ের মানুষকে।
বাজারের রেখাচিত্রের ঊর্ধ্বগতির সঙ্গে অর্থনীতির সূচকগুলোর উথাল-পাতাল অবস্থাও স্বস্তি দেয়নি নীতি নির্ধারকদের।
বিনিময় হারে টাকার বিপরীতে ডলার শক্তিশালী হওয়া, ডলার সংকটে আমদানি করতে ঋণপত্র (এলসি) খোলা কমে যাওয়া, আর্থিক খাতের সংস্কার, জ্বালানিতে ভর্তুকি কমাতে দাম বাড়ানো, রপ্তানি বাড়ার ধারায় ধীরগতি এবং রপ্তানি আয়ের একটা অংশ দেশে না আসার মতো পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে। রাজস্ব আয়ের পরিমাণও আশানুরূপ না বাড়ায় এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বাস্তবায়নে ধীরগতি অর্থনীতিকে পিছু টেনে ধরেছে।
পাশাপাশি ব্যাংকিং খাতে অনিয়ম, খেলাপি ঋণ দেড় লাখ কোটি ছাড়িয়ে যাওয়া, মুদ্রানীতি সংস্কারে বছরের মাঝামাঝিতে নীতি সুদহার বাড়াতে শুরু করার পর কয়েক দফায় তা বাড়ানো এবং আইএমএফ এর ঋণ চুক্তি মোতাবেক আর্থিক খাতের সংস্কারের বিষয়গুলো ছিল দৃশ্যমান।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দেখানো পথে আর্থিক নীতি সংস্কারের মৌলিক কাজগুলো বছরের মাঝামাঝি জুলাইতে শুরু হলেও শেষের দিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নে ধীর গতি দেখা দেয়।
তবে অর্থনীতিবিদদের প্রত্যাশা বছরের শুরুতেই নির্বাচন শেষ হওয়ায় নতুন সরকার গঠন হলেই এতে গতি ফিরবে, যা অর্থনীতির উপর জমে থাকা কালো ছায়াকেও হটিয়ে দেবে।
রিজার্ভ নিয়ে এখনও মাথাব্যাথা
আমদানির খরচের চেয়ে রপ্তানি ও রেমিটেন্সের আয়ে প্রবৃদিধ কম হওয়ায় অর্থনীতির সবচেয়ে বড় মাথাব্যাথার কারণ এখনও রিজার্ভ। সংকট উৎরাতে না পারায় রিজার্ভ স্থিতি ক্রমাগত কমতে থাকে পুরো বছরজুড়েই। ২০২১ সালের অগাস্টে ৪৮ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলকে ওঠা রিজার্ভ বছরের শেষে আইএমএফের বিপিএম ৬ পদ্ধতিতে ২০ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমেছে।
রিজার্ভ ধরে রাখতে বিনিময় হার বাজারের উপর ছেড়ে দেওয়ার পর বছরটি শুরু হয় প্রতি ডলার ১০৩ টাকা ধরে। ব্যাংকিং চ্যানেলে বাফেদা-এবিবির ঠিক করা ডলারের দর সর্বোচ্চ দর ১১৩ টাকা ধরা হলেও বাস্তবে তা ১২৫-১২৮ টাকাতেও বিনিময় হয়। খোলাবাজারে তা ১২৩ টাকাতেও উঠেছিল। কড়াকড়িতে তা এখন সামান্য কমলেও সরবরাহ সংকট রয়েই গেছে।
ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় প্রধান সব সূচক
ব্যয় সাশ্রয়ী নীতির পাশাপাশি অর্থপাচার রোধে লাগাম টানার চেষ্টা অব্যাহত থাকায় ২০২৩ সালের শেষে আমদানি কমেছে ২০ শতাংশের বেশি, রপ্তানিতে বড়সড় ধাক্কার পর এখনও ইতিবাচক রয়েছে প্রবৃদ্ধি, যদিও তা মাত্র ১ শতাংশের ঘরে।
বিদেশি মুদ্রা আয়ের আরেক খাত রেমিটেন্সেও সময়টা ভালো কাটেনি। বছরের শেষ দিকে ঘুরে দাঁড়ানোর কারণে একক মাস নভেম্বরে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২১ শতাংশের বেশি। তবে অর্থবছরের পাঁচ মাসে প্রবৃদ্ধি হয়েছে শূন্য দশমিক ২৩ শতাংশ। যেখানে ২০২৩ সালের জুন মাসে অর্থবছর শেষ করেছিল দুই দশমিক ৭৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধিতে।
ব্যবসা-বাণিজ্য পুরনো ছন্দে না ফেরায় আর আমদানিতে ভাটার টানে রাজস্ব আহরণেও লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। নভেম্বর শেষে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ। অভ্যন্তরীণ আয় কমায় ব্যয়ের বোঝা মেটাতে সরকারকে তাই অন্য উৎসমুখী হতে হয়েছে।
এসব সূচকের মধ্যে মূল্যস্ফীতির চড়তে থাকা পারদ জনজীবনকে ভুগিয়েছে বেশি। ৬ শতাংশ নিয়ে বছর শুরু করা মূল্যস্ফীতি নভেম্বর শেষে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৪৯ শতাংশ। মাঝে অক্টোবরে তা ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ উঠেছিল, যা ছিল গত ১২ বছরের মধ্যে রেকর্ড।
বছরজুড়ে খবরের জন্ম দেওয়া ব্যাংক খাতে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯ মাস শেষে খেলাপি ঋণের হার প্রায় দুই অঙ্ক ছুঁই ছুঁই। এক লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণের বিপুল এ বোঝা বয়ে বেড়ানোর পাশাপাশি কয়েকটি ব্যাংকে তারল্য সংকট ও ঋণ কেলেঙ্কারি যেমন নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে তেমনি আমানতকারীদের মধ্যে আস্থার সংকটও তৈরি করেছে। সবশেষ ন্যাশনাল ব্যাংকের পর্ষদ পর্যন্ত ভেঙে দেওয়ার মতো সিদ্ধান্তও নিতে হয় বাংলাদেশ ব্যাংককে।
যেসব কারণে চাপে সামষ্টিক অর্থনীতি
বাংলাদেশের অর্থনীতির সামষ্টিক স্থিতিশীলতায় চাপ তৈরি হওয়ার ব্যাখ্যায় আইএমএফ বলছে, কোভিড-১৯ পরবর্তী বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে ইউক্রেইন-রাশিয়ার যুদ্ধ। এতে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতীশীলতা।
সেই সময়ে মূল্যস্ফীতি ঠেকাতে দেশে দেশে নীতি সুদহার বাড়ানোর রেশ এসে পড়ে বাংলাদেশের উপরও; স্বল্প মেয়াদী সামষ্টিক অর্থনীতির ব্যবস্থাপনা পড়ে চ্যালেঞ্জের মুখে। এ কারণে প্রকৃত জিডিপি (মোট দেশজ উৎপাদন) প্রবৃদ্ধি আগের ২০২২-২৩ অর্থবছরেও লক্ষ্যমাত্রা থেকে ছিল পিছিয়ে। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরেও তা সাড়ে ৭ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক আগেই থেমে যাবে বলে আইএমএফসহ অন্য উন্নয়ন সহযোগীদের পূর্বাভাস।
আইএমএফ এর সবশেষ রিভিউ মিশনের ডিসেম্বরে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সামষ্টিক অর্থনীতি চাপে থাকার আরেকটি কারণ হচ্ছে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নীতি দুর্বলতা। আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সংগতি রেখে ও নিজস্ব সক্ষমতা অনুযায়ী নীতি নির্ধারণি সিদ্ধান্তগুলো সময়োপযোগী ছিল না।
কী বলছেন অর্থনীতিবিদ-ব্যবসায়ীরা
অনিয়ন্ত্রিত মূল্যস্ফীতি, ডলারের ঘোষিত দর কার্যকর না হওয়া ও আর্থিক ভঙ্গুরতা দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির তিন ‘বিষ ফোঁড়া’ বলে মনে করছেন বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক লিড ইকোনোমিস্ট জাহিদ হোসেন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, ২০২৩ সালে বৈশ্বিক দুটি যুদ্ধ অর্থনীতিতে যে ধরনের প্রভাব ফেলবে আশঙ্কা করা হচ্ছিল তা হয়নি। বেড়ে যাওয়া জ্বালানি তেলের দামও কিছুটা কমছে। বর্তমান অবস্থা যদি আরও খারাপ না হয়ে আগামীতে একইভাবে চলে তাহলেও মূল্যস্ফীতি কমার সম্ভাবনা রয়েছে।
তার ভাষ্য, “বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো বলতে শুরু করেছে জ্বালানি তেলের দাম না বাড়লে নীতি সুদহার আর না বাড়িয়ে তা পুনর্বিবেচনা করা হবে। অর্থাৎ নীতি সুদহার কমিয়ে আনবে তারা।“
তবে সুদহার কমালেই খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমবে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, কারণ খাদ্য মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সুদহার খুব একটা জড়িত না। বাজার ব্যবস্থাপনা ও সিন্ডিকেটরা একেক সময়ে একেক পণ্যর দাম বাড়াচ্ছে; কখনও পেয়াঁজ-ডিম, কখনও সিম বা আলু কিংবা মরিচের।
এটি সরকারকে নিয়ন্ত্রণে আনার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, সামষ্টিক অর্থনীতির চাপ উত্তরণে বিনিময়হার বাজারমুখী করা ও বৈদেশিক মুদ্রার যোগান বাড়াতে হবে। নীতিনির্ধারকরা যে কৌশলে চলছেন তাতে বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহটা বাড়ছে না, সংকট রয়েই গেছে।
এমন প্রেক্ষাপটে এ ‘ব্যবস্থাপনার মডেল’ পাল্টানোর পরামর্শ দেন তিনি। তা না হলে, অর্থনীতি আরও খারাপের দিকে না গেলও ধীর হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা তার।
বৈশ্বিকভাবে মূল্যস্ফীতি কমে আসার প্রবণতা নতুন বছরে দেশের অর্থনীতিতেও প্রভাব ফেলবে বলে মনে করেন আরেক অর্থনীতিবিদ জায়েদ বখত।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, বিনিময়হার বাজারমুখী করার পদক্ষেপ চলছে। এটি করতে পারলে প্রথমদিকে হয়ত মূল্যস্ফীতির হার আরেকটু বেড়ে দুই শতাংশের ঘর পার হবে, কিন্তু তা সাময়িক। পরে দ্রুত সময়ের মধ্যে তা কমে আসবে।
বিনিময়হার বাজারমুখী হলে বৈদেশিক মুদ্রার উপর চাপও কমে আসবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, এটি রেমিটেন্স ও রপ্তানি আয় বাড়াতে ভূমিকা রাখবে।
তার মতো বিনিময় হার যৌক্তিক করে আগামী বছরে চাহিদা অনুযায়ী ব্যবসায়ীরা নির্বিঘ্নে ঋণপত্র খুলতে পারবে এমন প্রত্যাশার কথা জানান ব্যবসায়ী নেতা ঢাকা চেম্বারের সদ্য সাবেক সভাপতি সামীর সাত্তার।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “বৈদেশিক মুদ্রার যোগান বাড়ানোর উপায়গুলোতে জোর দিতে হবে। রেমিটেন্স ও রপ্তানি বাড়াতে আমাদের অর্থনৈতিক কূটনীতিতে আরও জোরালো ভূমিকা দরকার। রপ্তানির নতুন বাজার ও পণ্যের বৈচিত্র্যকরণ করতে হবে।“
বৈশ্বিকভাবে জ্বালানি তেল এবং দেশে সুদহার বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন খরচ বাড়ছে জানিয়ে তিনি জ্বালানি তেলের দাম কমলে যাতে তা সমন্বয় করা হয় সেই তাগিদ দেন।
বৈদেশিক মুদ্রার যোগান বাড়াতে খোলা বাজারের সঙ্গে ব্যাংকের ডলারের দরের ব্যবধান কমিয়ে আনার পরামর্শ দিয়ে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ডলারের দর ঠিক হলে রেমিটেন্স ও রপ্তানি আয় বাড়বে। প্রবাসীদের উৎসাহিত করতে পারলে সব আয় ব্যাংকেই আসবে। তখন বিদেশি বিনিয়োগ আসবে-আমাদের সংকট কেটে যাবে।’’
বিনিময়হার বাজারমুখী করার বিকল্প নেই বলে মনে করেন অভিজ্ঞ ব্যাংকার সৈয়দ মাহবুবুর রহমানও।
একই সঙ্গে ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (এবিবি) এর সাবেক চেয়ারম্যান ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এই ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পরামর্শ নির্বাচনের পর ব্যাংক খাতের তারল্য সংকট কাটানোর দিকে মনোযোগ দেওয়া।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনা ও বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ বাড়াতে আইএমএফের পরামর্শে ২০২৩ সালের অগাস্ট থেকে নতুন টাকা ছাপিয়ে ঋণ নেওয়া বন্ধ করে সরকার। এরপরও তারল্য সংকটে ভুগছে ব্যাংকিং খাত, যা ২০২৪ সালেও ব্যাংকগুলোকে ভোগাতে পারে বলে মনে করেন তিনি।
ব্যাংক ঋণে সরকারের ট্রেজারি বিল ও বন্ডের সুদহার ২০০ শতাংশীয় পয়েন্ট পর্যন্ত বেড়েছে উল্লেখ করে মাহবুবুর বলেন, “সরকারের ঋণ অব্যাহত থাকলে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবাহে কিছুটা হলেও আঘাত আসবে। খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারলে তারল্য সংকট তখন আরও বাড়বে।“